মুখ্যমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বরাকের পরিকাঠামো উন্নয়নে গতি, বললেন কৌশিক

জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১০ অক্টোবর : মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মার গতিশীল নেতৃত্বে বরাক উপত্যকা আজ নজিরবিহীন রূপান্তরের সাক্ষী। সড়ক, এলিভেটেড করিডর এবং সেতু নির্মাণে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে এমনটাই মন্তব্য করেছেন খাদ্য, গণবিতরণ ও ভোক্তা বিষয়ক, খনিজ ও খনিজ পদার্থ, এবং বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী কৌশিক রায়। শুক্রবার শিলচরে জেলা কমিশনার কার্যালয়ের নবনির্মিত সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করে মন্ত্রী বলেন, “সড়কই উন্নয়নের প্রাণধারা। বরাক উপত্যকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য মজবুত যোগাযোগব্যবস্থা শুধু কাম্য নয়, অপরিহার্য।”

২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রকল্পগুলো; এনএইচআইডিসিএল-কে কঠোর নির্দেশনা, উন্নয়নে সময়সীমা ও প্রতিশ্রুতির উপর জোর

এই সর্বাত্মক পর্যালোচনা বৈঠকটি বরাক উপত্যকার উন্নয়ন যাত্রায় এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মন্ত্রী রায়ের দৃঢ় ও উদ্বুদ্ধকারী বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে রাজ্য সরকারের অবিচল অঙ্গীকার, বরাক উপত্যকাকে এক সংযুক্ত, আধুনিক ও সমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত করার। মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বই এই অবকাঠামো বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মন্ত্রী কৌশিক রায়ের বক্তব্যে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়, মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মার নেতৃত্বে বরাক উপত্যকায় ঘটছে দৃশ্যমান পরিবর্তন। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিন জেলার, কাছাড়, শ্রীভূমি ও হাইলাকান্দি, শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিক, বাস্তুকার এবং জন প্রতিনিধিবৃন্দ। বৈঠকে ভারতমালা প্রকল্প ও অন্যান্য জাতীয় পরিকাঠামো উদ্যোগের অধীনে চলতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি ও সমস্যাবলী খতিয়ে দেখা হয়। তিনি সব বিভাগ ও সংস্থাকে প্রশাসনিক বিলম্বের ঊর্ধ্বে উঠে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই প্রকল্পসমূহ সম্পন্ন করতে হবে  স্পষ্ট নির্দেশ দেন।

মন্ত্রী আরও জানান, সরকারি প্রকল্পে বিলম্বের ক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন যে, কাশিপুর সড়ক নির্মাণ প্রকল্প ২০২৬ সালের মার্চের পূর্বেই সম্পন্ন করতে হবে। এই প্রকল্প নগরীর যানজট নিরসন ও শিলচর শহর ও উপশহরের মধ্যে নির্বিঘ্ন সংযোগ নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মন্ত্রী রায় জানান, বরাক উপত্যকার মানুষ বহুদিন ধরে আধুনিক, দীর্ঘস্থায়ী সড়ক অবকাঠামোর প্রত্যাশায় আছেন। তিনি বলেন, “উন্নয়ন কর্মে শৈথিল্যের কোনও স্থান নেই, জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও মুখ্যমন্ত্রীর রূপান্তরমুখী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।” বৈঠকে বরাপানি–পাঁচগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, শিলচর–চুরাইবাড়ি, শিলচর–ভাইরেংটি, শিলচর–জিরিবাম, পয়লাপুল–হাংরুম, শিলচর বাইপাস, এবং ক্যাপিটাল পয়েন্ট–এর মতো প্রধান সড়ক প্রকল্পগুলির বর্তমান অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।

মন্ত্রী রায় মাটির বাস্তবতা অনুধাবন করে নির্দেশ দেন, ক্যাপিটাল পয়েন্ট থেকে সোনাই রোড পর্যন্ত অবিলম্বে মেরামতির কাজ শুরু করতে হবে, যাতে শহরের অভ্যন্তরীণ যান চলাচলে গতি আসে এবং নাগরিকদের দৈনন্দিন ভোগান্তি কমে। পাশাপাশি তিনি ডিমা হাসাও জেলার পাইলাপুল–হাংরুম সড়ক প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করার জন্যও এনএইচআইডিসিএল-কে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এই সড়কটি বরাক উপত্যকা ও পাহাড়ি অঞ্চলগুলির মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ জীবনরেখা হিসেবে কাজ করবে। বিভাগীয় সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রী রায় বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ, নিষ্কাশন সমস্যা ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের জটিলতার কারণে প্রকল্পে বিলম্ব ঘটে। তাই জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিকে মিশন মোডে এই প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করতে হবে। মন্ত্রী দৃঢ়ভাবে বলেন, উন্নয়ন নিয়ে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। বরাক উপত্যকার মানুষ আধুনিক পরিকাঠামোর অধিকারী হবেনই, এটি আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব।

মন্ত্রী কৌশিক রায় এনএইচআইডিসিএল ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগত মান, স্থায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা বজায় রাখার জন্য সবাইকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, এই প্রকল্পগুলি বরাক উপত্যকার নতুন আত্মবিশ্বাস, কর্মদক্ষতা ও গৌরবের প্রতীক হোক।

মন্ত্রী আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে রাজ্য সরকার বরাক উপত্যকার উন্নয়নে একটি সক্রিয় ও ফলমুখী নীতি গ্রহণ করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে, এবং প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা বা সমন্বয়ের অভাবে যেন কোনো প্রকল্প স্থবির না হয়,সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কাছাড়ের জেলা কমিশনার মৃদুল যাদব (আইএএস), শ্রীভূমির জেলা কমিশনার প্রদীপকুমার দ্বিবেদী (আইএএস), হাইলাকান্দির জেলা কমিশনার অভিষেক জৈন , (আইএএস) এবং বিধায়কবৃন্দ মিহিরকান্তি সোম, নীহাররঞ্জন দাস, করিম উদ্দিন বড়ভূইয়া, মিসবাহুল ইসলাম লস্কর ও খলিল উদ্দিন মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত সেন, ডিএফও পলওয়ে বিজয় ত্রিম্বক, শিলচর পুর নিগমের নবনিযুক্ত কমিশানর সৃষ্টি সিং  (আইএএস), এনএইচআইডিসিএল-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ঋতেন কুমার সিং, জেনারেল ম্যানেজার প্রঞ্জল বুড়াগোহাঁই ও গৌরাঙ্গ দেওঘরে, ম্যানেজার গৌরব আগরওয়াল এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও বাস্তুকারদের প্রতিনিধি।

Spread the News
error: Content is protected !!