লায়ন্স ক্লাব অব বদরপুর গ্রেটারের ইনস্টলেশন সেরেমনি অনুষ্ঠিত
অনিতা পাল, কাটিগড়া।
বরাক তরঙ্গ, ৭ জুলাই : লায়ন্স ক্লাবের লায়োনিস্টিক ২০২৫-২৬ অর্থবছরের লায়ন্স ক্লাব অব বদরপুর গ্রেটার-এর ‘ইনস্টলেশন ক্লাব অফিসার্স অ্যান্ড বোর্ড অব ডিরেক্টরস’ অনুষ্ঠান রবিবার সন্ধ্যায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। বরাক ভ্যালি সিমেন্টস লিমিটেডের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মাস্টার অফ সেরেমনি (এমওসি) চিরন্ময় পাল চৌধুরী সভা আহ্বান করেন। সভাপতিত্ব করেন ক্লাবের পুনর্নির্বাচিত সভাপতি মুকেশ কুমার আগরওয়াল। অনুষ্ঠানে ইনস্টলেশন অফিসার তথা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর বিএস রাঠোর (পি এম জে এফ), যিনি নতুন বোর্ড অফ ডিরেক্টরসদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বুঝিয়ে দেন।

সভাপতি মুকেশ কুমার আগরওয়াল স্বাগত বক্তব্যে জানান, বিগত বছরে ক্লাব ১২টি চক্ষু শিবিরসহ সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এরপর ক্লাব সম্পাদক সপ্তর্ষি দে বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে ইনস্টলেশন অফিসার বি এস রাঠোরকে বিভিসিএল ও ক্লাবের পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানো হয়। উত্তরীয় ও উপহার সামগ্রী প্রদান করে তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হয়। লায়ন্স ক্লাব অব লালা-র কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে রাঠোর সহ অন্যান্য অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে সম্মানিত করেন।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে পিডিজি বি এস রাঠোর বলেন, সেবা করার মানসিকতা শুধু একটি ভালো অভ্যাস নয়, এটি একটি জীবনদর্শন। এটি সেই শক্তি, যা মানুষকে মানুষ করে তোলে। সেবা মানে শুধু কাউকে সাহায্য করা নয়। সেবা মানে হৃদয় দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, নিষ্ঠা দিয়ে অন্যের পাশে দাঁড়ানো। কোনও বিনিময়ের আশা ছাড়াই, নিঃস্বার্থভাবে কিছু দেওয়ার নামই প্রকৃত সেবা। আমরা যখন কাউকে সাহায্য করি, তখন শুধু তার জীবনে পরিবর্তন আনি না, নিজের জীবনকেও আলোকিত করি। একজন ক্ষুধার্তকে খাবার দিলে শুধু তার পেটই ভরে না, আমাদের হৃদয়ও পূর্ণ হয়। একজন অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ালে শুধু তার যন্ত্রণা কমে না, আমাদের মনও প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। কেন সেবা করা জরুরি? কারণ আমরা একে অপরের জন্যই সৃষ্টি। একা কেউ টিকে থাকতে পারে না। সমাজে টিকে থাকার জন্য, উন্নতির জন্য, সুখের জন্য – আমাদের একে অপরকে প্রয়োজন। তিনি নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “দায়িত্ব মানেই একটি বিশ্বাস, একটি অঙ্গীকার। নিষ্ঠা ও সততার সাথে কাজ করলে কোনো বাধাই সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে ফ্ল্যাগ স্যালুটেশন পরিচালনা করেন ডাঃ স্বপন কুমার দাস এবং ইনভোকেশন পরিচালনা করেন এনাম উদ্দিন। ক্লাবের নবনির্বাচিত কর্মকর্তারা হলেন, ক্লাবের সভাপতি পুনরায় মনোনীত হয়েছেন মুকেশ আগরওয়াল, সহ সভাপতি তিনজন যথাক্রমে এনাম উদ্দিন, আশিস তুশনিয়াল ও পবন কুমার তুলসিয়ান, সম্পাদক সপ্তর্ষি দে, যুগ্ম সম্পাদক সমরজিৎ চক্রবর্তী, কোষাধ্যক্ষ অনুপম ঘোষ, মেম্বারশিপ চেয়ারপার্সন নিশা আগরওয়াল, এল সি আই এফ চেয়ারপার্সন সন্তোষ তুশনিয়াল, সার্ভিস চেয়ারপার্সন দুজন রতিশকুমার রাই ও অভয়কুমার জৈন, মার্কেটিং কমিউনিকেশন চেয়ারপার্সন মণীশ পাল, ক্লাব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রদীপ্তকুমার দে, ছয়জন ডিরেক্টর অনুপ চাঁদ দফতরি, ডাঃ স্বপনকুমার দাস, লুৎফর রহমান, চিরন্ময় পাল চৌধুরী, গুরু নন্দন ঘোষ ও সুজিত কর, দুজন পিআরও নিয়াজ উদ্দিন এবং শমীন্দ্র পাল।
সভাপতি মুকেশ আগরওয়াল তাঁর বক্তব্যে জানান, বদরপুরে একটি বৃদ্ধাশ্রম খোলার পরিকল্পনা রয়েছে এবং বছরব্যাপী বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। ক্লাবের সিলভার জুবিলী ডিসেম্বরে উদযাপন করার কথাও তিনি ঘোষণা করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লায়ন্স ক্লাব অফ লালা-র সভাপতি নুরুল মজুমদার, সম্পাদক ইকবাল বাহার মজুমদার সহ ক্লাবের অন্য কর্মকর্তারা।
লায়ন্স ক্লাবের সদস্য না হয়েও সমাজসেবায় অবদানের জন্য এদিনের অনুষ্ঠানে অনুরাধা বোস, আইনজীবী লক্ষী দত্তগুপ্ত ও সৌগত দে-কে উত্তরীয় ও মোমেন্টো প্রদান করে সংবর্ধনা জানানো হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চিরন্ময় পাল চৌধুরী এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সম্পাদক সপ্তর্ষি দে। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।