বন্যায় বিপর্যস্ত সপ্তগ্রাম, হাজার হাজার বিঘা কৃষিভূমি প্লাবিত
রাজীব মজুমদার, ধলাই।
বরাক তরঙ্গ, ১৬ সেপ্টেম্বর : গত দু’দিনের প্রবল বৃষ্টিপাতের জেরে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় দক্ষিণ ধলাইয়ের সপ্তগ্রাম জিপির চারটি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পার্শ্ববর্তী রাজ্য মিজোরামের ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি রুকনী নদী ফুলে-ফেঁপে ওঠায় জল পানিসাগর খাল দিয়ে উল্টো দিকে প্রবাহিত হয়ে এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে সপ্তগ্রাম, আর্যানপুর লোকনাথপুর এবং ইসলামাবাদের হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমি জলের নিচে তলিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল চোখের সামনে নষ্ট হতে দেখে কৃষকরা দিশাহারা।
এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। বহু কৃষকের সদ্য রোপণ করা ধানের চারা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। বর্ষার শুরুতে নতুন করে ফসল ফলানোর যে স্বপ্ন তারা দেখেছিলেন, তা এক লহমায় ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষক করিম উদ্দিন বলেন, “সারা বছরের খাবার এবং উপার্জনের একমাত্র উপায় এই কৃষিকাজ। কিন্তু চোখের সামনে যেভাবে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেল, তাতে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কীভাবে পরিবার চালাব, কীভাবে আগামী মরসুমে আবার চাষ করব, তা ভেবে পাচ্ছি না।” কৃষকদের অভিযোগ, তাদের মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ এর কোনও কৃষি বিমা নেই। ফলে এই ফসল নষ্টের পর আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার কোনো উপায় তাদের হাতে নেই। এমন পরিস্থিতিতে তারা চোখে সর্ষেফুল দেখছেন।

শুধু কৃষিজমি নয়, বন্যার জল বহু মানুষের বাড়িতেও ঢুকে পড়েছে। ঘরের ভেতর জল ঢুকে পড়ায় আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে এবং খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে যাতায়াতের প্রধান রাস্তাগুলোও জলের নিচে তলিয়ে যাওয়ায় জনজীবন সম্পূর্ণভাবে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়া-আসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে যেহেতু অনেক স্কুলে মূল্যায়ন চলছে, তাই এই পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীরা চরম অসুবিধার সম্মুখীন। অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন, বন্যার জলের কারণে তাদের সন্তানদের সময় মত স্কুলে পৌঁছে দিতে পারছেন না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও এখন পর্যন্ত কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, এমনকি একজন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকেও শুরু করে সাংসদ বা বিধায়ক তাদের খোঁজ নিতে আসেননি কেউই। কোনও সরকারি সাহায্য বা ত্রাণও তাদের কাছে পৌঁছায়নি। এমতাবস্থায় চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ত্রাণ ও সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তারা। স্থানীয়রা চান, সরকার যত দ্রুত সম্ভব এই অঞ্চলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করুক। বিশেষ করে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে তারা কিছুটা হলেও এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন।