গুরুচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিরঞ্জন রায়কে সংবর্ধনা নিবারণচন্দ্র লস্কর স্মৃতি রক্ষা কমিটির

বরাক তরঙ্গ ৭ আগস্ট : বৃহস্পতিবার গুরুচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিরঞ্জন রায়ের সঙ্গে দেখা করেন নিবারণচন্দ্র লস্কর স্মৃতি রক্ষা কমিটির এক প্রতিনিধি দল। উপাচার্যকে উত্তরীয় ও পুষ্পস্তবক দিয়ে সংবর্ধিত করে তাঁর হাতে ‘নিবারণ চন্দ্র লস্কর স্মৃতি গ্রন্থ’ এর কয়েকটি কপি তুলে দেন পিএইচই বিভাগের প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার তথা নিবারণ চন্দ্র লস্কর স্মৃতি রক্ষা কমিটির মুখ্য পৃষ্ঠপোষক নিখিলচন্দ্র লস্কর। পরে উপাচার্যের সঙ্গে মত বিনিময়ে গুরুচরণ কলেজ প্রতিষ্ঠার স্মৃতি রোমন্থন করেন তিনি। শহরের রংপুর এলাকায় ‘শিলচর কলেজ ‘ নামে গোড়াপত্তন হওয়া গুরুচরণ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ছিলেন নিবারণচন্দ্র লস্কর। সেই স্মৃতি বিজড়িত এই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজকের দিনে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে। এর উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করে নিবারণ চন্দ্র লস্করের স্মৃতি রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক পদক্ষেপ কামনা করেন নিখিল চন্দ্র লস্কর।

আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবারণ চন্দ্র লস্করের জন্ম বা প্রয়াণ বার্ষিকী পালনের মাধ্যমে  তাঁর আদর্শ ও অবদান নব প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে স্মৃতি রক্ষা কমিটি। এপ্রসঙ্গেই নিবারণ চন্দ্র লস্করের জীবনাদর্শ নিয়ে আলোকপাত করেন স্মৃতি রক্ষা কমিটির সদস্য রবীন্দ্র চন্দ্র দাস। তিনি উল্লেখ করেন শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী নিবারণ চন্দ্র লস্কর ছিলেন ভারতের সংবিধান খসড়া কমিটির সদস্য। আজকের প্রজন্ম জানেই না সেকথা। মূলত শিক্ষা জগতে, জাতীয় রাজনীতিতে, মাতৃভাষা ভাষা আন্দোলনে, দেশভাগে উদ্বাস্তু মানুষের পুনর্বাসনে নিবারণ চন্দ্র লস্কর যে অবদান রেখে গেছেন,এর প্রচার- প্রসার তেমন হয়নি। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় সাংসদ পদে ইস্তফা দিতেও দ্বিধা করেননি প্রয়াত নিবারণ চন্দ্র লস্কর। পরাধীন ভারতবর্ষে গোপীনাথ বরদলৈ মন্ত্রী সভার ত্রাণ ও পূনর্বাসন মন্ত্রী ছিলেন। গুরুচরণ কলেজ, লালা রুরাল কলেজ সহ বরাক উপত্যকার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা লগ্ন থেকে যুক্ত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেন গেছেন নিবারণ চন্দ্র লস্কর। অবিভক্ত কাছাড় জেলা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে বাংলায় দ্বিতীয় বিভাগে প্রথম এবং  সংস্কৃততে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী নিবারণচন্দ্র লস্করের জীবনের পথচলা মোটেই সহজ ছিল না। অবিভক্ত কাছাড় জেলার ফুলবাড়ি গ্রাম থেকে স্কুল জীবন শুরু হয়।

হাইলাকান্দি সরকারি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল স্কুল থেকে প্রবেশিকায় সবকটি বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে শ্রীহট্ট অধুনা সিলেট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। তখনকার দিনে যোগাযোগ ব্যবস্থার সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেও জীবনের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন নিবারণ চন্দ্র লস্কর। কলেজে অধ্যাপনা কালেই প্রয়াত অরুণ কুমার চন্দের সান্নিধ্যে এসে রাজনীতিতে যোগদান করেন। প্রথমে  রাজ্যের মন্ত্রী এবং পরবর্তীতে কাছাড়- লুসাই লোকসভা কেন্দ্র থেকে একাধিকবার সাংসদ নির্বাচিত হন। তাঁর সুযোগ্য পুত্র প্রয়াত নীহার রঞ্জন লস্কর ও ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং আরেক কন্যা রানি লস্কর গুরুচরণ কলেজে অধ্যাক্ষের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এসব বিষয়ে আলোকপাত করে নবগঠিত গুরুচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবারণ চন্দ্র লস্করের স্মৃতি রক্ষায় উপাচার্যের ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন রবীন্দ্র চন্দ্র দাস। এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাসও দেন উপাচার্য ড. নিরঞ্জন রায়। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক নিরঞ্জন দত্ত। তিনিও গুরুচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবারণচন্দ্র লস্করের অপরিসীম অবদান  নব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ছিলেন নিবারণচন্দ্র লস্কর স্মৃতি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক নন্দিত কুমার দাস ও সদস্য তথা সাংবাদিক অমল লস্কর।

Spread the News
error: Content is protected !!