বেঙ্গালুরুতে ঈদ-উল আজহার জাঁকজমকপূর্ণ উদযাপন, নামাজে লক্ষাধিক মুসল্লির ঢল

৭ জুন : ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এক পবিত্র ও আনন্দঘন দিন হিসেবে শনিবার উদযাপিত হল ঈদ-উল আজহা। ভোর হতেই বেঙ্গালুরুর আকাশ-বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ঈদের খুশির বার্তা। শহরের প্রতিটি প্রান্তে সৃষ্টি হয় উৎসবের আবহ, আর বিভিন্ন ঈদগাহ ময়দানে দেখা যায় ঈদের নামাজে নজিরবিহীন জনসমাগম।
শহরের সর্বত্র হাজারো মুসল্লি ভোর থেকেই জামা-কুর্তা ও আতরের সুবাসে সজ্জিত হয়ে বেরিয়ে পড়েন ঈদগাহ ও মসজিদমুখী। দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর ইদগাহ-ই-বিলাল (Bilal Eidgah Grounds), উত্তর বেঙ্গালুরুর ঐতিহ্যবাহী মিলারস রোড ঈদগাহ, পুরনো শহরের শিবাজিনগর জামে মসজিদ, সিটি মার্কেট জামা মসজিদ, এবং রাজাজিনগর ঈদগাহ সহ শহরের প্রায় প্রতিটি ঈদগাহেই উপচে পড়ে ঈদের নামাজে অংশগ্রহণকারী মুসল্লির ঢল।
বিশেষ ঈদগাহগুলোর চিত্র ইদগাহ-ই-বিলাল, বান্নারঘাটা রোড: প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি মুসল্লি এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সুবিশাল ময়দানটি এক বিশাল জনসমুদ্রে রূপ নেয় শিবাজিনগর ঈদগাহ ও জামে মসজিদে ভোর ৫টা থেকেই আগত মুসল্লিদের ঢল। উপস্থিতি ৭০ হাজারেরও বেশি।
মিলারস রোড ঈদগাহে উত্তর বেঙ্গালুরুর এই মাঠে ৫০ হাজার এরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান একত্রিত হন রাজাজিনগর ঈদগাহ ও মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন মাঠে প্রায় ৪০ হাজার মুসল্লির উপস্থিতি। শিশুদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। গিয়ারি পালিয়া ঈদগাহ (G B Palya): দক্ষিণ-পশ্চিম বেঙ্গালুরুর এই ঈদগাহে ৮০ হাজারেরও বেশি মুসল্লি নামাজে অংশ নেন।

ঈদের নামাজ শুরু হয় সকাল সাড়ে সাতটা থেকে, বড় ঈদগাহগুলোতে সকাল ৯টা নাগাদ। নামাজ শেষে ইমাম ইসলামি শিক্ষা, ত্যাগের তাৎপর্য ও সামাজিক সহমর্মিতার বার্তা নিয়ে খুতবা প্রদান করেন।
বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরজুড়ে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি ঈদগাহে মোতায়েন ছিল পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক। ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ, পানীয় জল এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়েও ছিল সচেতন আয়োজন।
বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন ঈদগাহে কেবল মুসলমান নয়, অমুসলিম প্রতিবেশীদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তুলে ধরেন শহরের অসাম্প্রদায়িক বন্ধুত্বের সংস্কৃতি।
এই মহোৎসবে যোগ দিয়েছেন শুধু কর্ণাটকের স্থানীয়রা নন, বরং আসাম রাজ্যের কাছাড়, শ্রীভূমি, হাইলাকান্দি ও হোজাই জেলা থেকে কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরুতে অবস্থানরত বহু মুসলিমকেও দেখা গেছে ঈদের নামাজে অংশ নিতে।

বেঙ্গালুরু শহরে এবারের ঈদ-উল-আযহার উদযাপন শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছিল না বরং এটি ছিল এক মহৎ মানবিক মিলনমেলা। এই উৎসব উদযাপন আবারও প্রমাণ করল, এই শহর প্রযুক্তির শহর হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বাস, সহানুভূতি ও বহুত্ববাদী সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল প্রতীক। গিয়ারি পাল্লা সহ শহরের প্রতিটি ঈদগাহে মুসল্লিদের সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণ সেই সহনশীল ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজের বার্তাই বহন করে।