করিমগঞ্জ নাম পরিবর্তন, স্মারকপত্র কমিটির
বরাক তরঙ্গ, ১ মার্চ : অগণতান্ত্রিকভাবে এবং সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের অধ্যাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে শনিবার স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্যমন্ডিত করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন প্রতিরোধ নাগরিক কমিটি, করিমগঞ্জ এর পক্ষ থেকে জেলার পাঁচটি চক্র আধিকারিক যথাক্রমে করিমগঞ্জ, বদরপুর, নিলাম বাজার, পাথারকান্দি ও রামকৃষ্ণনগর মারফত স্মারকপত্র আসামের রাজ্যপালের নিকট প্রেরণ করা হয়। এই কার্যসূচির অন্যতম অঙ্গ হিসেবে দুপুর সাড়ে বারোটায় বদরপুর চক্র আধিকারিকের হাতে স্মারকপত্র তুলে দেন নাগরিক কমিটির কার্যকরী কমিটির অন্যতম সদস্য যথাক্রমে প্রবীর রঞ্জন নাথ, ময়ীনুল হক, জাকারিয়া আহমেদ, নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস, আশিক উদ্দিন, সৈয়দ সাহাবুদ্দিন, হাবিব মুস্তফা আহমেদ, আব্দুল হালিম তপাদার প্রমুখ। এছাড়াও স্মারকপত্রে স্বাক্ষর করেন ডা নিলয় কান্তি পাল, আনোয়ার হোসেন, অজয় দে, স্বপন চৌধুরী, মাছুম আহমেদ, জুবের হোসেন, মহঃ আহজার উদ্দিন সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। স্মারকপত্রে উল্লেখ করা হয় যে আসাম সরকার চূড়ান্ত সম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে হঠাৎ করে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করেছে। অথচ গণতান্ত্রিক দেশে কোন জেলা বা স্থানের নাম পরিবর্তনের মত একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জনসাধারণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হয়। এছাড়া রাজ্যের সমস্ত বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই এই নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। এটাই হচ্ছে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক রীতি এবং পদ্ধতি। কিন্তু আসাম সরকার সমস্ত প্রকার গণতান্ত্রিক রীতিনীতি এবং পদ্ধতি বিসর্জন দিয়ে চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে ও একপক্ষীয়ভাবে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।
এর তীব্র বিরোধিতা করে করিমগঞ্জ জেলার বিশিষ্ট নাগরিকরা গত ১২ ফেব্রুয়ারি করিমগঞ্জে এক নাগরিক অভিবর্তন আয়োজন করে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতি- ধর্ম- ভাষা- বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে *স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্যমন্ডিত করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন প্রতিরোধ নাগরিক কমিটি* গঠন করেন। নবগঠিত এই কমিটি গত একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করিমগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে এবং সেদিন জেলার নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে গড়ে ওঠা গনতান্ত্রিক আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করার লক্ষ্যে উপস্থিত সকলেই শপথ পাঠ করেন।

এ দিন স্মারকপত্রে প্রদানের পর কমিটির সদস্যরা বলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান ব্যক্তিত্ব নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, বিপিন চন্দ্র পাল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদস্পর্শে ধন্য হয়েছিল করিমগঞ্জ জেলা। ভাষা আন্দোলন সহ স্বাধীনোত্তর কালে যেসব মহান ব্যক্তিত্ব করিমগঞ্জে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন তারা কখনও এধরণের সাম্প্রদায়িক চিন্তাকে মনে স্থান দেননি। বরং সর্বদা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা গ্ৰহণ করেছেন। এদের অসাম্প্রদায়িক ও সমন্বয়ের চিন্তাকে পায়ে মাড়িয়ে আসাম সরকার জেলার বিভিন্ন অংশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোন ধরনের আলাপ- আলোচনা ও গণতান্ত্রিক রীতি রীতির তোয়াক্কা না করে এই অন্যায় সিদ্ধান্ত একপক্ষীয় ভাবে গ্রহণ করেছে। তারা বলেন সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ একদিকে যেমন অন্যায় ও অযৌক্তিক অন্যদিকে তা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রসূত কার্যকলাপ। জেলার নাম পরিবর্তনের এই পদক্ষেপ জাতি, ধর্ম, ভাষা, বর্ণ নির্বিশেষে সকল জনগণের ঐক্য এবং সংহতি বিশেষ করে হিন্দু মুসলমান জনসাধারণের ঐক্য সম্প্রীতি বিনষ্ট করবে। এই নাম পরিবর্তনের সঙ্গে এই অঞ্চলের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও জনগণের জীবনধারণের মান উন্নয়নের কোন সম্পর্ক নেই। এই পরিবর্তন কার্যকরী করার জন্য সরকারি কোষাগার থেকে যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ ব্যয় হবে। জনগণকে সমস্ত ধরনের নথিপত্র সাইনবোর্ড পরিবর্তন সহ বিভিন্ন ধরনের আনুষঙ্গিক কাজে টাকা ব্যয় করতে বাধ্য করা হবে। তাছাড়া নথিপত্র পরিবর্তনের জন্য জনগণকে অভাবনীয় হয়রানির শিকার হতে হবে।
নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আসামের মাননীয় রাজ্যপালের নিকট জোরালো দাবি জানানো হয় যে উল্লেখিত বিষয়গুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে আসাম সরকারের করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের এই অন্যায়, অযৌক্তিক, অগণতান্ত্রিক এবং সাম্প্রদায়িক অধ্যাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার যাতে করা হয় তার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। অন্যথায় ভবিষ্যতে আরও তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।