মাদকাসক্তি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সংগ্রাম নয়, এটি এক সামাজিক যুদ্ধ : সহকারী আয়ুক্ত অঞ্জলি

জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ৩ জুলাই : “মাদকাসক্তিকে এখন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সংগ্রাম হিসেবে দেখার সময় শেষ, এটি এক সামাজিক যুদ্ধের রূপ নিয়েছে,” বললেন কাছাড়ের সহকারী আয়ুক্ত তথা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক অঞ্জলি কুমারী এসিএস। মঙ্গলবার সকালে বিপ্লবী উল্লাসকর বিদ্যাভবনে আয়োজিত এক  সচেতনতামূলক সভায় তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যেই ফুটে উঠলো অনুষ্ঠানের মূলসুর — সমাজে ক্রমবর্ধমান মাদকপ্রবণতার বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক। ‘নেশা মুক্ত ভারত অভিযানের’ অংশ হিসেবে আয়োজিত এই সভায় অংশগ্রহণ করেন মোট ২০৫ জন, যার মধ্যে ১৪০ জনই ছিলেন মহিলারা — সকলেই ঐক্যবদ্ধ এক সংকল্পে: মাদকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।

কুমারী তাঁর ভাষণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কিশোর-কিশোরীরা বর্তমানে মাদকের প্রতি সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল, এবং এই সংকটের মোকাবেলায় পরিবার, বিদ্যালয়, প্রশাসন এবং নাগরিক সমাজের সম্মিলিত পদক্ষেপ অপরিহার্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা যদি পৃথক পৃথকভাবে লড়াই করি, তাতে কোনও লাভ হবে না। এটি একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা হওয়া উচিত, যা প্রতিরোধকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হবে।”

মাদকাসক্তি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সংগ্রাম নয়, এটি এক সামাজিক যুদ্ধ : সহকারী আয়ুক্ত অঞ্জলি

এই অনুষ্ঠানটি কাছাড় জেলা প্রশাসন এবং সমাজকল্যাণ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী উল্লাসকর বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতী মনীষা দাশগুপ্ত, পোষণ এবং জেলা মহিলা ক্ষমতায়ন কেন্দ্রের (DHEW) কর্মকর্তা, জেলা সমাজকল্যাণ বিভাগের কর্মী, এবং ‘আর্ট অফ লিভিং’-এর প্রশিক্ষিকা শ্রীমতী রেশমি পুরকায়স্থ।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. মিঠুন রায় মাদকাসক্তির মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়ে এক তথ্যবহুল আলোচনা করেন। তিনি তুলে ধরেন কীভাবে প্রাথমিক লক্ষণ, বন্ধুদের প্রভাব, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবক্ষয় একটি কিশোরকে মাদকের দিকে ঠেলে দেয়। তাঁর বক্তব্যে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় — পরিবারের এবং বিদ্যালয়ের ভূমিকাকে আরও সংবেদনশীল ও সচেতন হওয়ার আহ্বান।

মাদকাসক্তি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সংগ্রাম নয়, এটি এক সামাজিক যুদ্ধ : সহকারী আয়ুক্ত অঞ্জলি

রেশমি পুরকায়স্থ একটি ইন্টার‌্যাকটিভ অধিবেশন পরিচালনা করেন, যেখানে তিনি মোটিভেশনাল গল্প, মনোসংযোগ বৃদ্ধিকারী কার্যকলাপ এবং ডেস্কটপ যোগা-এর সংমিশ্রণে অংশগ্রহণকারীদের মনের জোর বাড়ানোর কৌশল শেখান। তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থাপনা তরুণদের মধ্যে খোলামেলা অংশগ্রহণ ও আত্মজিজ্ঞাসার পরিবেশ সৃষ্টি করে।

মাদকাসক্তি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সংগ্রাম নয়, এটি এক সামাজিক যুদ্ধ : সহকারী আয়ুক্ত অঞ্জলি

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সকল অংশগ্রহণকারী  শপথ বাক্য পাঠ করেন,  তারা মাদক বর্জন করবেন এবং তাঁদের পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজে সচেতনতা ছড়িয়ে দেবেন। এই প্রতিজ্ঞা এক দৃঢ় সংকল্পের প্রতিফলন, প্রত্যাশাপূর্ণ, দৃঢ় এবং সম্মিলিত দায়িত্ববোধে উজ্জীবিত।

এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে কাছাড় জেলা প্রশাসন এক মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কেবল সচেতনতা নয়, বরং প্রতিরোধ এবং দায়িত্বশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার পথ দেখাচ্ছে। জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব, আইএএস-এর গতিশীল নেতৃত্বে এই আন্দোলন আরও গতিময় হয়ে উঠছে — এক একটি সচেতনতা শিবির, এক একটি কণ্ঠস্বর, এবং এক একটি শপথের মধ্য দিয়ে।

Author

Spread the News