ই-রিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারালেন হাইলাকান্দি ডিসি অফিসের কর্মী সৌমেন ঘোষ

বরাক তরঙ্গ, ১৮ মে : শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে প্রাণ হারালেন হাইলাকান্দি জেলাশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী সৌমেন ঘোষ (দীপ)। হাইলাকান্দি শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ড রামনারায়ন ট্যাঙ্ক রোডের বাসিন্দা বাবুল ঘোষের বড় পুত্র সৌমের অকাল মৃত্যুতে এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পাশাপাশি হাইলাকান্দি শহরে অবৈধ ভাবে লাইসেন্সহীন ই-রিকশার দৌরাত্ম্যে একের পর এক দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় জেলা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করেন শহরবাসী ভুক্তভোগী জনগণ।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী শুক্রবার রাত আনুমানিক দশটা নাগাদ শহরের কলেজ রোডে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বছর ৪১ এর যুবক সৌমেন। সেসময়  রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় সবজি বোঝাই এক ই-রিকশা সৌমেনকে সজোরে ধাক্কা মারে। সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে গেলে মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে রক্তাক্ত অবস্থায় সেখান থেকে উদ্ধার করে হাইলাকান্দি সিভিল হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয়রা। কিন্তু আঘাত গুরুতর থাকায় রাতেই সৌমেনকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

ই-রিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারালেন হাইলাকান্দি ডিসি অফিসের কর্মী সৌমেন ঘোষ

তবে মেডিক্যাল কলেজে আইসিইউ ও ভেন্টিলেশনের কোন বেড খালি না থাকায় সৌমেনকে কোনও উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয়নি বলে তাঁর সহকর্মীরা অভিযোগ করেছেন।

ই-রিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারালেন হাইলাকান্দি ডিসি অফিসের কর্মী সৌমেন ঘোষ

শনিবার সকাল বেলা সৌমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিচিত মহলে শোকের ছায়া নেমে এসে। বিশেষ করে হাইলাকান্দি জেলাশাসক কার্যালয়ের এই কর্মচারীর অমায়িক ব্যাবহার ও পরোপকার করার মানসিকতার জন্য সে ভীষণ জনপ্রিয় ছিল।  তাই দুপর তিনটা নাগাদ শিলচর থেকে মরদেহ হাইলাকান্দির বাড়িতে নিয়ে আসলে কাতরে কাতরে লোক তাদের বাড়িতে গিয়ে ভীড় জমান শেষ দেখার জন্য।

মৃত্যুকালে মা, বাবা, স্ত্রী, বছর দেড়েকের কন্যা, এক ছোট ভাই যৌথ পরিবারের আত্মীয় স্বজন সহ অসংখ্য গুনমুগ্ধ রেখেগেছেন। পরবর্তীতে শেষ যাত্রায় রোটারি ক্লাবের স্বর্গরথ জেলাশাসক  কার্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হলে তখন জেলাশাসকের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলাশাসক ত্রিদিব রায়, অমিত পারভোসা, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিব অফিসার তপন নন্দী সহ কার্যালয়ের সহকর্মীরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। পরবর্তীতে এসএস রোড হয়ে মহাশসান শান্তিবনে নিয়ে শোক মিছিল করে নিয়ে যাওয়ার পথে অনেকেই শ্রদ্ধা জানান। তাঁর শেষ যাত্রায় বিশাল সংখ্যক লোকের উপস্থিতি প্রমাণ করে দিল তিনি কতটুকু সবার প্রিয়পাত্র ছিল। মহাশশানে ও এডিসি ত্রিদিব রায় এবং ডিডিসি এলডেড ফাইরেন সহ কর্মী ও শুভাকাঙ্খীরা উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, সৌমেন ঘোষের অকাল মৃত্যুতে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করেছেন হাইলাকান্দির জেলাশাসক নিসর্গ হিবারে, কাছাড়ের জেলাশাসক রোহনকুমার ঝা, হাইলাকান্দির ডিডিসি এলডেড ফাইরেম, অতিরিক্ত জেলাশাসক ত্রিদিব রায়, অমিত পারবোসা, হোজাইর অতিরিক্ত জেলাশাসক সপ্ততি এন্দ, কার্বি আলং এর অতিরিক্ত জ্যোতির্ময় দৈমারি, মরিগাঁও জেলা পরিষদের সিইও রুথ লিয়াংথাং, কাটলিছড়ার বিধায়ক সুজাম উদ্দিন লস্কর, হাইলাকান্দির বিধায়ক জাকির হোসেন লস্কর, সারা অসম জেলা প্রশাসন কর্মচারী সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে বিক্রমজিৎ চক্রবর্তী, যুব ইউডিএফের রিপন মজুমদার, জেলা বার সংস্থার তরফে আইনজীবী রাজিব হোসেন লস্কর সহ আরও অনেকে। তাছাড়া

সৌমেনকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তার বাড়িতে ছুটে আসেন বিজেপি নেতা সন্দীপন পাল, জেলা বিজেপির অবিসি মোর্চার সভাপতি অভিজিৎ দে, শহর মণ্ডল সম্পাদক রাতুল ভট্টাচার্য, সংস্কৃতি কর্মী শঙ্কর চৌধুরী সহ আরও অনেকে।‌ প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়, প্রাক্তন বিধায়ক রাহুল রায়, বিজেপি সভাপতি স্বপন ভট্টাচার্য, দলের সাধারণ সম্পাদক স্বপন পাল, দলের সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি আমজাদুল হোসেন মজুমদার, গৌতম গুপ্ত, জেলা কংগ্রেস সভাপতি সামস উদ্দিন বড়লস্কর, অসম সাহিত্য সভার সম্পাদক অনিন্দ্য কুমার নাথ, পুরসভার চেয়ারম্যান কল্যাণ গোস্বামী প্রমুখ।

এদিকে, দুর্ঘটনার পর ই-রিকশা চালক পিতা-পুত্রকে আটক করেন স্থানীয় জনগণ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাবা আব্দুল শুক্কুর চৌধুরী ও ছেলে রাহাতুল চৌধুরী ছিলেন ই-রিকশায়। পুত্র রাহাতুলকে পেছনে বসিয়ে বাবা আব্দুল শুক্কুর চৌধুরী ই-রিকশা চালাচ্ছিলেন। ঘটনার পর উভয়কেই সদর থানায় নিয়ে আসা হয়।

Author

Spread the News