কেএফসি এবং বাটার শো-রুমে হামলা, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু

৮ এপ্রিল : দখলদার ইজরায়েল ফিলিস্তিনের গাজায় যে নারকীয় গণহত্যা চালাচ্ছে তা বন্ধের দাবিতে সোমবার বাংলাদেশে পালিত হয়েছে ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল’ কর্মসূচি। এতে অংশ নেয় সারাদেশের ছাত্রজনতা থেকে শুরু করে আমজনতা। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে যেনো এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, এই কর্মসূচির সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে কেএফসি এবং বাটার শো-রুমে হামলা চালানোর ঘটনা।

এদিকে, ওই দিন ঢাকায় শুরু হয়েছে ৪ দিন ব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন, যেখানে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের ৫০ দেশের বিনিয়োগকারীরা, পাশাপাশি এখানে বিশ্বের বিখ্যাত ব্র্যান্ড ও কোম্পানীর শীর্ষ কর্মকর্তারাও রয়েছেন। এই সময় বিশ্ববিখ্যাত এই দুই ব্রান্ডের ওপর হামলা ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষক থেকে শুরু করে নেটিজেনরা।

ইসলাম ধর্মকে সামনে এনে কিছু দুষ্কৃতিকারী কেএফসি ও বাটাকে ইসরায়েলের ব্র্যান্ড দাবি করে হামলা চালায়। শুধু হামলা চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি তারা, লুট করে নিয়ে গেছে বাটার শো-রুমের জুতো, যে ভিডিও ইতিমধ্যে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। ভাইরাল হওয়া এসব ভিডিও দেখে হামলাকারীদের রীতিমতো ধুয়ে দিচ্ছেন নেটনাগরিকরা। তানিয়া তন্বী নামের একজন বাটা শো-রুমের জুতো লুটের ভিডিও শেয়ার করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘লুটকারীরা লেবাসধারী মুসলমান, এরা কখনো মুসলমান হতে পারে না। গাজায় হামলা বন্ধের জন্য আন্দোলন করতে নেমে এভাবে বিখ্যাত ব্র্যান্ড বাটার ওপর হামলা ভাঙ্গচুর, অগ্নিকাণ্ড, হরিলুট মেনে নেওয়া যায় না।’

ইসরাত জাহান নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘লুটকারীরা যেভাবে পা‘য়ের সাইজ মিলিয়ে মিলিয়ে জুতো বেছে বেছে নিচ্ছিলো কোনভাবেই মনে হয় না তারা গাজাবাসীর জন্য রাস্তায় নেমেছিলো। এসব পূর্ব পরিকল্পিত, বর্তমান সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই করা হচ্ছে এসব।’ কেউ কেউ আবার এর পিছনে দেখছেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার দল আওয়ামি লিগের নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলিগের হাত। এর মধ্যে কুমিল্লা শহরের কেএফসিতে গতকাল সন্ধ্যায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে একটি গ্রুপ। রেস্টুরেন্টটি ভাঙ্গচুরের সেই ভিডিওটি প্রথম ফেসবুকে পোস্ট করে শরীফ আল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ছাত্রলিগ নেতা।

এখন প্রশ্ন হল বিশ্ববিখ্যাত ব্রান্ড কেএফসি আর বাটা কি সত্যিই ইসরায়েলের পণ্য? ইতিমধ্যে বাটা তাদের ফেসবুকে একটি বিবৃতি দিয়েছে গতকালের হামলার ঘটনায়। সেখানে তারা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে এটি ইসরায়েলে কোন প্রতিষ্ঠান নয় বরং ব্যাক্তি মালিকানাধীন। এই হামলার তীব্র নিন্দাও জানিয়েছে তারা। বাটার যাত্রা শুরু হয় মূলত চেক প্রজাতন্ত্র থেকে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও অবদান রয়েছে ব্র্যান্ডটির।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাটা কোম্পানি দুইভাবে অবদান রেখেছিল। বাটার মালিক টমাস জন বাটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি সাহায্য করেছেন এবং বিশ্ব জনমতকে প্রভাবিত করতে কাজ করেছেন। তৎকালীন বাটা স্যু কোম্পানি (পাকিস্তান) লি.এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন ডব্লিউ-এ এস ওডারল্যান্ড। এই ভদ্রলোক আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন এবং তিনিই সেই বিরল বিদেশি মুক্তিযোদ্ধা, যিনি ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। এমনকি তার সম্মানে ২০১০ সালেরে ফেব্রুয়ারি মাসে গুলশান-২-এর ৮৪ নম্বর সড়কটি তার নামে নামকরণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই ওডারল্যান্ড আরেকটা দূর্দান্ত কাজ করেছিলেন, মুক্তিবাহিনীর জন্য ৩০ হাজার জোড়া জুতা বানিয়ে তা বিনামূল্যে সরবরাহ করেছিলেন তিনি। আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান জানাতে কানাডার টরেন্টোতে ‘বাটা স্যু মিউজিয়ামে’ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহারের জন্য বাটা নির্মিত দু’জোড়া জুতা এখনো নমুনা হিসেবে সংরক্ষিত আছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যাদের এত অবদান তাদের প্রতিষ্ঠানেই কি না হামলা?

অপরদিকে, বিশ্ববিখ্যাত আরেক ব্র্যান্ড কেএফসি। যারা নামে গুনে খাবারের গুনগত মানে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে বিশ্বব্যাপী। কেএফসির উৎপত্তিস্থল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটিও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর সঙ্গেও কোনভাবে ইজরায়েলের সম্পৃক্ততা নেই। বাটা এবং কেএফসিতে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের গ্রেফতারেরও দাবি জানিয়েছেন নেটিজেনরা। ইতিমধ্যে গ্রেফতারও হয়েছেন এসব দুস্কৃতিকারিদের অনেকে।
খবর : দৈনিক ইনক্লাব পত্রিকা ডিজিটাল।

কেএফসি এবং বাটার শো-রুমে হামলা, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু

Author

Spread the News