মণিপুরের সমস্যা কাছাড়ের কাঁধে ঢেলে দেওয়া, অশনি সংকেত

।। প্রদীপ দত্তরায় ।। 
(আকসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী)
২১ নভেম্বর : উত্তরপূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য যাকে সেভেন সিস্টার বলা হয় এক সময় এটা একই রাজ্য ছিল। অসম নামের এই রাজ্য থেকে পরবর্তীকালে একে একে সবগুলো রাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে। একটি জাতির আধিপত্যবাদ এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মনে গজিয়ে ওঠা অধিকারের চেতনা বিভাজনের রূপরেখা তৈরি করে। ফলে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রশ্নে প্রথমে কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল এবং পরে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের রূপ পায় অরুনাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মণিপুর, মেঘালয় ও ত্রিপুরা। অসম থেকে বেরিয়ে পৃথক ছটি রাজ্য গঠিত হলো প্রতিটি রাজ্যেই রয়েছে একাধিক জনগোষ্ঠীর বাস। স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে রয়েছে সংঘাতের পরিবেশ। বৈষম্যহীন সরকার পরিচালনা করার কঠিন বাস্তবতার মুখে এই রাজ্যগুলি নানাবিধ সমস্যায় ভুগছে। তবে অপেক্ষাকৃত সমস্যা কম মিজোরামে। এই রাজ্যের মানুষ শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার দরুন এ রাজ্যে ক্ষুদ্র জনজাতিগোষ্ঠীগুলির সঙ্গে একটা সমঝোতার পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে এই রাজ্যে জনগোষ্ঠীগত সংঘাত অনেকটাই কম। মেঘালয় রাজ্যে জনজাতি গোষ্ঠী গুলির মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত নেই বললেই চলে তবে এই রাজ্যে মাঝে মাঝেই ও অজনজাতিগোষ্ঠীর উপর স্থানীয় জনজাতি গোষ্ঠী আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এটাই একটা সমস্যা এবং অন্য রাজ্যের মানুষ পর্যটনে গেলে কোন সমস্যা নেই তবে পর্যটকদের নিয়ে যেতে বাইরের গাড়িগুলো গেলে স্থানীয়রা ঝামেলার সৃষ্টি করে। অরুণাচল প্রদেশ বা নাগাল্যান্ডে ইনার লাইন পারমিট ব্যবস্থা বহাল থাকায় ঐ রাজ্যে বাইরের মানুষ খুব কম সংখ্যায় প্রবেশ করতে পারেন। নাগাল্যান্ডে নাগা জনগোষ্ঠী অনেকগুলো উপ শাখায় বিভাজিত এবং একটি জনজাতিগোষ্ঠী অন্য নাগা জনজাতিগোষ্ঠীর ভাষা বুঝতে পারে না। তাদের মধ্যে বিনিময়ের ভাষা হচ্ছে নাগামিজ। এই নাগামিজ ভাষাটা হল নাগা উচ্চারণ বিধিতে অসমীয়া ভাষা। তবে নাগাদের বিভিন্ন উপ জনজাতি রয়েছে। এই জনগোষ্ঠীগুলি বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হলেও তাদের একটি সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংগঠন রয়েছে যা সবগুলি জনগোষ্ঠীর মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম। কোন ধরনের পারস্পরিক সংঘাত দেখা দিলে এই ধর্মীয় সংগঠনই ময়দানে নেমে বিষয়টির সুরাহা করে। মণিপুরে জনগোষ্ঠী গত সংঘাতের পরিবেশ দীর্ঘদিন যাবত রচিত হয়েছে। মণিপুরীদের সঙ্গে কুকি, নাগা ও মার জনগোষ্ঠীর যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে এর গভীরে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়টি আমি পড়ে আলোচনায় আনছি।

জনজাতিদের অধিকার দেওয়ার জন্য পৃথক রাজ্য গঠন করা হলেও উত্তরপূর্বাঞ্চলের প্রতিটি রাজ্যে গজিয়ে ওঠে অসংখ্য জঙ্গি সংগঠন। মিজোরামের লালডেঙ্গার নেতৃত্বাধীন জঙ্গি সংগঠন পৃথক রাষ্ট্রের জন্য তাদের সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় লালডেঙ্গার সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন এরপর লালডেঙ্গার দল এমএমএফ ভোটের রাজনীতিতে যোগ দেয়। মিজোরামে ফিরে আসে স্বাভাবিক অবস্থা। কিন্তু নাগাল্যান্ডের জঙ্গি সংগঠন এনএসসিএন (আইএম ) এবং এনএসপসীএন (কে ) এ দুটি এখনো যথেষ্ট সক্রিয়। এই দুই জঙ্গি সংগঠনের কার্যকলাপ কেবল নাগাল্যান্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের কার্যকলাপ মনিপুর  অসমের  ডিমা হাসাও জেলা এবং অরুণাচলের কিছু অংশ বিস্তৃত। কখনো কখনোই জঙ্গি সংগঠন উজান আসামে কয়েকটি জেলায়ও সীমান্তবর্তী স্থানে  প্রবেশ করে তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে থাকে। এনএসসিএন এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হলেও তারা পৃথক পতাকার দাবিতে অনড় রয়েছে। তবে কেন্দ্রের সঙ্গে এই জঙ্গি সংগঠনের আলোচনার প্রক্রিয়া এখনো জারি রয়েছে। মনিপুরে দীর্ঘদিন যাবতই সক্রিয় রয়েছে পিএলএ, প্রিপাক, ইউএনএলএফ ইত্যাদি সংগঠন। পিপলস লিবারেশন আর্মি নামের জঙ্গি সংগঠন ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘকাল যাবত ছায়া যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। সুযোগ পেলেই তারা নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা চালায়।

হঠাৎ করে মণিপুর রাজ্যটি কেন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর শিকড় অনেক গভীরে। মণিপুরের সমতল এলাকায় মৈতৈ জনগোষ্ঠীর বসবাস এবং পার্বত্য এলাকাগুলিতে নাগা এবং কুকি জনগোষ্ঠীর বসবাস। মণিপুর হাইকোর্ট রাজ্যের মৈতৈ জনগোষ্ঠীকে জনজাতির মর্যাদা প্রদানের রায় দিয়েছিল। ওই রায়কে কেন্দ্র করে প্রথমে কুকিদের সঙ্গে মৈতৈ সম্প্রদায়ের সংঘাত বাঁধে। কারণ মৈতৈ জনগোষ্ঠীর জনজাতির স্বীকৃতি পেলে পার্বত্য অঞ্চলে তারাও জমি কেনাবেচার অধিকার লাভ করবে এতে শঙ্কিত হয়ে পড়ে কুকি জনগোষ্ঠীর মানুষ। তারা প্রকাশ্যে আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে পড়ে। পরবর্তীকালে আদালতের এই রায় স্থগিত করে দেওয়া হয়। তাছাড়া অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার জন্য কুকি জনগোষ্ঠীর একাংশ মানুষ পার্বত্য এলাকায় আফিম চাষের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই আফিম ক্ষেত উচ্ছেদ করাকে কেন্দ্র করে সংঘাতের পরিবেশে ঘৃতাহুতি পড়ে। পরিস্থিতি তখনই খারাপের দিকে মন নেই যখন ২ কুকি মহিলাকে বিবস্ত্র করে মৈতৈ দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্য রাস্তায় হাঁটিয়ে নিয়ে যায়। এই ঘটনা শুধু কুকি জনগোষ্ঠী নয় প্রতিবেশীর রাজ্য মিজোরাম এবং অন্যান্য রাজ্যের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এই ঘটনার পর হিংসার পরিবেশ রচিত হয়। মৈতৈদের বিরুদ্ধেও তখন কুকি জনগোষ্ঠীর উগ্রপন্থীরা আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে। গোটা রাজ্যজড়ে দেখা দেয় অশান্তির পরিবেশ, খানিকটা অরাজকতা। এই পরিস্থিতিতে মণিপুর সফরে আসেননি বলে বহু মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা মুখর হন। এ ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আদালত যখন নিজস্ব ভাবে মামলা গ্রহণ করে এরপর প্রধানমন্ত্রী সংসদে বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার নিন্দা জানান এবং মণিপুরের পরিস্থিতি দমনে কেন্দ্র যথাসাধ্য চেষ্টা করছে তাও জানান। এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব এনআইএর হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্র আন্তরিকভাবে শান্তিস্থাপনের চেষ্টা চালালেও ওখানে নিরাপত্তা রক্ষীদের দিয়ে দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এখানে কোনও জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রের শত্রু নয়। উভয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান উগ্রপন্থীরা এইসব বিভাজনের খেলায় মেতে ওঠে নিরীহ মানুষকে নির্যাতন করতে শুরু করে। মৈতৈ এবং কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে সংঘাতের পরিবেশ রচিত হয় তাতে রাজ্যের নাগা জনগোষ্ঠীর মানুষ প্রথমদিকে নীরব দর্শক হয়ে ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে খুনাখুনি, অগ্নিসংযোগ, আন্দোলন, বনধ ইত্যাদির ফলে নাগার জনগোষ্ঠীর মানুষও অসুবিধায় পড়ে এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। বিষয়টা তখন থেকে আরও জটিল হয়ে পড়ে। নাগা জনগোষ্ঠীর মানুষ অবশ্য হাতে অস্ত্র নিয়ে কোন পক্ষের বিপক্ষে ময়দানে নামেনি তারা গণতান্ত্রিক উপায়ে এই সংঘাতের বিরুদ্ধে মতামত তুলে ধরে রাজ্যে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানায়।

আপাতদৃষ্টিতে দু’টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনজাতিকরন এবং আফিম চাষকে কেন্দ্র করে সংঘাতের পরিবেশ রচিত হয় মনে করা হলেও এর পেছনে কিন্তু অন্য রহস্য রয়েছে। উত্তরপূর্বাঞ্চলকে অশান্ত করে তুলতে বিদেশি শক্তির যে মদত রয়েছে সেটা গোয়েন্দা সূত্রে ভারত আগে থেকেই জানতে পেরেছে। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও কঠোর করে তোলা হয়েছে। বিদেশি শক্তি গুলি অস্ত্র এবং অর্থ দিয়ে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকে সক্রিয় করে রেখেছে। এ অঞ্চলকে অশান্ত করে রাখলে তাদের বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা রুপায়ন করা সহজ। যারা বিদেশি শক্তির ক্রীড়ানক হয়ে কাজ করছে ওই জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষ কিন্তু বিষয়টা সেভাবে এখনো দেখছে না। কেউ কেউ তাদের জাতি রক্ষার কথা বলে বিভ্রান্ত করছে। উস্কানি দেওয়া হচ্ছে অন্যান্য কিছু মহল থেকে। দেখা গেল নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করার পর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ১০জন কুকি জঙ্গি নিহত হয়। জিরিবাম এর কাছে এই ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় মরদেহ গুলি ময়নাতদন্তের জন্য নিকটবর্তী শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কারণ, ইম্ফলে নিয়ে যেতে গেলে অনেক ঝামেলা, রাস্তাটিও যথেষ্ট বিপদসংকুল। শিলচরে মরদেহের ময়নাতদন্তের পর দেহগুলি নিতে এসে কুকি জনগোষ্ঠীর মানুষ সেখানে  যে সহিংসতার পরিচয় দিয়েছে তা শুভলক্ষণ নয়। বিষয়টিকে অন্যভাবেই দেখা প্রয়োজন। নিরাপত্তার রক্ষীদের এই অভিযানের পর কুকি জঙ্গিরা ছয় জন মহিলা এবং শিশুকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নদী তীর থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এর আগে ধানক্ষেতে কর্মরত এক মৈতৈ মহিলাকে জঙ্গিরা গুলি করে হত্যা করেছে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে মণিপুর রাজ্যে মন্ত্রী- বিধায়কদের বাড়ি ঘেরাও করা হচ্ছে, থানার সামনে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে, কোনও কোনও জননেতার বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ। নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তি বাড়ানো সত্ত্বেও ওই রাজ্যে সংঘর্ষের বাতাবরণ আরো গভীর হয়ে পড়েছে।

জঙ্গিরা সক্রিয় থাকার জন্যই মণিপুরকে সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় আনা হয়েছিল। সংক্ষেপে আফস্পা নামের এই আইনের মাধ্যমে সেনার হাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে অভিযান চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার হুট করে সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) প্রত্যাহার করে নেয়।  আজ যে মণিপুরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এই  আইন প্রত্যাহারের ফল এটা। একটি কথা মনে রাখতে হবে, আফস্পা আইনের জোরে সেনাবাহিনী শুধু মৈতৈ এলাকায় অভিযান চালায়নি, সমানভাবে অভিযান চালিয়েছে নাগা ও কুকি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতেও।  মণিপুরে সাম্প্রতিক যে সংঘাতের পরিবেশ রচিত হয়েছে এবং জঙ্গিদের হাতে নিরীহ মানুষ মারা পড়ছে এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে এই আফস্পা আইনটি আবার রাজ্যের সাতটি জেলায় বলবৎ করা হয়েছে।

এদিকে, মৈতৈ মণিপুরীদের দুটি সংগঠন মণিপুরের ঘটনা নিয়ে কাছাড় জেলায় আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছে। এই হুমকিকে যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয় না। কারণ কাছাড় জেলা বা বরাক উপত্যকা শান্তির দ্বীপ। এখানে বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চল হলেও এখানে মণিপুরী, নাগা, কুকি, ডিমাসা, চা জনগোষ্ঠীর মানুষ সহ অন্যান্য জনগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণভাবেই  সহাবস্থান করছে। মণিপুরের সমস্যা নিয়ে যদি প্রতিবাদ করতে হয় তাহলে কেন্দ্রের দৃষ্টিগোচর করার জন্য দিল্লিতে গিয়ে ধরনা দেওয়া, অবস্থান ধর্মঘট করা ইত্যাদির প্রয়োজন। কিন্তু তা না করে মণিপুরের সমস্যা কাছাড়ের কাঁধে ঢেলে দেওয়া কখনই মেনে নেওয়া যেতে পারে না। এই ধরনের প্রবণতা কাছাড়ের জন্য অশনি সংকেত বলেই মনে হচ্ছে। তবে প্রতিবেশীর বাড়িতে আগুন লাগলে এর উত্তাপ নিজের বাড়িতে এসে লাগে। কাজে মণিপুরের আন্দোলনের প্রভাব কাছাড়ে এসে পড়েছে। এটা দেখতেই পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে একটা অশান্তির বাতাবরণ গড়ে ওঠার আশঙ্কাকে অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এ অঞ্চলের মানুষ সর্ব অবস্থায় শান্তি বজায় রাখার পক্ষে। এর উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যখন বাবরি মসজিদ পতন হয় তখন সারাদেশে দাঙ্গা বাঁধলেও বরাক উপত্যকার মানুষ সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। এ নিয়ে কোন ধরনের দাঙ্গা বাঁধেনি। এখন মণিপুরের ঘটনা নিয়ে যদি এখানে আন্দোলন শুরু হয় তাহলে এ অঞ্চলে বসবাসকারী কুকি- জো জনগোষ্ঠীর লোকের সঙ্গে মণিপুরীদের সংঘাতের পরিবেশ রচিত হতে পারে, যা এই অঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। এটা কখনোই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

প্রতিবেশী মণিপুর রাজ্যে বসবাসকারী প্রতিটি জনজাতি জনগোষ্ঠীর মৈতৈদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অধিকার রয়েছে সেজন্য প্রতিটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমন্বয়ের পরিবেশ রচনা করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে উদ্যোগ নিতে হবে। দূর থেকে কেবলমাত্র সরকারকে দোষারোপ করে সংঘাতের আগুনে ঘৃতাহুতি দিলে চলবে না। তবে এই সংঘাতের পরিবেশে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকার দায়বদ্ধ। তবে ওই রাজ্যের মানুষ যদি নিরাপত্তারক্ষীদের সহযোগিতা না করেন তাহলে শান্তি ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন কাজ। প্রতিটি মানুষের পিছনে একজন করে নিরাপত্তা রক্ষিত নিয়োগ করা সম্ভব নয়। এটা ওই রাজ্যের বাসিন্দাদের মাথায় রাখতে হবে। মাত্র ৩৬ লক্ষ মানুষের রাজ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। এরপরও যদি ওই রাজ্য অশান্ত থাকে তাহলে বিষয়টাকে ভাবতে হবে অন্যভাবে এবং মণিপুরের সীমান্ত উন্মুক্ত না দেখে সেখানে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। কারণ ভিনদেশ থেকে এসেও কিছু কিছু নাশকতাবাদী শক্তি এই সংঘাতের পরিবেশে উস্কানি দিচ্ছে এবং সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে এটা জানা গেছে। মণিপুর শান্ত হয়ে গেলে বরাক উপত্যকা অযথা সামাজিক সংঘাত সৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাবে। বরাক উপত্যকার সিংহভাগ মানুষ এ অঞ্চলকে শান্তির অঞ্চলে হিসেবে দেখতেই পছন্দ করে। এর জন্য একটা সামাজিক সহমত সব সময়ই রয়েছে।

Author

Spread the News