ভাষিক সংঘাত নির্মূল হলেই অসমের অগ্রগতি সম্ভব
।। প্রদীপ দত্ত রায় ।।
(গৌহাটি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত আইনজীবী)
২ মার্চ : অসমিয়া ভাষা রাজ্যের অনা-অসমিয়া জনগোষ্ঠীর উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার নীতির ফলে যে সংঘাতের পরিবেশ রচিত হয়েছিল এটা রাজ্যের জন্য মঙ্গলজনক ছিল না। একশ্রেণির রাজনীতিক অনভিপ্রেতভাবে এই কাজটি করতে গিয়ে রাজ্যের ভীষণ ক্ষতি করে ফেলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছেন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সঙ্গে বরাকের সংঘাত সৃষ্টির পিছনে ভাষা কেন্দ্রিক বিরোধ প্রধানত দায়ী। বিলম্ব হলেও তার এই বোধোদয় তাকে ধন্যবাদের পাত্র করে তুলেছে। সমস্যার সঠিক কারণ উপলব্ধি করতে পেরে তিনি যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে সমন্বয়ের বার্তা রয়েছে। অসমকে প্রগতিশীল রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ভাষিক বিভেদের বেড়াজাল ছিন্ন করে বৃহত্তর অসমীয়া জনগোষ্ঠী আত্মপ্রকাশ করা খুবই জরুরী। কলাগুরু বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা যে কাজটি শুরু করেছিলেন সেটি পরবর্তীকালে একাংশ উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তির কূট চালে ভেস্তে যায়। ফলে, বিভিন্ন উপজাতি ভাষিক গোষ্ঠী এবং বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতের পরিবেশ রচনা করার পথ সুগম হয়। এই সংঘাতকে ঝুলিয়ে রেখে রাজনীতির ক্ষেত্রে বিবাদমান শক্তিগুলিকে বিভাজিত করে রাজনীতির যে জটিল রসায়ন তৈরি করা হয় তা বৃহত্তর অসমীয়া সমাজের কোন লাভ করতে পারেনি বরং ক্ষতি করেছে। প্রকৃত বুদ্ধিজীবী যারা তারা এখন এই হঠকারী সিদ্ধান্তগুলির বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং চিন্তাবিদও বটে তিনি ভাষিক সংঘাতের বিষয়ে বিবৃতি দিয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এবং এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য যে রাজ্যকে প্রগতির পথে নিয়ে যাওয়া এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন এর জন্য অবশ্যই আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারছি না ।
এখন আসছি, কিভাবে তৈরি হয় ভাষিক সংঘাত। এই সংঘাত তৈরীর পিছনে তৎকালীন শাসক দলেই যে প্রধান ভূমিকা পালন করে তাতে কোন সন্দেহ নেই। অসমে এক ভাষা নীতি প্রণয়নের জন্য ৫৮ সালের গোড়া থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়।১৯৬০ সালের ২৪ অক্টোবর অসম বিধানসভায় ভাষা আইন পাস হয়। এই আইনে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয় গোটা অসমে অসমীয়া ভাষা প্রচলিত থাকবে। এর আগে শিলচরে যে ঐতিহাসিক ভাষা সম্মেলন হয়েছিল সেখানে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে যে প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল তাতে কর্ণপাত করা হয়নি। তৎকালীন অসমের পার্বত্য অঞ্চলের নেতৃবৃন্দের কোন প্রতিবাদ ভ্রুক্ষেপ করেনি বিধানসভার তৎকালীন সদস্যরা। কার্যত ওইদিনই বিধানসভায় বিচ্ছিন্নতার বীজ বপন করা হয়ে যায়। অসমিয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে আইন গোয়ালপাড়া জেলা যা পশ্চিমবঙ্গের অংশ ছিল তাকে অসমে এনে জুড়ে দেওয়া হয়েছে সেখানেও অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার পথ প্রশস্ত হয়ে যায়। পার্বত্য অঞ্চলের নেতারা শংকিত হয়ে পড়েন। এই অসমীয়া প্রভূত্ববাদের বিরুদ্ধে গারো পাহাড়, খাসি পাহাড়, জয়ন্তিয়া পাহাড়, নাগা পাহাড়, মনিপুর, লুসাই পাহাড় ইত্যাদিতে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। সীমিত পরিমাণ হলেও কার্বি আংলং এবং উত্তর কাছাড় পার্বত্য অঞ্চলেও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। পার্বত্য জনজাতিদের মতামতকে উপেক্ষা করার এই সিদ্ধান্ত কেউ মেনে নিতে পারেননি। তৎকালীন অবিভক্ত কাছাড়ে এর ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ভাষা আইন পাস হওয়ার পর থেকেই তৎকালীন কাছাড় অর্থাৎ বরাক উপত্যকা জুড়ে ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে। মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া এই আন্দোলনে এ অঞ্চলের বসবাসকারী মণিপুরি, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, চা জনগোষ্ঠী, নাগা, খাসিয়া সহ অন্যান্য জনজাতি সম্প্রদায় অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। ভাষা আন্দোলন তীব্র রূপ ধারণ করলে ১৯৬১ সালের ১৯ মে ১১ জন সত্যাগ্রহী শিলচর রেল স্টেশনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ নিয়ে মেহরোত্রা কমিশন গঠন করা হলেও এই কমিশনের রিপোর্ট আজ অবধি প্রকাশ্যে আসেনি। এবং সরকারিভাবে আজও ১১ জন সত্যাগ্রহীকে শহিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তবে এই আন্দোলনের পর বিতর্কিত ভাষা বিল প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়ে সরকার।
ফের ১৯৭২ সালে ভাষা সার্কুলার জারি করে অসম মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এই সার্কুলালে সারা রাজ্যে একমাত্র অসমীয়া ভাষায় পঠন-পাঠনের কথা বলা হয়। এই এক ভাষা নীতির বিরুদ্ধে তখন সারা রাজ্যেই গড়ে ওঠে তীব্র আন্দোলন। চার ভাষা সূত্র দাবি তুলে বিভিন্ন সংগঠন একত্রিত হয়। অসমের বাংলাভাষী ছাড়াও বড়ো ও কার্বি, ডিমাসা এবং অন্যান্য উপজাতি ভাষার মানুষও এই আন্দোলনে শামিল হয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সভা সমিতি করে প্রতিবাদ সাব্যস্ত করা হয়। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালি নেতৃবৃন্দ এই সার্কুলার এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে গর্জে ওঠেন। তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠায় সরকার পিছপা হতে বাধ্য হয়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের জারি করা সার্কুলার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সরকারের এক ভাষা নীতির প্রচেষ্টা বিফল হয়ে যায়। এ সময়ে ভাষা নীতির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে বাংলাভাষী নেতাদের মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ দেখেই তখন থেকেই উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তি অসমে বাঙালিবিদ্বেষ গড়ে তুলতে আদা জল খেয়ে নেমে পড়ে ময়দানে। বাঙালিদের হেনস্থা করার জন্য তখন থেকেই উপায় উদ্ভাবনের প্রস্তুতি শুরু হয়। তৎকালীন শাসক দল ইংরেজ শাসকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ নীতি প্রয়োগ করে ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে কাজ করে যেতে থাকে। একাংশ রাজনীতিকদের আধিপত্যবাদের কুফল হিসেবে অসম থেকে সংযুক্ত খাসি পাহাড় জেলা এবং গারো পাহাড় জেলা বিভাজিত হয়ে পৃথক মেঘালয় রাজ্য গঠিত হয়। একইভাবে নাগা পাহাড় জেলাকে কেন্দ্রীয় শাসিত নাগাল্যান্ড এবং লুসাই পাহাড় জেলাকে কেন্দ্রীয় শাসিত মিজোরাম রাজ্য গঠন করা হয়। এর আগেই মনিপুর এবং ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পায়। বর্তমানে এগুলি প্রতিটি স্বতন্ত্র রাজ্য। বরাক উপত্যকা পৃথক রাজ্য গঠনের আন্দোলনের সূতিকাগার হলেও এ অঞ্চল পৃথক কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের মর্যাদা লাভ করতে ব্যর্থ হয়। এর অনেক কারণ রয়েছে। এই পরিসরে তা নিয়ে আলোচনা করার অবকাশ নেই।

ভাষার অধিকার কে কেন্দ্র করে বড়োল্যান্ড এলাকায় আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে পৃথক বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়েছে। একই সঙ্গে মর্যাদা পেয়েছে বড়ো ভাষা। বর্তমানে বড়ো ভাষাকে অসমের সহযোগী রাজ্য ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে অসমীয়া ও বড়ো জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক দূরত্ব অনেকটাই কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষাকে রাজ্য ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি রাজ্যের তিনটি জেলায় মনিপুরী ভাষাকে সহযোগী রাজ্য ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ রাজ্যে ঐক্য সংহতির বাতাবরণকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। রাজ্যে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে অন্যান্য উপজাতি ভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করে দেখছে। এটাও খুবই আনন্দের কথা। কারণ যে কোন মানুষ নিজের মাতৃভাষাক শিক্ষা গ্রহণ করলে তার শিক্ষাটা পূর্ণাঙ্গ হবে এটাই স্বাভাবিক। সরকারের পক্ষ থেকে এইসব পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ইতিহাসের পাঠ নিয়ে বর্তমান সরকারের যুক্ত কর্ণধাররা নিজেদের সংশোধনের পথে পরিচালিত করে রাজ্যে একটি সুস্থির বাতাবরণ তৈরি করার প্রয়াস নিয়েছেন। কিন্তু কেবলমাত্র সরকারি পদক্ষেপ এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হতে পারে না। এ কাজে সামাজিক সংগঠনগুলোকেও যুক্ত করা প্রয়োজন।
অসমের সবচেয়ে বড় সামাজিক সংগঠন অসম সাহিত্য সভা। এই সংগঠনের সঙ্গে কেবল অসমিয়াভাষী জনগোষ্ঠী নয় রাজ্যের বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষও এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। কাজেই সমন্বয়ের ক্ষেত্র রচনার ক্ষেত্রে অসম সাহিত্য সভাকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার প্রয়োজনে এই সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে। অসম সাহিত্য সভা এগিয়ে এসে অসমের বাংলা সাহিত্য সভা, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন , বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন, আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সম্মেলন, কার্বি সাহিত্য সভা , বড়ো সাহিত্য সভা , নেপালি সাহিত্য সভা, ডিমাসা সাহিত্য সভা ছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক সংগঠন গুলির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হতে পারে। এ ধরনের বৈঠকের মধ্য দিয়ে সমন্বয়ের ক্ষেত্রটি প্রসারিত হয়ে উঠতে পারে। কারণ অসম যেহেতু বহুভাষিক রাজ্য এই সত্যটা তো লুকানোর কোন উপায় নেই। কাজেই সবভাষিক গোষ্ঠীর মানুষকে নিয়েই গড়ে তুলতে হবে এক সমৃদ্ধ অসম। কোন ধরনের বিভেদ বা বিদ্বেষ জিরিয়ে না রাখে খোলা মনে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। এসব করার জন্য নিম্ন অসমের মানুষকে উজাণ অসমে, উজান অসময়ের মানুষকে বরাক উপত্যকায়, বরাক উপত্যকার মানুষকে উত্তর অসমের নানাস্থানে সভা সমিতিতে ডেকে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা গড়ে তুলতে হবে।

অসমের সবচেয়ে বড় সামাজিক সংগঠন অসম সাহিত্য সভা। এই সংগঠনের সঙ্গে কেবল অসমিয়াভাষী জনগোষ্ঠী নয় রাজ্যের বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষও এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। কাজেই সমন্বয়ের ক্ষেত্র রচনার ক্ষেত্রে অসম সাহিত্য সভাকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার প্রয়োজনে এই সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে। অসম সাহিত্য সভা এগিয়ে এসে অসমের বাংলা সাহিত্য সভা, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন, আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সম্মেলন, কার্বি সাহিত্য সভা, বড়ো সাহিত্য সভা, নেপালি সাহিত্য সভা, ডিমাসা সাহিত্য সভা ছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক সংগঠন গুলির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হতে পারে। এ ধরনের বৈঠকের মধ্য দিয়ে সমন্বয়ের ক্ষেত্রটি প্রসারিত হয়ে উঠতে পারে। কারণ অসম যেহেতু বহুভাষিক রাজ্য এই সত্যটা তো লুকানোর কোন উপায় নেই। কাজেই সবভাষিক গোষ্ঠীর মানুষকে নিয়েই গড়ে তুলতে হবে এক সমৃদ্ধ অসম। কোন ধরনের বিভেদ বা বিদ্বেষ জিরিয়ে না রাখে খোলা মনে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। এসব করার জন্য নিম্ন অসমের মানুষকে উজাণ অসমে, উজান অসময়ের মানুষকে বরাক উপত্যকায়, বরাক উপত্যকার মানুষকে উত্তর অসমের নানাস্থানে সভা সমিতিতে ডেকে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা গড়ে তুলতে হবে।
অসম সাহিত্যসভার কেন্দ্রীয় অধিবেশন বরাক উপত্যকায় আয়োজন করা যেতে পারে। বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার জন্মদিন, লাচিত বর ফুকনের জন্মদিন বরাক উপত্যকার কোন স্থানে কেন্দ্রীয়ভাবে উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। একইভাবে অসমের শ্রমিক আন্দোলনের পুরোধা অরুণ কুমার চন্দের জন্মদিন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কোন স্থানে আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। ঝুমুর বিনন্দিনীর মতো অনুষ্ঠানে যেখানে সারা রাজ্যের শিল্পীদের এনে অনুষ্ঠান করানো হয়েছে ঠিক একইভাবে এত বৃহৎ পরিসরে না হলেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিসরে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রয়োজন রয়েছে। বিভিন্ন উপজাতি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যাতে অন্যান্যরা দেখতে পারে, বুঝতে পারে সে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতেই পারে। এসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন স্থানের মানুষের মধ্যে যে মিলন ঘটবে তাতে বিভেদের ভাবনা এমনিতেই দূর হতে থাকবে এবং সবাইকে নিয়ে চলার মানসিক চেতনা গড়ে উঠবে। ভাষা সংস্কৃতির মধ্যে সমন্বয়ের সেতু গড়ে তুলতে পারলে তা মানুষের দৈনন্দিন জীবন ধারণের মান পরিবর্তন করে মানুষকে ইতিবাচক চেতনায় সমৃদ্ধ করে তুলতে পারে। অসমকে একটি শ্রেষ্ঠ রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আর্থসামাজিক অবস্থার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরম্পরাকে তুলে ধরে সমন্বয়ের বিশাল ক্ষেত্র গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই এ অঞ্চল থেকে দূর হবে সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা। আমি আশা করি এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দের পাশাপাশি রাজ্যের প্রকৃত বুদ্ধিজীবীরা উদার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবেন। বর্তমান সময়ে সংঘাতের পরিবেশ রচনা করে উন্নয়নের চাকা আটকে রাখা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি এখন মানুষকে জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠার পথকে প্রশস্ত করে দিয়েছে। এই পথ ধরে এগিয়ে গেলেই রাজ্যের উন্নয়ন ঘটবে প্রগতি আসবে এবং শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ রচনা হবে। এর জন্যই সংকীর্ণ মনোভাব দূর করে উদার মনোভাব নিতে হবে।