জুবিন গর্গের শৈশব কেটেছে শ্রীভূমি শহরে, কান্নায় ভেঙে পড়লেন বাল্যবন্ধুরা

মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ২০ সেপ্টেম্বর : গোটা দেশের সঙ্গীত জগতের হার্ট থ্রব জুবিন গর্গের শৈশব কেটেছে শ্রীভূমি (তৎকালীন করিমগঞ্জ) শহরে। তাঁর বাবা মোহিনী মোহন বরঠাকুর ছিলেন তৎকালীন করিমগঞ্জ মহকুমার একজন এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট। জুবিনের বাল্যকাল, পড়াশোনা এবং বেড়ে ওঠা এই প্রান্তিক শহরে। নার্সারি থেকে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত জুবিনের পড়াশোনা নীলমণি রোডের প্রান্তিক কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে। সাল ছিল ১৯৭৫। তখন এটি ছিল শহরের একমাত্র ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। রমণীমোহন ইনস্টিটিউটে ছিল স্কুলটি।

শুক্রবার সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিঙে এই মহান গায়কের মৃত্যু ঘটলে শ্রীভূমি শহরে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দুই বাল্যবন্ধু চিরদীপ ভট্টাচার্য (সুমন) এবং বিক্রম দে (জয়) শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। সুমন জানান, নাসারি থেকে ফাইভ পর্যন্ত তিনি জুবিনের সঙ্গে পড়েছেন। অত্যন্ত প্রতিভাধর জুবিন সবসময় তাঁদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতেন। তাঁর জানার আগ্রহ ছিল অপরিসীম। জুবিনের অত্যন্ত কাছের বন্ধু হলেন বিশিষ্ট ক্রিকেটার বিক্রম দে। তিনি জানান, নার্সারি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন জুবিনের সঙ্গে। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় জুবিনের বাবার ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ায় জুবিন মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে। তৎকালীন করিমগঞ্জের সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিক্রম ছিলেন তাঁর সহপাঠী। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত সরকারি স্কুলের ছাত্র ছিলেন জুবিন। কথাগুলো জানাতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি। শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি যুগশঙ্খকে জানান, জুবিনের গোত্র হল ‘গর্গ’। তাঁর সারনেম বরঠাকুর। জুবিন নিজের নামের সঙ্গে গোত্রকে জুড়ে দিয়েই ‘গর্গ’ লিখতেন।

জুবিন গর্গের শৈশব কেটেছে শ্রীভূমি শহরে, কান্নায় ভেঙে পড়লেন বাল্যবন্ধুরা
করিমগঞ্জে বাল্যবন্ধুর সঙ্গে। ফাইল ছবি।

বিক্রম জানান, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় ৩৮ হাজারেরও বেশি গান গাওয়া এই মহান শিল্পীর তবলায় হাতেখড়িও এই শহরে।
তবলাগুরু রবিন ব্যানার্জির কাছে তারা দু’জন একসঙ্গে তবলা শিখতেন। জুবিন গর্ব করে বলতেন, তাঁর প্রথম সঙ্গীত গুরু রবিন ব্যানার্জি। জুবিন এই শহরে থাকতেন সেটেলমেন্ট রোডের হার্টমেন্ট গলিতে ম্যাজিস্ট্রেট কোয়ার্টারে। বর্তমানে সেই কোয়ার্টারের কোনও অস্তিত্ব নেই। এখানে গড়ে উঠেছে ডিআরডিএ অফিস সহ সখী কার্যালয়।
বিক্রম আরও জানান, ছোটবেলা থেকেই গান-বাজনার প্রতি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে জুবিনের। স্কুলের অনুষ্ঠানে গান, বাজনা সহ নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি।

জুবিন গর্গের শৈশব কেটেছে শ্রীভূমি শহরে, কান্নায় ভেঙে পড়লেন বাল্যবন্ধুরা

২০০৫ ও ২০১৪ সালে শ্রীভূমিতে অনুষ্ঠানে এসে পুরোনো সহপাঠীদের খুঁজে বের করে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন জুবিন। তাঁর নার্সারি স্কুল রমণী মোহন ইনস্টিটিউটে যান এবং সেখানে গানও গান। আহার গ্রহণ করেন বাল্যবন্ধু বিক্রমের ঘরে। চিত্তরঞ্জন লেনের বাসিন্দা রাজীব নন্দী জানান, ছোটবেলায় জুবিনকে সঙ্ঘশ্রী ক্লাবের দুর্গাপুজোয় কাছে থেকে দেখেছেন। খুবই শান্ত ছিল। তাঁর বাবা মোহিনীমোহন বরঠাকুর সঙ্ঘশ্রী ক্লাবের দুর্গাপূজায় চণ্ডীপাঠ করতেন। তখন বাবার সঙ্গে দেখেছেন তাঁকে।

জুবিন গর্গের শৈশব কেটেছে শ্রীভূমি শহরে, কান্নায় ভেঙে পড়লেন বাল্যবন্ধুরা
Spread the News
error: Content is protected !!