নিজস্ব সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে কোনও কিছুই মেনে নেওয়া উচিত নয়

নিজস্ব সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে কোনও কিছুই মেনে নেওয়া উচিত নয়

বরাক তরঙ্গ, ২৯ সেপ্টেম্বর, সোমবার,
দুর্গাপূজা আজ শুধু এক ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাঙালির প্রাণের উৎসব, আবেগের মিলনক্ষেত্র এবং সামাজিক–সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক। শরতের আকাশে সাদা কাশফুল, ঢাকের বাদ্যি আর প্রতিমার চোখে আঁকা প্রথম দৃষ্টি—এসব মিলেই দুর্গাপূজাকে ঘিরে সৃষ্টি হয় এক অনন্য অনুভূতির।

কিন্তু এর সঙ্গে যুক্ত আছে আরও গভীর তাৎপর্য। দেবী দুর্গা কেবল অশুভ শক্তির বিনাশিনী নন, তিনি শক্তি, ন্যায়, ঐক্য এবং নারীর জাগরণের প্রতীক। তাই দুর্গাপূজায় দেবী বন্দনার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে একাত্মতার বোধ জন্ম নেয়। গ্রাম থেকে শহর, ধনী থেকে গরিব—সবাই এই কয়েক দিনে মিলেমিশে যায় এক অপরূপ উৎসবধারায়।

অন্যদিকে, দুর্গাপূজা বাংলার অর্থনীতির জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ অক্ষ। মৃৎশিল্পী, কারিগর, আলোকসজ্জা শিল্পী থেকে শুরু করে পোশাক ব্যবসায়ী—সকলের জীবিকায় নতুন সঞ্জীবনী আনে এই উৎসব। শিল্প, সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের এমন সমন্বয় খুব কম দেখা যায়।

তবে উদ্বেগের জায়গাও আছে। অপচয়ী প্রতিযোগিতা, অযাচিত শব্দদূষণ বা পরিবেশদূষণ মাঝে মাঝে উৎসবের সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয়। তাই দুর্গাপূজার প্রকৃত তাৎপর্য ধরে রাখতে হলে আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। মণ্ডপে শিল্পচর্চা থাকুক, কিন্তু প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষাও যেন অবহেলিত না হয়।

পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জনে ডিজে মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শব্দ দানবের দৌরাত্ম্যে রোগী, শিশু, বৃদ্ধ লোকের যে কী কষ্ট হয়ে থাকে, তা ভুক্তভোগী মানুষ জানে। প্রতিমা নিরঞ্জন এবং পুজোর সময় যাতে ডিজে না-চলে, বেঁধে দেওয়া মাত্রা অনুযায়ী শব্দ ব্যবহারের শর্ত বেধে দিয়েছেন জেলা কমিশনার। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা মিঠুন নাথ প্রতিটি সভায় দেবী বিসর্জনে সনাতন সংস্কৃতি মেনে চলার আবেদন জানান। পশ্চিমী সংস্কৃতি বর্জনের আহ্বান জানান।  পুজো হোক, উৎসব হোক, আনন্দ হোক-তবে নিজস্ব সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে কোনও কিছুই মেনে নেওয়া যায় না, মেনে নেওয়া উচিত নয়।

Spread the News
error: Content is protected !!