ইমরানের দেহ কবর থেকে তুলল পুলিশ, গ্রেফতার স্ত্রী ও প্রেমিক, ধলাইজুড়ে উত্তেজনা

রাজীব মজুমদার, ধলাই।
বরাক তরঙ্গ, ২১ আগস্ট : রাজনগর- খুলিছড়ার নবনির্বাচিত সভাপতি ইমরান হোসেন বড়ভূইয়ার রহস্যজনক মৃত্যুতে কাঁপিয়ে দিল গোটা দক্ষিণ ধলাই। বুধবার রাতে স্ত্রী প্রেমিক সহ চার আটক করার পর বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা নাগাদ ইমরানের দেহ কবর থেকে তোলা হল। ম্যাজেস্ট্রেট সিদ্ধার্থ কুমার, প্রবেশনারি ডিএসপি দিলরাজ পাঠক ও ধলাই ওসি কুলচন্দ্র হুজুরির উপস্থিতিতে কবর থেকে তোলা হয় ইমরানের দেহ। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য শিলচর মেডিক্যালের মর্গে পাঠানো হয়।

উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট ভোরে নিজের বাড়ি থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ইমরানকে। প্রথমে স্ত্রী রিনা দাবি করেছিলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। পরিবার ও গ্রামবাসী প্রথমদিকে তা মেনে নিলেও ইমরানের স্ত্রীর পরকীয়ার গুঞ্জন ক্রমেই সন্দেহ বাড়ায়। ময়নাতদন্ত না হওয়ায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়। শুধু  তা নয় স্বামীর মৃত্যুর চারদিন পরই রিনা তার সম্পত্তির ভাগ চায়। সব মিলিয়ে সন্দেহ বেড়ে উঠে ভাই ও বন্ধুদের কাছে। শেষ পর্যন্ত তারাই বিজু আটকে পুরো কাণ্ডটি ফাঁস করেন।

ইমরানের ভাই নাগিব বড়ভূইয়া এবং তার দুই বন্ধু রাহুল আহমেদ লস্কর ও বচন লস্করের তৎপরতায় রিনা ও বিজুর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং ধরা পড়ে। ম্যাসেজে যেখানে রিনা বিজুকে আশ্বস্ত করে লিখেছিলেন— ইতিমধ্যে কবরের মৃতদেহ পৌঁছে গিয়েছে, এখন আর কোনও টেনশন নেই।” এই তথ্য হাতে পেয়ে তারা সরাসরি পুলিশকে জানান। জেরায় বিজু খুনের কথা স্বীকার করে বলেও এক সূত্রে জানা যায়।

এ দিকে, এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই দক্ষিণ ধলাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উত্তেজিত জনতা ইমরানের বাড়িতে অবস্থান করা ইমরানের  শ্বশুর বাবুল উদ্দিন লস্কর, শ্যালক সাদিক আহমদ লস্কর ও শ্যালিকাকে আটকে মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করলেও জনতার আক্রোশ থেকে রক্ষা পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। জনতা ওই রাতে শ্বশুরের বোলেরো ও শ্যালকের বেলেন গাড়ি ভাঙচুর করে।

আজ ভোরে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ ধলাই থানার দিকে মিছিল নিয়ে রওনা দেয়। অফিসার ইনচার্জ কুলেন্দ্র হুজুরি ভাগা বাজারে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্ষুব্ধ জনতা ভাগা-শেরখান সড়কের মোড়ে ৩০৬ নম্বর শিলচর-আইজল জাতীয় সড়ক অবরোধ করে “দোষীদের ফাঁসি চাই” স্লোগানে ফেটে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ চলার পর পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্নের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা।

রিনা বেগম বড়ভূইয়া ও তার প্রেমিক বিজু লস্কর মিলে পরিকল্পিতভাবে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ তুলেন। ইতিমধ্যেই দু’জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আটক রয়েছেন ইমরানের শ্বশুর, শ্যালক ও জেষ্ঠ শ্যালিকা।

Spread the News
error: Content is protected !!