বাজারের প্যাকেটজাত ওআরএস-এর পানীয় শিশুদের বিপদ ডেকে আনে : ডাঃ হামিদা
কাছাড়ে স্টপ ডায়েরিয়া ক্যাম্পেইন শুরু_____
ইকবাল লস্কর, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১১ জুলাই : সারা রাজ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাছাড় জেলায়ও শুরু হল স্টপ ডায়রিয়া ক্যাম্পেইন। শিলচর সিভিল হাসপাতালস্থিত পুষ্টি পরিপোরক কেন্দ্রে (এনআরসি) আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা ভিত্তিক এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডাঃ অরুণ দেবনাথের উপস্থিতিতে এদিন কর্মসুচীর বিস্তারিত বিষয় উপস্থাপন করেন বরিষ্ট দুই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সাধন কুমার রায় , ডাঃ হামিদা সুলতানা এবং ডিসিএম উজ্জ্বল দাস।
ডাঃ রায় বলেন, দেশে প্রতি বছর জন্ম থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের অধিকাংশই ডায়েরিয়া বা পাতলা পায়খানার জন্য মৃত্যু হয়। এ রোগ থেকে শিশুদের বাঁচাতে সরকার স্টপ ডায়েরিয়া নামে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে ডায়েরিয়ার কারণে শিশুর মৃত্যু না ঘটে। ১০ জুলাই থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত চলবে ৩৫ দিনের এই স্টপ ডায়েরিয়া ক্যাম্পেইনে জেলার পাঁচ বছরের শিশু থাকা প্রতিটি ঘরেই আশা কর্মীরা ওআরএস এবং জিঙ্ক ট্যাবলেট বিতরণ করবেন। তাছাড়া জেলার প্রতিটি হাসপাতালে এই রূপ প্রতিরোধে ও ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তুলতে ওআরটি কর্নার খোলা হয়েছে। এই কর্নারের মাধ্যমে ডায়েরিয়া আক্রান্ত শিশুর স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা হবে। ডাঃ সাধন কুমার রায়, জন সচেতনতার অভাবে ডায়েরিয়া আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু ঘটে। যদি কোন শিশুর পাতলা পায়খানা দুইবার বা তিনবারের বেশি হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই ও আর এস প্রদানের উপর জোর দেন। কারণ ডায়েরিয়া হলে শিশুর শরীরে মারাত্মকভাবে জলের অভাব দেখা দেয় এবং এই অভাব থেকেই শিশুর মৃত্যু ঘটে। তাই এই রোগ ধরা পড়া মাত্রই শিশুর মুখে ঘন ঘন ওআরএস সেবনের কথা বলেন।
সভায় প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ হামিদা সুলতানা আহমেদ বলেন, ডায়েরিয়া নিয়ে গ্রামাঞ্চলে অনেক কুসংস্কার রয়েছে। অনেক মায়েরা ডায়রিয়া হলে মায়ের বুকের দুধ ও অন্যান্য পানীয় জলের খাবার বন্ধ করে দেন। যা মোটেই ঠিক নয়। শিশু যত পাতলা পায়খানা করবে তাকে ততই খাবার দিতে হবে। তাছাড়া বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট জাত ওআরএস পানীয় শিশুর জন্য মোটেই ঠিক নয় বলে দাবি করেন। এসব প্যাকেটজাত ওআরএস পানীয় ডায়েরিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্য বিপদ ডেকে আনে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হলে শিশুকে কেবল ওআরএসএ-র মিশ্রণের জল খাওয়াতে হবে। যদি ওআরএস না থাকে তবে বিশুদ্ধ জলে এক চামচ চিনি ও এক চিমটি লবন মিশিয়ে খাওয়াতে হবে এবং পার্শ্ববর্তী চিকিৎসালয়ে যোগাযোগ করতে হবে। ডাঃ আহমেদ বলেন, ওআরএস আবার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই বানিয়ে খাওয়াতে নেই। ১ লিটার জলে পুরো এক প্যাকেট মিশিয়ে পরিমাপ মতো খাওয়াতে হবে। অনুষ্ঠানে ওআরএস তৈরি এবং এর সেবন বিষয়ে এক ভিডিও প্রদর্শনীর মাধ্যমে উপস্থিত মায়েদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
ডিসিএম উজ্জ্বল দাস বলেন, শিশুর ডায়েরিয়া ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে এলাকার আশা কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ডায়েরিয়ার জন্য আগাম প্রতিশেধক ওষুধ ওআরএস এবং জিঙ্ক ট্যাবলেট যেন তারা আশা কর্মীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ঘরে রাখেন। শিশুর ডায়রিয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করে সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী হাসপাতালে যোগাযোগ করার অনুরোধ রাখেন। জেলার প্রতিটি হাসপাতালে এই ক্যাম্পেইন আজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। অনুষ্ঠানে সিভিল হাসপাতালের কাউন্সিলর ইরশাদুর রহমান বড়ভূইয়া, এনআরসির স্টাফ নার্স, সিভিল হাসপাতালের প্রসবোত্তর মায়েরা ও বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা রোগী ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের প্রতিজনের হাতেই ওআরএস এবং জিঙ্ক ট্যাবলেট বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এদিনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন এনএইচএম-এর জেলা সংযোজক ইকবাল বাহার লস্কর।