ক্যালিফোর্নিয়ায় বড় ছেলে, গ্যাংটকে ছোট জন, বিছানায় মায়ের পচাগলা লাশ উদ্ধার

বরাক তরঙ্গ, ৪ অক্টোবর : না, কোন লেখকের আবেগপ্রবণ সৃজনশীল লেখা গল্প নয়। যোরহাটের এক বাস্তবচিত্র সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদ পোর্টালে ঘুরছে। মঙ্গলবার বরাক তরঙ্গও এই সংবাদ পরিববেশন করেছিল। বছর ৭৫ এর অনুপমা দত্তের করুন মৃত্যুর ঘটনা। উচ্চ শিক্ষিত ও বড়মাপের দুই কর্মীর মা অনুপমা দত্তের করুন মৃত্যু কি ভাবে ঘটল জেনে নিন।

বন্ধ ঘরের ভেতরে পড়ে আছে বৃদ্ধার লাশ। একদিন, দুই দিন… চলে গেল প্রায় দিন পনেরোর মতো।  ক্যালিফোর্নিয়ায় বড় ছেলে জানে না কতক্ষণ লাশ পড়ে আছে। এমনকি বাড়িতে থাকা মানসিক অসুস্থ বড় মেয়েটিও তার মায়ের মৃত্যুর কথা শোনেনি। ছোট ছেলে গ্যাংটক থেকে বাড়িতে আসার পর মায়ের মৃত্যুর খবর জানা গেল। ছোট ছেলে বাড়িতে পৌঁছে জানালা দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখল। মায়ের পচনশীল লাশ বিছানায় পড়ে আছে। বৃদ্ধার শরীর পচে গেছে। সে দৃশ্য দেখার পর আর কিছু করার ছিল না।

তিন সন্তানের মা অনুপমা দত্ত নিঃশব্দে চলে গেলেন, কিন্তু ৫৫ বছর আগে, যোড়হাটের ধাওয়াপুখুরিতে তার বাড়ি দুটি ছেলে ও এক মেয়ের ডাকে ভরে গিয়েছিল। অনুপমা দত্ত তার তিন সন্তানকে লালন-পালন ও বড় করার জন্য তার সোনালী সময় উৎসর্গ করেছিলেন। দুই ছেলেকে বড় মানুষ করতে চেয়ে ছিলেন। চাওয়া মত বড় করেছিলেন দত্ত। বড় হলে এমনটা ঘটবে তিনি হয়তো স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। বড় ছেলে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় বসতি স্থাপন করেন। গ্যাংটকে ছোট ছেলে।

৭৫ বছর বয়সী মা তার মানসিক অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে যোড়হাটের ধাওয়াপুখুরিতে পোড়া বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু যে লালনপালন করে বড় করেছিলেন তাঁর প্রতি কারোরই এত সময় নেই। তার ছেলে, যিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকেন, খুব কমই তার মাকে দেখতে আসেন। গ্যাংটকের ছোট ছেলে প্রতি তিন মাস পর মাকে টাকা দিতে আসে। অনুপমা দত্ত তার ছোট ছেলের দেওয়া টাকা দিয়ে নিজেই এক মুঠো ভাত রান্না খেয়ে এতদিন বেঁচে ছিলেন। মায়ের জন্য কোন কাজের মহিলাও রেখে দেয়নি। এমনকি মাকে মোবাইল ফোন দেয়নি দুই উচ্চ শিক্ষিত ছেলে। মা, যিনি তার মানসিক অসুস্থ মেয়ের সঙ্গে থাকেন, এমনকি তার দুই ছেলে প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও খবর নেয়নি।

কনিষ্ঠ পুত্র তিন মাস পর গ্যাংটক থেকে বাড়িতে এসে মাকে জীবিত খুঁজে পায়নি। একই পরিবারের মানসিক অসুস্থ মেয়েটি যখন তার মা নীরবে জীবনের জাদু ছেড়ে চলে যায় তখন তার নিজের অনুভূতিতে নিমগ্ন হয়। দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে জীবনে বহু স্বপ্ন লালনপালন করা মহিলার একাকি মৃত্যুকে ভাবিয়ে তুলেছে আধুনিক সমাজকে।

Author

Spread the News