ওয়াকফ আন্দোলন হিংসার আশ্রয় নেওয়া একেবারেই ঠিক নয় : প্রদীপ

বরাক তরঙ্গ, ১৯ এপ্রিল : সম্প্রতি ওয়াকফ সম্পত্তি বিল সংসদে পাস হওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ হচ্ছে। বরাক উপত্যকায়ও এর প্রভাব পড়েছে। ইদানিং এনিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘাত ও ঢিল ছোঁড়াছুঁড়ির মতো দু-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বরাকের সবাইকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানাল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।

বিডিএফ কার্যালয়ে শনিবার সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে গিয়ে মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ করার অধিকার সবার রয়েছে। তাই যাঁরা এই আইন নিয়ে অসন্তুষ্ট, তাঁরা সমাবেশ বা সরকারের কাছে স্মারকলিপি অবশ্যই প্রদান করুন, কিন্তু অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি বা হিংসার আশ্রয় নেওয়া একেবারেই ঠিক নয়। তিনি বলেন, এটা বুঝতে হবে যে কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ঠিক এটাই চাইছেন। এসবের মাধ্যমে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিয়ে তার থেকে রাজনৈতিক লাভ তোলার একটা প্রচেষ্টা অবশ্যই চলছে। বিশেষতঃ আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে এই নিয়ে আরও দূরভিসন্ধি চলতে পারে। তিনি তাই জনগণকে কোনভাবে এই ফাঁদে পা না দেবার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রদীপ দত্তরায় আরও বলেন, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বরাক উপত্যকাকে শান্তির দ্বীপ বলে অভিধা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন এখানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ভাষিক এবং ধর্মীয় জনগোষ্ঠী একসাথে শান্তিতে  বসবাস করছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এই উপত্যকার ঐতিহ্য। এমনকি বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর সারা দেশ জুড়ে গন্ডগোল চললেও বরাকে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তিনি তাই কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উস্কানিতে যাতে এখানে শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট না হয় এই মর্মে সবাইকে আবেদন জানিয়েছেন।

ওয়াকফ আন্দোলন হিংসার আশ্রয় নেওয়া একেবারেই ঠিক নয় : প্রদীপ

বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, ওয়াকফ বিলের বিপক্ষে সংসদে যারা ভোট দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে চল্লিশ জন মুসলিম সাংসদ ও বাকি ১৯২ জন হিন্দু সাংসদ। তাই এক্ষেত্রে মুসলিমরা যে একা হয়ে পড়েছেন তা মোটেই নয়। তিনি বলেন, এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে একমাত্র উচ্চতম ন্যায়ালয়। ইতিমধ্যে কিছু স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে। তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থার উপর তাঁদের আস্থা রয়েছে। তাই আপাতত কোনও প্ররোচনায় প্রভাবিত না হয়ে তিনি এদিন সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন। জয়দীপ আরও বলেন যে ইদানিং বিভিন্ন ধর্মীয় মিছিলে এই অঞ্চলের যুবসমাজকে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ধর্মীয় উৎসব পালন নিয়ে কোন মতভেদ নেই, তা চলতেই পারে। কিন্তু তাঁর পাশাপাশি এই উপত্যকার যুবক যুবতীদের যে মূল সমস্যা অর্থাৎ কর্মসংস্থানের অভাব তা নিয়েও মিছিল করা জরুরি। তিনি বলেন, উপত্যকায় রেজিস্ট্রিকৃত বেকারের সংখ্যা প্রায় ছয় লক্ষ। অধিকাংশ শিক্ষিত যুবক ই-রিকশা চালিয়ে পরিবার প্রতিপালন করছেন। তিনি বলেন, যদি এদের সবাই একত্রিত হয়ে একবার একহাজার মানুষের একটি মিছিল করেন তবেই অবস্থার পরিবর্তন হতে বাধ্য। তিনি বলেন বিডিএফ এই নিয়ে অনেক দিন ধরে সরব রয়েছে। তিনি এদিন তাই নিজেদের স্বার্থে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের যুবকদের এই উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ নেবার আহবান জানিয়েছেন।

Spread the News
error: Content is protected !!