হিন্দুধর্মকে বিশ্বের “প্রাচীনতম ধর্মবিশ্বাস” বলা হয় : দীপায়ন চক্রবর্তী
দীপ দেব, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ২০ জানুয়ারি : শিলচর সোনাই রোডের মহাপ্রভু সরণীস্থিত বহু প্রতীক্ষিত শিলচর শঙ্করমঠ ও মিশনের নবনির্মিত পার্থসারথি শিব মন্দিরের উদ্বোধন হল। রবিবার মন্দিরের উদ্বোধন করেন বৈদিক মন্ত্রপাঠ ও অখণ্ড প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গীতা প্রচার সংস্থা এবং শঙ্করমঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। সঙ্গে ছিলেন দেশ-বিদেশ থেকে আগত সাধু-সন্ত সহ শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী। এদিন সকাল থেকে নব নির্মিত পার্থসারথি শিব মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং শঙ্কর মঠ ও মিশনের যোগাচার্য পরমহংস স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরি মহারাজের ১১৬তম জন্মজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে ব্রহ্মমুহূর্তে মঙ্গলারতি, শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠ, শ্রীরুদ্রাভিষেক, গীতা পাঠ, হনুমান চালিশা পাঠ, রাম-নাম স্রোত্র পাঠ করেন মিশনের প্রশিক্ষণার্থী ছাত্রছাত্রীরা। এ ছাড়া দুঃস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠিত সনাতনী ধর্ম সম্মেলন। এতে উপস্থিত আন্তর্জাতিক গীতা প্রচার সংস্থা এবং শংকর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ, ভোলা গিরি আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী মাধবানন্দ গিরি মহারাজ, শঙ্কর মঠ ও মিশনের বারাসত শাখার কর্মাধ্যক্ষ স্বামী পল্লবানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ, স্বামী প্রকাশানন্দ গিরি মহারাজ, পরিতোষানন্দ ব্রহ্মচারী, যুক্তেশ্বরানন্দ ব্রহ্মচারী, স্বপ্রকশানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ, রামেশ্বরানন্দ ব্রহ্মচারী প্রমুখ। কমিটির পক্ষ থেকে উত্তরীয় ও স্মারক তুলে দিয়ে সম্মান জানানো হয়।
সনাতন ধর্ম সম্মেলনে শিলচর শঙ্করমঠ ও মিশনের কর্মাধ্যক্ষ বিজ্ঞানানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ বলেন, হিন্দুধর্মের ইতিহাসকে প্রায়শই বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্যায়টি হল প্রাক্-বৈদিক যুগ এবং এই যুগের মধ্যেই সিন্ধু সভ্যতা ও স্থানীয় প্রাগৈতিহাসিক ধর্মবিশ্বাসের কালটিকে ধরা হয়ে থাকে।সেই সনাতন সন্তানদের আত্মবলিদানের উপর ভিত্তি করেই দেশ-জাতির উন্নতি ঘটেছে। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী বলেন, সনাতন ধর্ম ঈশ্বরমুখী প্রচেষ্টার জন্য অন্যদের একচেটিয়াভাবে কোনো পথ নির্ধারণ করে না। এমনকি একজন নাস্তিকও একজন হিন্দু বা সনাতনী, যে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না কিন্তু ধর্মের পথে চলে। ধর্মের আসল কাজ হল মানুষকে আধ্যাত্মিক চেতনার জন্য প্রস্তুত করা। যেসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে উপাসনার স্থান, ধর্মগ্রন্থ, গুরু এবং গাইড এবং প্রয়োজনীয় অনুশীলনগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সেগুলি ধর্মচর্চার এবং এইভাবে আধ্যাত্মিক চেতনা অর্জনের সহায়ক, যেমন শঙ্কর মঠ ও মিশন। হিন্দুধর্মকে বিশ্বের “প্রাচীনতম ধর্মবিশ্বাস” বলা হয়। তিনি এই শঙ্করমঠ ও মিশনে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে একজন বিধায়ক হিসাবে নিজ দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উক্ত মন্দিরের নির্মাণের কাজে সরকারি অর্থ লাগাতে পেরে নিজ জীবনকে ধন্য বলে মনে করেন। আন্তর্জাতিক শঙ্কর মঠ ও মিশনের প্রধান অধ্যক্ষ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, সনাতন ধর্ম মানব জীবনের সমস্ত ক্রিয়াকলাপ, ব্যক্তি এবং সমষ্টিগত নির্বিশেষে। একইভাবে, রাজধর্ম হল সনাতন ধর্মের একটি কার্যকরী শাখা, যা শাসকের ধর্মকে সংজ্ঞায়িত করে, যা আধুনিক সময়ে সরকারের আকর্ষণ হওয়া উচিত।
ভোলাগিরি আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী মাধবানন্দ গিরি মহারাজ বলেন, সনাতন ধর্মের অস্তিত্ববিহীন মানবসমাজ কল্পনা করা যায় না।প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সব সমাজেই সনাতন ধর্মের প্রভাব দেখা যায়।ব্যক্তি ও সমাজজীবনে সনাতন ধর্মের প্রভাব ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয়েই হতে পারে। সনাতন ধর্মের ইতিবাচক ভূমিকার মধ্যে হল সনাতন ধর্ম মানুষকে সুনিয়ন্ত্রিত করে, নিরাপত্তা বোধ সৃষ্টি করে, সমাজবদ্ধ মানুষের মধ্যে সনাতন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের সৃষ্টি করে, সনাতন ধর্ম জনসেবামূলক কর্মে মানুষ ও সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে, প্রকৃত ধর্মবোধ সংহতি সৃষ্টির কাজে সাহায্য করে। পরবর্তী সময়ে অন্যান্যদের মধ্যে মিশনের পরিচালনা কমিটির সম্পাদক বিপ্লব দেব বক্তব্য দেন।