কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ রাজ্য মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকেন্দ্র সঞ্চালনা বিষয়ক কর্মশালা শিলচরে
বরাক তরঙ্গ, ২৮ জুন : শনিবার শিলচর উইমেন্স কলেজের সেমিনার হলে কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ রাজ্যিক মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলচর আঞ্চলিক কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে শিক্ষাকেন্দ্র সঞ্চালনা বিষয়ক একদিনের কর্মশালা আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ রাজ্যিক মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাল কোয়ালিটি এসুরেন্স এর ডিরেক্টর অধ্যাপক নৃপেন্দ্র নারায়ণ শর্মা, অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার (স্টাডি সেন্টার) বিরিঞ্চি বরা, এডমিশন কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক জয়দীপ বরুয়া ও উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলচর আঞ্চলিক কেন্দ্রের ডিরেক্টর অধ্যাপক অমর ঘোষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পঙ্কজ কান্তি মালাকার সহ বিভিন্ন অধ্যয়ণ কেন্দ্রের প্রধান ও সমন্বয়কগণ।
এদিন শুরুতে অ্যাসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার (স্টাডি সেন্টার) বিরিঞ্চি বরা উপস্থিত সদস্যদের সম্মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলচর ভিত্তিক আঞ্চলিক কেন্দ্রের ডিরেক্টর অমর ঘোষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পঙ্কজ কান্তি মালাকারের পরিচয় করিয়ে দেন এবং অনুষ্ঠানের মূল বিষয়ের উপর আলোকপাত করে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব রিজিওনাল ডিরেক্টরের উপর ন্যস্ত করেন। এদিনের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিলচর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. সুজিত তিওয়ারী। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদর কলেজকে আঞ্চলিক কেন্দ্রের জন্য মনোনীত করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন সুজিত বাবু। তিনি বলেন, কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ রাজ্য মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অসমের প্রান্তে প্রান্তে ও আগ্রহী ছাত্রদের কাছে দূরশিক্ষা পৌঁছে দিতে নিরলস চেষ্টায় ব্রতী, তাদের কলেজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়ণকেন্দ্র পেয়ে গৌরবান্বিত এবং দূরশিক্ষা প্রচারে তারা সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাল কোয়ালিটি এসুরেন্স এর ডিরেক্টর অধ্যাপক নৃপেন্দ্র নারায়ণ শর্মা বলেন কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ রাজ্য মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় উত্তর পূর্ব ভারতের একমাত্র রাজ্য মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় যা সহজলভ্য এবং মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অগ্রণী সংস্থা হিসেবে কাজ করে চলেছে। আসাম বিধানসভায় ২০০৫ সালের KKHSOU আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দূরশিক্ষা প্রদানে নিবেদিত, যা এই অঞ্চলের উচ্চশিক্ষায় মোট ভর্তির অনুপাত বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তিনি বলেন, কৃষ্ণকান্ত সন্দিকৈ রাজ্যিক মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় উত্তর পূর্ব ভারতে উচ্চশিক্ষার গণতন্ত্রীকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রত্যন্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কাছে উচ্চশিক্ষাকে পৌঁছায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তিশালী ওপেন ডিস্টেন্স লার্নিং (ODL) কাঠামো কর্মজীবি ব্যক্তি, শিক্ষাবাধাপ্রাপ্ত মহিলা এবং যারা দক্ষতা বাড়াতে চান তাদের সহ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে মানসম্পন্ন শিক্ষাকে সহজলভ্য করে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য সক্রিয় ভাবে ডিজিটাল রূপান্তর গ্রহণ করছে। সাম্প্রতিক উদ্যোগ গুলির মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (UMS), এটি একটি নিজস্ব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যা সমস্ত স্তরে পরিষেবাগুলিকে সুগম করে এবং দক্ষতা বাড়ায়, অধ্যয়ণ কেন্দ্র এবং শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে। আইসিটি ভিত্তিক লার্নার মেন্টরিং সিস্টেম, পরামর্শ এবং মেন্টরিং পুনর্গঠনের জন্য মিশ্রিত এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক সহায়তা পরিষেবা সরবরাহ করে বলেন মন্তব্য করেন নৃপেন্দ্র নারায়ণ শর্মা।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এডমিশন কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক জয়দীপ বরুয়া বলেন, বিগত জানুয়ারি সেশন থেকে নতুন ইউনিভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উন্নতীকরণ হয়েছে এবং সেটার বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি ঘোষণা করেন আগামী জুলাই সেশন থেকে বাংলা, সংস্কৃত ও যোগা বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সায়েন্সের স্নাতক পাঠ্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম গুলোকে আঞ্চলিক ভাষার মাধ্যমে পঠন পাঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগত জুলাই সেশন থেকে রাজনীতি বিজ্ঞান, শিক্ষা বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান অসমীয়া মাধ্যমে পাঠ্যক্রম শুরু হবে এবং আগামীতে বাংলা মাধ্যমে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আগত জুলাই সেশনের ভর্তি প্রক্রিয়া আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে এবং সেটার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যে প্রি-রেজিস্ট্রেশন লিঙ্ক সক্রিয় করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সকল অধ্যয়ণ কেন্দ্রের প্রধান ও সমন্বয়কগণের সঙ্গে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগণের উন্মুক্ত বার্তালাপ পর্ব হয়, সেখানে অধ্যয়ণ কেন্দ্রগুলো থেকে বিভিন্ন সমস্যা ও পরামর্শ নেওয়া হয় এবং সমস্যাগুলো সুরাহা করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়। শেষে উইমেন্স কলেজের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদলকে সম্মাননা জানানো হয়। পরিশেষে উক্ত কলেজের অধ্যয়ণ কেন্দ্রের সমন্বয়ক ও সহকারী অধ্যাপক ড. সুজয় দাস কর্মশালায় উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে শিলচর রাধামাধব কলেজ অধ্যয়ণ কেন্দ্রের প্রধান ড. অরুন্ধতী দত্ত চৌধুরী ও সমন্বয়ক ড. অরুণাভ ভট্টাচার্য, কাছাড় কলেজ অধ্যয়ণ কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক রতন কুমার দাস, কাবুগঞ্জ জনতা কলেজ অধ্যয়ণ কেন্দ্রের প্রধান ড. দেবাশিস পাল সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
