চৌরঙ্গী সেন্ট্রাল হাসপাতাল সিল করার দাবি, দুই ডাক্তার সহ আটক পাঁচ
অনিতা পাল, কাটিগড়া।
বরাক তরঙ্গ, ১২ জুলাই : কাটিগড়ার চৌরঙ্গী সেন্ট্রাল হাসপাতালের একের পর এক অব্যবস্থা ও গাফিলতির ঘটনায় পেশাকে কলঙ্কিত করা হচ্ছে বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। চিকিৎসা নয়, এখানে চলছে বাণিজ্য এমনই তোপ দাগছেন ভুক্তভোগীরা।
চিকিৎসা পরিষেবার নামে লুটপাট চলছে। গত তিন মাসে অন্তত চারটি এমন ঘটনা ঘটেছে এই হাসপাতালে। হাসপাতাল সিল করার দাবি তুললেন জনতা।

শুক্রবার বছর ২৩ এর প্রসূতির মৃত্যু ঘটলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। হাজার লোক মৃত গৃহবধূর পাশে দাঁড়িয়ে হাসপাতালের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। অবশেষে পুলিশ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক সহ পাঁচজনকে আটক করেছে। রাত সাড়ে নটা নাগাদ সেন্ট্রাল হাসপাতালের ইনচার্জ, ডাঃ সপ্তর্ষি চক্রবর্তী, ডাঃ তাসমিন সুমাইয়া লস্কর, জেবি দেব, রমেশ পাল, আশরাফুল হোসেন, অনিমেষ দাস সহ সেন্ট্রাল হসপিটেলের অন্যান্য স্টাফের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করা হলে পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে।

এ দিন বিকেলে কালাইন চানপুর এলাকার রমজানা বেগম বড়ভূইয়ার মৃত্যু ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। অভিযোগ, ভুল চিকিৎসা ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে অস্ত্রোপচার চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়। শুক্রবার সকালে রমজানা বেগমকে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি করা হয় চৌরঙ্গী সেন্ট্রাল হাসপাতালে। বিকাল ৩টা নাগাদ তিনি ফুটফুটে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। তবে রমজানার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে এবং এই ঘটনার জেরে রীতিমতো তাণ্ডব শুরু হয় হাসপাতাল চত্বরে। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, রমজানাকে ভুয়ো আশ্বাস দিয়ে ভর্তি করা হয় এবং কোনও অভিজ্ঞ গাইনোকোলজিস্ট বা সার্জন ছাড়াই অস্ত্রোপচার চালানো হয়। পরিবারের দাবি, দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ডাঃ তাসনিম সুমাইয়া লস্কর (আরএমও) ও ডাঃ সপ্তর্ষি চক্রবর্তী ছিলেন অস্ত্রোপচারের সময়। অপারেশনের কিছু সময়ের মধ্যেই রমজানার মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যরা স্পষ্টতই অভিযোগ তোলেন যে, অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অনুপস্থিতি এবং চিকিৎসায় চরম গাফিলতির ফলেই মৃত্যু হয়েছে রমজানার। তাঁরা মরদেহ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন— “যেভাবে রোগীকে ভর্তি করেছিলাম, সেই অবস্থাতেই রোগী চাই। মৃত্যুর দায় নিতে হবে হাসপাতালকে।”

এদিকে, মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় জনতা ও রমজানার পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে জড়ো হয়ে তীব্র বিক্ষোভ দেখান। রীতিমতো ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা ও স্লোগান উঠে আসে হাসপাতালের বিরুদ্ধে। “এটি হাসপাতাল নয়, কসাইখানা!”— এমনই অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেন কাটিগড়ার সার্কল ম্যাজিস্ট্রেট ড. রবার্ট টুলোর, ওসি জোসেফ ভি কেইভম এবং কালাইন, গুমড়া সহ আশপাশের থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ কাছাড় পুলিশের ডিএসপি এম বরা ছুটে আসেন। ছুটে আসে কমান্ডো বাহিনীও। পুরো হাসপাতাল চত্বর পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাটোপে চলে যায়।

এদিকে, যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে না ততক্ষন রমজানার মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে সরানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন পরিবার সহ উত্তেজিত জনতা। দফায় দফায় সিও, পুলিশের ডিএসপির সঙ্গে আলোচনা শেষে পাঁচজনের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয় এবং আটক করা হয়।
তাছাড়াও সেন্ট্রাল হসপিটেলকে সিল করার দাবি উঠলে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন সার্কল ম্যাজিস্ট্রেট ড. টুলোর।