“দুর্নীতি করার শিক্ষা কখনও দিইনি, আইন যেমন শাস্তি দেবে, তেমনই আমি চাই” নুপুরের বাবা

বরাক তরঙ্গ, ১৯ সেপ্টেম্বর : প্রতিজন মা বাবা তার সন্তান যেন উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। আর এই স্বপ্ন সাকার করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। ঠিক তেমনি দুর্নীতিগ্রস্ত এসিএস অফিসার নুপুর বরার বাবাও এমনটাও চেয়েছিলেন। ভাল মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছিলাম, দুর্নীতির জন্য নয় –নুপূর বরার বাবা কানারাম বরার আবেগঘন মন্তব্য করলেন।

দুর্নীতিগ্রস্ত এসিএস আধিকারিক নুপূর বরার বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের মাঝেই আবেগপ্রবণ হয়ে মুখ খুললেন তাঁর বাবা, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কানারাম বরা। তিনি স্পষ্ট জানালেন, “আমি ওকে ছোট থেকে পড়াশোনা করিয়েছি, ভালো মানুষ হতে শিখিয়েছি। কিন্তু দুর্নীতি করার শিক্ষা কখনও দিইনি। আইন যেমন শাস্তি দেবে, তাই হওয়াই আমি চাই।”

"দুর্নীতি করার শিক্ষা কখনও দিইনি, আইন যেমন শাস্তি দেবে, তেমনই আমি চাই” নুপুরের বাবা

কানারাম বরা আরও জানান, তিনি কোনওদিনই মেয়ের দুর্নীতির আঁচ পাননি। নিজের সংসারে নেমে আসা নানা দুর্যোগের মধ্যেই তিনি দিন কাটাতেন। প্রায় এক বছর আগে তাঁর স্ত্রী তথা নুপূরের মা আত্মহত্যা করেছিলেন।

নুপূরের ছিল এক কনিষ্ঠ ভাই। মাদকাসক্ত সেই ছেলেটি তিন মাস আগে মারা যায়। ছেলের মৃত্যুর পর থেকেই কানারাম বরা গোলাঘাট শহরের মূল বাড়ি ছেড়ে কাছাকাছি একটি ভাড়া-বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। মাঝে মাঝে তিনি নিজ বাড়িতে খোঁজখবর নিতে যেতেন।

"দুর্নীতি করার শিক্ষা কখনও দিইনি, আইন যেমন শাস্তি দেবে, তেমনই আমি চাই” নুপুরের বাবা

গোলাঘাটের এসবিআই ব্যাঙ্কে থাকা লকার নিয়ে কোনও তথ্য তাঁর জানা নেই বলেও তিনি জানান। সেই লকারের চাবি নুপূরের কাছেই থাকত বলে উল্লেখ করেন। অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক গোরেশ্বর মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর তিনি গোলাঘাটে ফিরে যান।

মেয়ের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে গভীর লজ্জা প্রকাশ করেন তিনি। শুক্রবার সকালে মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে ভিজিল্যান্সের টিম নুপূরের পৈতৃক বাড়িতে তল্লাশি চালায়। ইতিমধ্যেই নুপূরের বিভিন্ন জায়গায় চালানো তল্লাশিতে সিএম ভিজিল্যান্স উদ্ধার করেছে নগদ ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা এবং বহু কোটি টাকার সোনা-হীরার গয়না।

শুক্রবার নুপূর পুলিশের জিম্মা শেষ করবে। এর মধ্যেই গরৈমাড়ি রাজস্ব সার্কলের এক লাটমণ্ডলকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে, যিনি অভিযোগ অনুযায়ী জমি সংক্রান্ত কাজের জন্য ঘুষ নিয়েছিলেন। সমান্তরালে নুপূরকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ গোরৈমাড়ি রাজস্ব কার্যালয়ে অভিযান চালায়।

উল্লেখ্য, গোটা তদন্ত প্রক্রিয়ার উপর নিবিড় নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। দুর্নীতি দমন শাখাকে নুপূরের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমোদন তিনি গত ৭ আগস্ট ২০২৫ তারিখে দেন। অর্থাৎ প্রায় এক মাস আগে ফাইল নম্বর CMS(V) 19/2025 মারফত নুপূরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

নুপূর বরা ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে গরৈমাড়ি রাজস্ব সার্কল অফিসার হিসেবে যোগদান করেছিলেন। তার আগে তিনি বরপেটা রাজস্ব সার্কলে কর্মরত অবস্থায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেই অনিয়মের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন লাটমণ্ডল সুরজিত ডেকা।

Spread the News
error: Content is protected !!