সিপিএমের করিমগঞ্জ লোকাল সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সিপিএমের করিমগঞ্জ লোকাল সম্মেলন অনুষ্ঠিত

পিএনসি, করিমগঞ্জ।
বরাক তরঙ্গ, ১০ নভেম্বর : শনিবার
করিমগঞ্জ কালীবাড়ি রোড শহিদ ভবনে সিপিআই (এম) করিমগঞ্জ লোকাল কমিটির ১৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের শুরুতে পার্টির রক্ত পতাকা উত্তোলন করেন করিমগঞ্জ জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তরুন গুহ। শহিদবেদিতে মাল্যদান করেন আসাম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্মল দে সহ উপস্থিত প্রতিনিধিদের শহিদবেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সম্মেলনের মূলপর্বের কাজ শুরু হয়। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সঞ্জেন্দু নাথ। পার্টি সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ এই সময়ে প্রয়াত পার্টি সদস্য সহ গুণীজনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

শুরুতে বক্তব্যে নির্মল দে বলেন, তিন বছর পর পর আমাদের পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে আমরা দেশের পরিস্থিতি, আমাদের বিগত দিনের কাজকর্মের পর্যালোচনা করি। নূতন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, তার মাধ্যমে আগামী তিন বছরের কাজকর্মের কর্মসূচী গ্রহণ করি। তিনি বলেন, আমাদের দেশের শাসন যারা পরিচালনা করছেন তারা দেশি, বিদেশি বৃহৎ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষাকারী। তাদের শাসনে দেশের বৃহৎ ব্যবসায়ীদের মুনাফা হাজারগুণ, লক্ষগুণ বাড়ছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী মানুষের জীবন যন্ত্রনা বাড়ছে। বেকারি, কর্মসংস্থানহীনতা, ক্ষুধা, বাড়ছে, মানুষ কাজ পাচ্ছেন না, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বৃহৎ ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। একইসঙ্গে দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতার উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্তে সাধারণ মানুষের উপর, গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। গণতন্ত্রকে ধংস করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করছে।লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রশাসন, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন, মিডিয়া, বিপুল অর্থশক্তিকে ব্যবহার করেও সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়নি। কাশ্মীরের নির্বাচনে মানুষ বিজেপি এবং কাশ্মীরি উগ্রপন্থাকে পরাস্ত করেছে। এই ঘটনাগুলি থেকে  আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বরাক উপত্যকায় কোন কলকারখানা নেই। উপত্যকার চিনি কল, কাগজ কল বন্ধ হয়ে গেছে। শাসক দল চায় না বরাক উপত্যকায় শিল্প হোক, রাজ্যে কর্ম সংস্থান নেই। রাজ্য সরকার উগ্র হিন্দুত্ববাদ ও উগ্র অসমিয়া জাতিয়তাবাদের মিশ্রণে রাজ্য চালাচ্ছে। রাজ্য সরকারি নিয়োগে স্থানীয় প্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। বন্যার ক্ষতিপূরণ, বাঁধ নির্মাণ, পঞ্চায়েতে অর্থ লুট হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষ সহ সাধারণ মানুষের স্বার্থে কমিউনিষ্ট পার্টিকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী লোকাল কমিটির পক্ষে কালীপদ নাথ।

প্রতিবেদনের উপর পনোরো জন প্রতিনিধির আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সম্মেলন থেকে অঞ্চলের জনসাধারণের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে, উগ্র হিন্দুত্ববাদ ও উগ্র জাতিয়তাবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে, জেলায় ছাত্র আন্দোলন, নারী আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে একগুচ্ছ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।সম্মেলন থেকে অরুণ দত্তকে সর্বসম্মতিক্রমে সম্পাদক করে ১৭জনের নূতন লোকাল কমিটি নির্বাচন করা হয় এবং জেলা সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য ১৯ জন প্রতিনিধি এবং ৬ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। করিমগঞ্জ জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তরুন গুহ তার সমাপ্তি ভাষণে আগামী ৭ই ডিসেম্বর সিপিআই (এম) ২৪তম করিমগঞ্জ জেলা সম্মেলন উপলক্ষে করিমগঞ্জ পাব্লিক স্কুল খেলার মাঠে শ্রমজীবী মানুষের সমাবেশকে সফল করা এবং আসন্ন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিটি স্তরে বিজেপিকে পরাজিত করার আহ্বান জানান।  সবশেষে সমবেত আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Author

Spread the News