বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযানের সূচনা দীপায়ন চক্রবর্তীর
দীপ দেব, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ২৯ মে : কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দ্বারা বৃহস্পতিবার থেকে ১২ জুন অবধি সমগ্ৰ ভারতে ‘বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান’ শুরু হয়। কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রক এবং ভারতীয় কৃষক গবেষণা পরিষদের দ্বারা শুরু হওয়া এই ঐতিহাসিক উদ্যোগটি বৈজ্ঞানিক ও উদ্ভাবন এবং মাঠ পর্যায়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভারতীয় কৃষক কৃষিকে রূপান্তরিত করা এবং দেশের খাদ্য ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ‘বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান’-এর মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের প্রায় ৭০০টি জেলার দেড় কোটি কৃষককে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র গুলির প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করা। অসম রাজ্য এই অভিযানের অধীনে ২৬টি জেলার ৩২৫০টি গ্রাম এবং ৫ লক্ষের অধিক কৃষককে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর জন্য কৃষি বিভাগ সহ অন্যান্য সহযোগী বিভাগ এবং কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মিলিত হয়ে দল গঠন করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটায় শিলচর অরুণাচলের কুমারপাড়া গ্ৰামে কাছাড় জেলার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিআর অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী, জেলা কৃষি বিভাগের ডিএও ড. এআর আহমেদ, জেলা ফিশারি ডেভলপমেন্ট অফিসার হিমাংশু প্রকাশ দাস, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের এআরএস ড. দিবাকর রায়, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের এলডিএম দীনেশ গুপ্তা, নাবার্ডের ডিডিএম রবিশঙ্কর লিকমাবাম, এসএলআর এম বিপ্লব নাথ, স্থানীয় আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য দীপঙ্কর পাল, সমাজকর্মী পীযূষকান্তি পাল প্রমুখ। তাঁদের উত্তরীয় পরিয়ে ও হাতে একটি গাছের চারা থাকা টব দিয়ে সম্মান জানান কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানী ও প্রগতিশীল কৃষকেরা। এরপর পঞ্চপ্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে আলোচনা সভাটির সূচনা হয়।
অনুষ্ঠানে বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী বলেন,এই অভিযান গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যবধান দূর করার জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, যাতে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি তৃণমূল স্তরে পৌঁছাতে পারে। আধুনিক উদ্ভাবনী এবং টেকসই কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে উন্নত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের দিকে এই উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কৃষি বিজ্ঞানী এবং কৃষকদের মধ্যে দ্বিমুখী জ্ঞান বিনিময়কে উৎসাহিত করার মাধ্যমে, এই প্রচারণা ভারতীয় কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে – এটিকে ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য আরও উৎপাদনশীল, লাভজনক এবং স্থিতিস্থাপক করে তুলবে।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে ড. দিবাকর রায় বলেন, বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান’-এর মূল লক্ষ্য ভারতের কৃষি কাঠামোকে শক্তিশালী করে দেশকে ‘বিকশিত রাষ্ট্র’ হিসেবে গড়ে তোলার জাতীয় উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই অভিযানে কৃষি বিজ্ঞানী, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং সম্প্রসারণ আধিকারিকদের সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা হচ্ছে, যাতে তারা প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে জ্ঞান, প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মসূচি পরিচালনা করতে পারেন। এর ফলে কৃষকের ঘরে ঘরে কৃষি জ্ঞান পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে। ডিএও এআর আহমেদ বলেন, কাছাড় জেলায় ১৫টি উন্নয়ন খণ্ডে ৫৬টি জায়গায় “উন্নত কৃষি সংকল্প অভিযান”-এর কার্যক্রমের প্রচার চলবে। প্রত্যেকদিন ২টি প্রোগ্রাম রাখা হয়েছে, দিনে মোট চারটি প্রোগ্ৰাম হবে। দু’টি টিম বানানো হয়েছে এতে কৃষি বিজ্ঞানী ছাড়াও অন্যান্য বিভাগের কর্মচারীরাও থাকবেন জেলার কৃষকদের সচেতনতার মাধ্যমে কৃষকদের বিকাশের জন্য।এতে কৃষক বিমা সহ কৃষি সংক্রান্ত যেসব কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের যেসব প্রকল্প রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে কৃষকদের অবগত করানো হবে। তাই এই কেন্দ্রীয় সরকারের ‘উন্নত কৃষি সংকল্প অভিযান’কে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। এদিন অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হিমাংশু প্রকাশ দাস, দীনেশ গুপ্তা, রবিশঙ্কর লিকমাবাম ও বিপ্লব নাথ।

জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কয়েকজন কৃষকদের হাতে শাইল ধানের বীজ তুলে হয় এবং এরপর ‘বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান’-এর প্রচার গাড়ির ফিতা কেটে যাত্রার সূচনা করেন বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী সহ কৃষি বিভাগ ও কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানী এবং অন্যান্য আধিকারিকরা। আলোচনা সভাটির পরিচালনায় ছিলেন কৃষি বিজ্ঞানী ড. মনোরঞ্জন দাস এবং সমাপ্তি ঘটে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। এদিন অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. হিমাংশু মিশ্র, ড. আনন্দিতা দাস, বিশু দাস প্রমুখ।