মেঘালয়ে এক বাঙালি সহ দুই হিন্দিভাষীকে পিটিয়ে খুন, তীব্র নিন্দায় বরাকবঙ্গের 

বরাক তরঙ্গ, ২৯ মার্চ : লোকসভা নির্বাচনের মুখে মেঘালয়ে ফের বাঙালি নির্যাতন, ইছামতিতে তিনজনকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে খুন করার ঘটনার তীব্র নিন্দে জানাল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সন্মেলন। এ ধরনের ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ করা এবং বাঙালি, হিন্দিভাষী সহ অন্যান্য সমতলীয় জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য সন্মেলন মেঘালয়ের  কনরাড সাংমা সরকারের কাছে দাবি উত্থাপন করেছে। বিষয়টি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং জাতীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপও চেয়েছে বরাকবঙ্গ।

চারবছর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে সামনে রেখে খাসি ছাত্র ইউনিয়ন এবং অন্যান্য খাসি জাতীয়তাবাদী সংগঠনের প্রত্যক্ষ প্ররোচনায় মেঘালয়ের বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি সমতলীয় জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ইছামতি, ভোলাগঞ্জ ও কালীবাড়ি এলাকায় বাঙালি নির্যাতনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে ইছামতিতে। গত বুধবার সংঘটিত এই ঘটনা সম্পর্কে শুক্রবার বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত এক বিবৃতিতে বলেছেন, ফের ‘কা’ ইস্যুকে সামনে রেখে ইছামতিতে যেভাবে বাঙালি ও হিন্দিবাসী সহ তিনজনকে রাজপথে নৃশংসভাবে খুনের ঘটল সেটা চরম অমানবিক ও নিন্দনীয়। এতে আরও একবার ওই রাজ্যে প্রবাহমান জাতিবিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ পেল। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এভাবে জাতি বৈরীতা চলতে পারে না। অথচ মেঘালয়ে বারবার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলেও রাজ্যের নির্বাচিত সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছে। এ সপ্তাহে সংগঠিত নৃশংস খুনের ঘটনার কথা সরকারিভাবে স্বীকার করা হলেও রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা পুরোপুরি পক্ষপাতমূলক যা কোনওভাবেই গোপন নয়।

এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হস্তক্ষেপ চেয়ে সাধারণ সম্পাদক দত্ত বিবৃতিতে বলেছেন, দেশের প্রতিটি প্রান্তে নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানের সার্বিক দায়িত্ব কেন্দ্রের। কোনও রাজ্য সরকার যদি সেই দায়িত্ব পালনে অপারগ হয় তাহলে কেন্দ্র নিরব থাকতে পারেনা। পাশাপাশি জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোরও এক্ষেত্রে দায়িত্ব এড়ানো উচিত নয়। অথচ তাদের নিরবতা বিস্ময়কর। প্রসঙ্গটি টেনে সাধারণ সম্পাদক দত্ত বলেছেন, কেন্দ্র সরকার সম্প্রতি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিধি কার্যকর করেছে। এতে উল্লেখিত শর্তগুলো  দেশভাগের শিকার বাঙালিদের নাগরিকত্বের সমস্যা আদৌ নিরসন করতে পারবে কি না সে নিয়ে সংশয়ের যথেষ্ট স্থল রয়েছে। আবেদন করলেই নাগরিকত্ব মিলবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।

পাশাপাশি ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত রাজ্যগুলোতে এই আইন কার্যকর হবে না বলে কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে। তা সত্ত্বেও এই শ্রেণীভুক্ত মেঘালয়ে ‘কা’ ইস্যুকে ঢাল হিসাবে রেখে বাঙালি এবং অন্যান্য সমতলীয় জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন, জীবন ও সম্পত্তি নিয়ে বেঁচে থাকার সংবিধান প্রদত্ত অধিকার সরকারি প্রশ্রয়ে ও মদতে খর্ব করার চেষ্টা এবং অর্থনৈতিকভাবে তাদের পঙ্গু করে দেওয়ার প্রয়াস অসহায় মানুষগুলোকে অনিশ্চিত অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সাধারণ সম্পাদক দত্ত সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বকে তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মেঘালয়ে হিংসা বন্ধ করা এবং সমস্ত সমতলীয় জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্যের কনরাড সাংমা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার আর্জি রেখেছেন। পাশাপাশি তিনি শুভবুদ্ধি সম্পন্ন প্রতিটি মানুষ এবং সামাজিক সংগঠনকে এ ব্যাপারে সরব হয়ে মেঘালয়ের বাঙালি ও হিন্দিবাসী সহ অন্যান্যদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জোরালো দাবি তোলার আহ্বান রেখেছেন।

উল্লেখ্য, মেঘালয়ের বাংলাদেশ সীমান্তের ইছামতী গ্রামে বুধবার বিকেলে কয়েকটি খাসি প্রেসার গ্রুপের ‘সিএএ বিরোধী’ সমাবেশের পর স্থানীয় এক বাঙালি ও হিন্দিভাষীকে পাথর ছুড়ে প্রকাশ্য সড়কে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনায় নিখোঁজ আরেকজনের মরদেহ বৃহস্পতিবার সকালে ইছামতীর পাশেই ডালডা বলে এলাকার ঘন জঙ্গলে পাওয়া গেছে। প্রাথমিক খবরে জানা গেছে, এই ব্যক্তিটি জেসিবি চালক, এবং বড়ো
সম্প্রদায়ের। গতকাল যে দুজন খুন হয়েছেন তাঁদের সুজিত দত্ত ও ইশান সিং বলে শনাক্ত করা গেছে।

Author

Spread the News