সমাজ থেকে ধর্ষণের ব্যাধি দূর করতে হলে মূল্যবোধের শিক্ষা নিতে হবে : নন্দী পুরকায়স্থ
এ বি লস্কর, লালা।
বরাক তরঙ্গ, ২২ সেপ্টেম্বর : ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি,যা বর্তমান ভারতবর্ষের একটি জলন্ত সমস্যা। মহিলারা প্রতিদিন নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। ঘরে হউক কিংবা বাইরে আজকের দিনে মহিলারা নিরাপদ নয়। তারা সর্বদা লাঞ্চনার শিকার। “শিক্ষা ও সচেতনতার মাধ্যমে নারীর উপর ধর্ষণ প্রতিরোধ” আলোচনা সভায় এই কথাগুলি তুলে ধরেন শিলচর মেডিকেল কলেজের অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডাঃ এস কে নন্দী পুরকায়স্থ। তিনি বলেন, এই ধর্ষণ নামক সামাজিক ব্যাধিকে দূর করতে হলে প্রতিজন নাগরিককে মূল্যবোধের শিক্ষা নিতে হবে। কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ডাঃ মৌমিতা দেবনাথকে যে ভাবে ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের মতো জঘন্যতম অপরাধ করা হয়েছে তা বর্বোরোচিত ঘটনা ছাড়া আর কিছু নয়।
আল-মারকাজুল মিল্লি ফাউন্ডেশনে “শিক্ষা ও সচেতনতার মাধ্যমে নারীর উপর ধর্ষণ প্রতিরোধে” আলোচনা সভা
রবিবার সাহাবাদের আল-মারকাজুল মিল্লি ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত ধর্ষণ প্রতিরোধ আলোচনা সভায় বরাক উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, আইনজীবী, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক ব্যাতিক্রমী আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। মারকাজুল মিল্লি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাওলানা হুসাইন আহমেদ বড়ভূইয়ার পৌরহিত্যে অনুষ্টিত সেমিনারে এসকে রায় কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ দীপক কান্তি আইচ বলেন, সমাজের সব থেকে ন্যাক্কারজনক ঘটনা হচ্ছে ধর্ষণ। এরপরও একজন ধর্ষিতা বিচার পেতে গিয়ে মৃত্যু হয়ে যায়। তবুও বিচার পায় না। তাই এ ব্যাপারে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধের দোষীকে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করা হউক। পাশাপাশি ধর্ষণ আইনের সংশোধন করা হউক। হাইলাকান্দি বার এসোসিয়েসনের বরিষ্ট আইনজীবী কমরুল চৌধুরী তার সারগর্ভ আলোচনায় আইনের দিক নিয়ে মন্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে চালু হওয়া ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এবং পস্কো আইন বিচার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে। যে ভাবে মহিলারা বিভিন্ন ভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন, ঠিক সেই ভাবে মহিলা দ্বারা পুরুষদেরকে হেনস্তা করা হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে উপযুক্ত বিচার পেতে হলে ধর্ষিতা বা পীড়িতার বয়ান নিতে হবে সঠিক ভাবে। মেডিকেল রিপোর্ট এবং পুলিশি তদন্তের রিপোর্ট অনেক সময় সবকিছু পালটে দেয় যার ফলে দোষীরাও মুক্তি পেয়ে যায়,সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে । সবলের জন্য বিচার ব্যবস্থা দূর্বলের জন্য নয়, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সমাজে যদি প্রতিজন নাগরিক তার নৈতিক দায়িত্ব পালন করে নেন তাহলে দুর্বলরা শোষিত হবে না।
হাইলাকান্দির অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত রক্তিম বরুয়া বলেন, এরকম সচেতনতা সভা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ষণের মতো জঘন্যতম ব্যাধিকে দূর করতে হলে স্কুল কলেজের পাশাপাশি গ্রামেগঞ্জেও এরকম সচেতনতা সভার আয়োজন করতে হবে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের তরফে সর্বদা এরকম সচেতনতা সভা আয়োজন করা হয়ে থাকে। এস কে রায় বিএড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা গৌতমী চক্রবর্তী বলেন, আমরা মানব জাতির শ্রেষ্ঠ জীব হয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধ দূর করতে সচেতনতা সভা করছি তা খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার। ধর্ষণ নামক ব্যাধি কোন ধর্মীয় বিষয় নয়, এটা হলো অমানুষিক ব্যাধি।এই ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথমে প্রতিজন মা-কে সচেতন হতে হবে। প্রতিটি বাচ্চাকে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে ঘরের মধ্যে। ভয় এড়িয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধ নিয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি স্কুলের পাঠ্যক্রমে যৌনশিক্ষা যোগ করা খুবই জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। হাইলাকান্দি এস এস কলেজের অধ্যক্ষ হিলাল উদ্দিন লস্কর আজকের সচেতনতা সভার মডারেটর হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন, তিনি তার আলোচনায় বলেন, ধর্ষণ একটি সামাজিক অপরাধ সেই মূল্যবোধ যেখানে রয়েছে সেখানে এ ধরণের অপরাধের সংখ্যা কম। ভারতবর্ষে প্রতি বছর ৩১ হাজার ধর্ষণের মামলা নথিভূক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, পুলিশ প্রশাসন, শিক্ষাবিদরাও এসব অপকর্মে জড়িত হচ্ছেন। তিনি বলেন,সমাজ যাদের কাছ থেকে কিছু পেতে চায় তারাই যদি এমন কাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ে তাহলে কি শিক্ষা নেবে আমাদের নব প্রজন্ম। বর্তমান সময়ে চরিত্র গঠনে মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা খুবই জরুরী বলে অভিমত তুলে ধরেন। এদিনের সচেতনতা সভায় সব বক্তা আর জি কর কান্ডের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানান।
“শিক্ষা ও সচেতনতার মাধ্যমে নারীর উপর ধর্ষণ প্রতিরোধ” আলোচনায় অংশ গ্রহণ করে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জামিরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুফিয়ান সিদ্দিকী বড়ভূইয়া, ঘাড়মুড়া কালীবাড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, এস কে রায় সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের প্রবক্তা দিব্যেন্দু গোস্বামী, সহযোগী মডারেটর হিসাবে ছিলেন জামিরা হাইস্কুল বি এর প্রধান শিক্ষক হিফজুর রাহমান লস্কর, শিলচর মেডিকেল কলেজের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডাঃ ভাস্কর দেবনাথ, শিলচর মেডিক্যাল কলেজের অফিসার ডাঃ লায়লা বানু বড়ভূইয়া, ডাঃ রত্নদীপ বোস, ডাঃ অমলেন্দু দাস, ডাঃ সুব্রত ভট্টাচার্য কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালের ফাউন্ডার কল্যাণ চক্রবর্তী প্রমুখ। এদিনের সভা পরিচালনা করেন শিক্ষক জাহিদ ইসলাম বড়ভূইয়া ও ফাউন্ডেশনের সম্পাদক বদরুল ইসলাম লস্কর।