অসমে সিএএ অপ্রাসঙ্গিক, এনআরসি ছুটদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিক সরকার : বিডিএফ

বরাক তরঙ্গ, ১৬ মার্চ : সম্প্রতি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের নিয়মনীতি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং এই নিয়ে বিতর্ক চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসামে এই আইন অপ্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।

এদিন সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে গিয়ে বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, অসমে ১৯৭১ এর পর আগত তথাকথিত শরণার্থী এবং অনুপ্রবেশ কারীর সংখ্যা নগণ্য। যদি তা না হত তাহলে সরকার এতদিন এনআরসি প্রক্রিয়াকে ঝুলিয়ে রাখত না। যে লাখ লাখ বাংলাদেশি ক্রমাগত অসমে ঢুকছে বলে দীর্ঘ দুই দশক ধরে আন্দোলন হয়েছে এই রাজ্যে, তাতে শুধু কিছু ছাত্রনেতা রাজনৈতিক নেতা হয়ে ব্যাক্তিগত আখের গুছিয়েছেন। কিন্তু এই রটনা যে সারশূন্য এনআরসি প্রক্রিয়া তা প্রমান করে দিয়েছে। যে ১৯ লক্ষ এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাননি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিলে তাঁদের অধিকাংশই নাগরিকত্বের প্রমান দিতে সক্ষম হবেন কারণ এই তালিকায় এমন প্রচুর রয়েছেন যাদের পরিবারের সদস্যদের নাম তালিকায় ইতিমধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ছেলের বা মেয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাবা মায়ের নাম আসেনি এরকমও প্রচুর উদাহরণ রয়েছে। নামের বা পদবীর সামান্য ভুলের জন্যও অনেকের নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের নাগরিকত্ব প্রমানিত হবে। তবে তারপরও কিছু সংখ্যক থাকবেন যাদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র নেই। জয়দীপ বলেন তার মানে এরা মোটেই অনুপ্রবেশকারী বা শরণার্থী নন, মূলতঃ প্রান্তিক,গরীব ও অশিক্ষিত হবার জন্য তাঁরা প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ বা সংরক্ষণ করতে পারেননি।

জয়দীপ বলেন, এবার সিএএ বিধিনিয়ম যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাতে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে কাউকে এই আইনের অধীনে নাগরিকত্বের আবেদন করতে হলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান সরকারের জারি করা কোন নথি দেখাতে হবে। তিনি বলেন, ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ভারতে থাকা সত্ত্বেও ভারত সরকারের নথি দেখাতে পারছেন না তিনি কি করে  অন্য দেশের নথি দেখাবেন ? সাধারণ বুদ্ধিতে এটা কি সম্ভব বলে মনে হয় ? তিনি বলেন, যদি ধরেও নেওয়া যায় যে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে কেউ আসামে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁর পক্ষে এসব নথিপত্র নিয়ে আসা সম্ভব কি ? বা যদি নিয়েও আসেন তাহলেও তো তার পক্ষে এসব নথিপত্র বিনষ্ট করার সম্ভাবনাই বেশি কারণ এসব পুলিশ প্রশাসনের নজরে আসলে তার বিপত্তি হতে পারে। জয়দীপ বলেন, তাই এই ধরনের নিয়মনীতি  সম্পুর্ন অবাস্তব ও হাস্যকরও বটে।

বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক এদিন আবারও বলেন যে  ১৯৭১ এর পর আসামে আসা শরণার্থীদের সংখ্যা নগণ্য। তাই আসামে এই আইনের কোন প্রাসঙ্গিকতা নেই। তিনি বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও প্রকারান্তরে একই কথা বলেছেন। জয়দীপ বলেন যদি এই ব্যাপারে সরকারের সৎ উদ্দেশ্য থাকে তবে এনআরসির বাকি প্রক্রিয়া অবিলম্বে শেষ করুক সরকার। এবং এরপর যারা বাদ যাবেন তাঁদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। ভিত্তি হোক ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা।কারণ এদের মধ্যে যেমন অধিকাংশই বাঙালি হিন্দু হবেন, তেমনি এটাও মনে রাখতে হবে এদের অধিকাংশই শরনার্থী বা অনুপ্রবেশকারী নন। তাঁরা শুধু প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ বা সংরক্ষণ করতে পারেননি ।

তিনি বলেন, তাই এই রাজ্যের জন্য সিএএ নয় সরকারের মানবিক দৃষ্টি ভঙ্গি জরুরী। জয়দীপ বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে এন আরসি ছুটদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার প্রতিশ্রুতি দিক সরকার। একই সঙ্গে আসামে ডি ভোটার, ডিটেনশন, এন আর সির সমস্যা চিরতরে শেষ করতে এদিন সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিডিএফ এর পক্ষ থেকে আহ্বায়ক মিনহাজ লস্কর এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।

Author

Spread the News