নারায়নপুরে হাতেগোনা হিন্দু ভোট, আর বিশাল ব্যবধানে জয়ী মহীতোষ
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ১৪ মে : ভারত-বাংলা সীমান্ত পাথারকান্দি কেন্দ্রের অন্তর্গত নারায়নপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২ নম্বর ওয়ার্ডের এই ভোট যুদ্ধ ছিল অঙ্কের হিসেবে অসম্ভব, কিন্তু মানবিকতায় এক অবিশ্বাস্য জয়যাত্রা। ওয়ার্ডটির মোট ভোটার সংখ্যা ৮৭৮, যার মধ্যে ৮৭০ জনই মুসলিম সম্প্রদায়ের এবং মাত্র ৮ জন হিন্দু। এই ভোটের গাণিতিক সমীকরণে যদি কেউ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের প্রার্থীকে বিজয়ী ভাবেন, তাতে আশ্চর্য কিছু ছিল না। কিন্তু বাস্তবতা আবারও প্রমাণ করল ভারতবর্ষ শুধুমাত্র সংখ্যা নির্ভর দেশ নয়, এ দেশ মানুষের হৃদয়ের স্পন্দনে চলে।
এই ওয়ার্ডে প্রার্থী ছিলেন দুজন মহীতোষ ভট্টাচার্য ওরফে পার্থ, একজন হিন্দু প্রার্থী; অপরজন রহিম উদ্দিন, একজন মুসলিম প্রার্থী। সাধারণ ধারণায় হয়তো অনেকেই মনে করেছিলেন সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের প্রার্থীই হবেন বিজয়ী। কিন্তু ভোটের ফলাফল ছিল ঠিক উল্টো। পার্থ বাবু পেয়েছেন ৪১১ ভোট, আর রহিম উদ্দিন পেয়েছেন ২১৪ ভোট। নষ্ট হয়েছে ২৫টি ভোট।

এই ফলাফল শুধুই একটি সংখ্যা নয়, এটি একটি বার্তা। এটি এক প্রমাণ ভালোবাসা, আস্থা ও মানবিকতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সম্পর্ক কতটা দৃঢ় হতে পারে। নারায়নপুরের মানুষ প্রমাণ করলেন ধর্ম নয়, চরিত্র, কর্ম, আর জনসেবাই হোক নির্বাচনের আসল মানদণ্ড।

এই নির্বাচনী ফলাফল জানার পর পুরো এলাকায় শুরু হয় আনন্দোল্লাস। ভোটের ফল ঘোষণা হওয়া পর থেকেই গ্রামের জনগণের মধ্যে এক আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ওয়ার্ডের শত শত মানুষ ফুল, হাসি আর ভালোবাসা নিয়ে ছুটে আসেন বিজয়ী প্রার্থীর বাসভবনে। পুরো এলাকা যেন উৎসবের রূপ নেয়। এ যেন এক স্বতঃস্ফূর্ত সম্প্রীতির কার্নিভাল। এই জয় প্রমাণ করে দিয়েছে ৮ বনাম ৮৭০—ফারাক শুধুই সংখ্যায়, মননে নয়! ধর্ম নয়, মানুষের পাশে থাকার রাজনীতি জয়ী হয়েছে! ভোট দিলো মানুষ, জয় পেল মানবতা! মহীতোষবাবু নিজে এই জয়কে ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং মানুষের ভালোবাসা ও ঐক্যের ফলাফল বলে বর্ণনা করেছেন।
