মুখ্যমন্ত্রীর সফর বাতিলের দায়ে স্থানীয় মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুর ব্যর্থতাকে কাঠগড়ায় তুলল পাথারকান্দি কংগ্রেস

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৮ জুন : বরাক উপত্যকায় বিধ্বংসী বন্যার দাপটে যখন বহু মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত, তখন সরকারের তৎপরতা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। কাছাড় ও শ্রীভূমি জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ালেও পাথারকান্দির মাটি যেন তাঁর কাছে ‘অচেনা’ থেকে গেল। রাজ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বারবার মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি থেকে বাদ পড়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা। শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে পাথারকান্দি কংগ্রেস মণ্ডলের সভাপতি তথা যুবনেতা প্রতাপ সিনহা পিলু এক বিস্ফোরক মন্তব্যে বলেন, বন্যার তাণ্ডবে যখন পাথারকান্দি কার্যত মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী কেবল কাছাড় ও শ্রীভূমিতে হাজির হচ্ছেন, অথচ পাথারকান্দিতে একবারও এলেন না। কেন? কারণ, এখানকার মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে দুর্নীতি, অবহেলা, ব্যর্থতা – সব ফাঁস করে দেবে। এটা শাসক শিবির চায় না। তিনি আরও বলেন, “এটা নিছক সফরসূচি পরিবর্তন নয়, এটা পরিকল্পিত রাজনৈতিক পাল্টা চাল। পাথারকান্দিতে মুখ্যমন্ত্রী এলে যে প্রশ্ন উঠবে, তার উত্তর দিতে পারবেন না অনেকেই।

প্রতাপ সিনহার অভিযোগ, গত রবিবার লঙ্গাই নদীর দু’টি স্থানে বাঁধ ভেঙে পাথারকান্দির একাধিক গ্রাম এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়। এই বন্যা গত পঞ্চাশ বছরের রেকর্ডকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। বসতভিটা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়, হাসপাতাল, স্কুল, বাজার সব জলের তলায়। অথচ বিধায়ক তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল তখন তাঁর দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নালিবাড়ি ও পইলামুলিতে! তিনি বলেন, আমরা বাঁধ ভাঙনের চার-পাঁচদিন আগেই এলাকার দুর্বল বাঁধগুলো সরেজমিনে ঘুরে রাজ্য সরকারকে অবগত করেছিলাম। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জরুরি সংস্কারের দাবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু তা আমলেই নেয়নি প্রশাসন। আজ তারই ভয়াবহ ফল ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে কড়া আক্রমণ করে প্রতাপ সিনহা দাবি করেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁর প্রথম কাজ হওয়া উচিত ছিল ভাঙনস্থলে দাঁড়িয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদার করা এবং মুখ্যমন্ত্রীকে অবিলম্বে পাথারকান্দিতে নিয়ে আসা। কিন্তু তিনি তা না করে দায়িত্বহীনভাবে শুধু ফটোসেশনে ব্যস্ত। এই ব্যর্থতা একেবারে ক্ষমাহীন।

তিনি অভিযোগ করেন, কৃষ্ণেন্দু পাল একজন ‘বহিরাগত’, যিনি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বোঝেন না। তিনি বলেন, আজ যদি এলাকারই কাউকে বিধায়ক করা হতো, তাহলে পাথারকান্দি এমন দুর্দশার মুখে পড়তো না। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ও জলসম্পদ মন্ত্রীর কাছে বেহাল বাঁধগুলোর দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, “যদি অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আগামী বছরগুলোতে পাথারকান্দিকে আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর সফর বাতিলের দায়ে স্থানীয় মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুর ব্যর্থতাকে কাঠগড়ায় তুলল পাথারকান্দি কংগ্রেস

Author

Spread the News