বাংলায় ১০০ নম্বর প্রাপ্ত মণিপুরি ছাত্রী শর্মিলাকে সংবর্ধনা আমসু ও বিকশাপের

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৪ মে : যেখানে ইচ্ছা, সেখানে পথ — এই প্রবাদকে বাস্তবে রূপ দিলেন মণিপুরি সম্প্রদায়ের এক মেধাবী কন্যা। পাথারকান্দির মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক সাধারণ ঘরের মেয়ে হয়ে অসাধারণ কীর্তি গড়েছেন শর্মিলা সিনহা। মাধ্যমিকে বাংলা বিষয়ে ১০০-তে ১০০ নম্বর পেয়ে রাজ্যে নজির স্থাপন করেছেন তিনি। কোনও প্রাইভেট টিউশন নয়, ছিল শুধু অদম্য ইচ্ছাশক্তি, কঠোর অধ্যবসায় আর মা-বাবার নিরন্তর সাহচর্য। আজ রাজ্য জুড়ে যাঁর নাম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তিনি শর্মিলা, তার এই কৃতিত্বে রৌপ্য কলম সহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে সংবর্ধনা প্রদান করলো আমসু ও বিকশাপ। এবারের  মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে অসাধারণ এক সাফল্যের সাক্ষী থাকলো পাথারকান্দি তথা সমগ্র শ্রীভূমি জেলা। মণিপুরি সম্প্রদায়ের কন্যা, নারাইনপুর গ্রামের শর্মিলা সিনহা ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে ১০০-তে ১০০ নম্বর অর্জন করে রাজ্যে নজির সৃষ্টি করেছেন। শুধু তাই নয়, কোনওরকম প্রাইভেট টিউশন ছাড়াই তিনি এই সাফল্য অর্জন করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, অধ্যবসায় ও নিষ্ঠা থাকলে অসম্ভব কিছুই নয়।

পাঠ্যসূচির প্রতি গভীর মনোযোগ, পরিবারের সহযোগিতা ও আত্মবিশ্বাসের জোরেই শর্মিলা মাধ্যমিকে প্রতিটি বিষয়ে লেটার মার্কসসহ ৮৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বিশেষত বাংলা বিষয়ে শতভাগ নম্বর পাওয়ায় তিনি গোটা রাজ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন।

বাংলায় ১০০ নম্বর প্রাপ্ত মণিপুরি ছাত্রী শর্মিলাকে সংবর্ধনা আমসু ও বিকশাপের

এই অনন্য কৃতিত্বের জন্য অল আসাম মাইনেরেটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আমসু) এবং বিশ্ব বঙ্গ কবি সাহিত্যিক পরিষদের (বিকশাপ) এর যৌথ উদ্যোগে শর্মিলা সিনহাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

শর্মিলার নিজ গ্রাম পাথারকান্দির নারাইনপুরে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হন শিক্ষক, সমাজসেবী, সাহিত্যিক সহ নানা শ্রেণিপেশার বিশিষ্টজনেরা। এতে সংবর্ধনা সভার সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষক লাল মোহন সিনহা। শর্মিলাকে উত্তরীয়, ফুলের তোড়া, রৌপ্য কলমসহ মূল্যবান কাব্যগ্রন্থ ‘ঔচিত্যবোধ কাব্য’ তুলে দেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবি আসহাব উদ্দিন তালুকদার। তিনি বলেন, “এই সাফল্য শুধু শর্মিলার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটা সমগ্র মনিপুরী সম্প্রদায়ের প্রেরণা।

বাংলায় ১০০ নম্বর প্রাপ্ত মণিপুরি ছাত্রী শর্মিলাকে সংবর্ধনা আমসু ও বিকশাপের

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমছুর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাদিক আখতার হোসেন, সমাজসেবী আব্দুল হামিদ, আমছুর উপদেষ্টা আবু সুফিয়ান, বিশিষ্ট ব্যক্তি রাজকুমার সিনহা ও শর্মিলার পিতা মিলন সিনহা।

সংবর্ধনা সভায় বক্তারা বলেন, শর্মিলার এই অসামান্য সাফল্য রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। আজকের শিক্ষার্থীদের কাছে শর্মিলা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তাঁরা।

বাংলায় ১০০ নম্বর প্রাপ্ত মণিপুরি ছাত্রী শর্মিলাকে সংবর্ধনা আমসু ও বিকশাপের

শর্মিলার মা-বাবাও এই আনন্দের মুহূর্তে আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, “আমাদের মেয়ের পরিশ্রম ও সৎপথে চলার ফল আজ গোটা সমাজ দেখছে। আমরা গর্বিত। অনুষ্ঠান শেষে এক মনোজ্ঞ আলোচনা ও কবিতাপাঠের আয়োজন করা হয়, যেখানে শর্মিলার সম্মানে ‘ঔচিত্যবোধ কাব্য’ থেকে পাঠ করেন কবি নিজে। এই সাফল্য শুধু নারাইনপুর গ্রাম নয়, বরং পুরো মনিপুরী সম্প্রদায়, পাথারকান্দি অঞ্চল এবং রাজ্যের জন্য এক গর্বের অধ্যায় হয়ে রইল।

Author

Spread the News