পুঁজিবাদকে পরাস্ত করতে না পারলে শ্রমিকদের মুক্তি আসবে না : স্বপন ঘোষ
এআইইউটিইউসি-র অসম রাজ্য ভিত্তিক শ্রমিক অভিবর্তন শিলচরে অনুষ্ঠিত
বরাক তরঙ্গ, ৪ ডিসেম্বর : শ্রমিক রাজ কায়েম করার উদ্দেশ্যেই সম্মেলনের আয়োজন করছে সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠন এআইইউটিইউসি। বুধবার শিলচরের গান্ধীভবন প্রেক্ষাগৃহে সংগঠনের অসম রাজ্য ভিত্তিক শ্রমিক অভিবর্তনের প্রকাশ্য সমাবেশে এ কথা বলেন সহসভাপতি স্বপন ঘোষ। তিনি বলেন, এই সম্মেলন থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হবে ভবিষ্যতে শক্তিশালী শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার। তিনি শ্রমিক সংগঠন ও আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ১৯২০ সালে দেশে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠেছিল। লালা লাজপত রায় ছিলেন শ্রমিক সংগঠনের প্রথম সভাপতি। স্বাধীনতা আন্দোলনে শ্রমিক সংগঠনের বিশেষ ভূমিকা ছিল। বাল গঙ্গাধর তিলক, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতারা শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। লেনিন দেখিয়েছিলেন যে শ্রমিকদের শুধু মজুরি বৃদ্ধির জন্যই লড়াই করলে চলবে না। শ্রমিক আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হবে শ্রমিক রাজ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, আজ কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের সরকার শ্রমিকদের বহু রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। অসমেও একের পর কলকারখানা বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে নামে বহু শ্রমিক সংগঠন থাকলেও দাবি আদায়ের মতো শ্রমিক আন্দোলন গড়ে উঠছে না। কারণ পুঁজিবাদকে পরাস্ত করতে না পারলে শ্রমিকদের মুক্তি আসবে না। তিনি শ্রমিক আন্দোলনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার আহ্বান জানান।

শ্রমিক অভিবর্তনের অন্যতম বক্তা কান্তিময় দেব বলেন, কার্ল মার্কস প্রথম শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির পথ কি হবে তা ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছিলেন। কার্ল মার্কস শ্রমিকদের শোষণের কারণ এবং এর থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেন শ্রমিকদের আগে স্থায়ী কাজ জুটত এখন তাঁদের অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাপক শ্রমিক ছাটাই করছে বিভিন্ন দেশের পুঁজিপতিরা। আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের কায়িক শ্রমের বোঝা কমিয়ে দেয়, তা শ্রমিকদের স্বার্থের পরিপন্থী নয়। কিন্তু দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা যেহেতু পুঁজিপতিদের হাতে তাই তারা তাদের মুনাফা লাভের স্বার্থে তা ব্যবহার করছে। তিনি বলেন সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাই শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির একমাত্র পথ। তিনি সবাইকে তীব্র শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। প্রকাশ্য সম্মেলনের শুরুতে অভ্যর্থনা কমিটির চেয়ারম্যান সুব্রতচন্দ্র নাথ প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন। এরপর প্রখ্যাত জননেতা অসিত ভট্টাচার্যের সম্মেলন উপলক্ষে প্রেরিত লিখিত বার্তা পাঠ করে শুনানো হয়।

এ দিন বেলা সাড়ে এগারোটায় পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের সর্বভারতীয় কমিটির সহসভাপতি স্বপন ঘোষ এবং শহিদ বেদীতে মাল্যার্পন করে শ্রদ্ধা জানান সংগঠনের অসম রাজ্য কমিটির সম্পাদক আজহার হোসেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উপস্থিত প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক প্রতিনিধিরা অভিবর্তন শুরুর প্রাক্কালে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্লেকার্ড হাতে নিয়ে একটি মিছিল করেন। মিছিলটি গান্ধীভবন থেকে বের হয়ে সেন্ট্রাল রোড, নরসিংটোলা, পার্ক রোড হয়ে পুনরায় গান্ধীভবনে পৌঁছায়।

বিকেলে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সম্মেলনে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রতিনিধিরা সম্পাদকীয় প্রতিবেদন সহ বিভিন্ন প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন। প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট জননেত্রী চন্দ্রলেখা দাস। তিনি বিপ্লবী শ্রমিক সংগঠনকে ভবিষ্যতে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। প্রতিনিধি সম্মেলনে থেকে আগামী ১৫, ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিতব্য এআইইউটিইউসি’র সর্বভারতীয় সম্মেলনের প্রতিনিধি নির্বাচন এবং সংগঠনের অসম রাজ্য কমিটি গঠিত হয়। অভিবর্তনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অরুণাংশু ভট্টাচার্য, প্রদীপ মহাপাত্র, অজিত আচার্য, প্রমোদ ভাগবতী, মাধব ঘোষ, ভবতোষ চক্রবর্তী, হানিফ আলি সেখ প্রমুখ।
