পাথারকান্দিতে জনজাতি পরিবারের স্বধর্মে প্রত্যাবর্তন

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ১১ মাৰ্চ : পাথারকান্দি বিধানসভার বাজারিছড়া থানা অধীন চন্দ্রপুর গ্রামে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো সকলে। এই গ্রামের জনজাতি সম্প্রদায়ের এক মা, তাঁর কন্যা ও এক শিশু পুত্র আনুষ্ঠানিকভাবে হিন্দু ধর্মে প্রত্যাবর্তন করলেন।

পবিত্র বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ ও শুদ্ধিকরণ পূজার মধ্য দিয়ে তাঁদের সনাতন ধর্মে ফিরিয়ে আনা হয়। জানা গেছে, ওই মায়ের নাম খনতে চরেই অপরিবর্তিত থাকলেও, তাঁর কন্যা মেহেরুন নেসা-র নতুন নামকরণ করা হয় রিঙনাকতিং চরেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে রিঙনাকতিং লাভ জিহাদের শিকার হন। এক মুসলিম যুবক হিন্দু পরিচয়ে তাঁকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং পরে বেঙ্গালুরু নিয়ে যায়। দাম্পত্য জীবন শুরুর দিকে সুখের হলেও, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর তাঁর জীবনে নেমে আসে দুর্যোগ। সন্তানের জন্মের পর স্বামীর প্রকৃত ধর্মীয় পরিচয় জানতে পেরে হতবাক হয়ে যান তিনি। এরপর শ্বশুরবাড়িতে শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার।

শেষ পর্যন্ত সন্তানসহ বাপের বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। দীর্ঘ ছয় বছর পর, ধর্ম জাগরণ সমিতির সহায়তায়, মা ও সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে রিঙনাকতিং পুনরায় স্বধর্মে প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।

শুধু রিঙনাকতিং-ই নন, তাঁর মা খনতে চরেই-ও প্রায় দশ বছর আগে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সেখানেও প্রতারণার শিকার হয়ে, অবশেষে নিজের মূল ধর্মে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানান, “আজ আমি সত্যিকারের শান্তি অনুভব করছি। সনাতন ধর্মেই আমার প্রকৃত আশ্রয়।”

ধর্ম জাগরণ সমিতির দক্ষিণ আসাম প্রান্তের সংযোজক অশীত চক্রবর্ত্তী বলেন, “আজ তিনজন ব্যক্তি তাঁদের আসল পরিচয়ে ফিরে এসেছেন। হিন্দু ধর্মের মতো শান্তি অন্য কোথাও নেই। লাভ জিহাদের শিকার হওয়া এবং প্রলোভনে পড়ে ধর্মান্তরিত হওয়া, দুটোই অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা চাই, জনজাতি সম্প্রদায়ের কেউ যেন ধর্মান্তরিত না হন।”তিনি আরও জানান, “যাঁরা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছেন, তাঁদের জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা বন্ধের দাবিতে আমরা পদক্ষেপ নেব।”এই স্বধর্মে প্রত্যাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেনধর্ম জাগরণ সমিতির রামকৃষ্ণ নগর ও শ্রীভূমি জেলার সংযোজক অর্জুন দাস চন্দ্রপুর গ্রাম সমিতির সংযোজক লিলি চরেই রাঙামাটির গ্রাম সংযোজক মানিক চরেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বাজারিছড়া খণ্ড কার্যবাহ সত্যজিত দাস, প্রমেশ দাস, অঞ্জন দাস সহ আরও অনেকে।এই স্বধর্মে প্রত্যাবর্তন শুধু একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের প্রতি এক দৃঢ় প্রত্যয়। সনাতন ধর্মের মূল সুরক্ষা ও আত্মগর্বের পথে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকল।

Author

Spread the News