বাল্যবিবাহ : অভিযুক্তদের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন নেই, আদালত

বরাক তরঙ্গ, ১৫ ফেব্রুয়ারি : বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের নামে পুলিশি বাড়াবাড়ি কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, তার নিদারুণ কাহিনি উন্মোচিত হল গৌহাটি হাইকোর্টে। বঙ্গাইগাঁও জেলার অভয়াপুরী থানা এলাকার নতুন পিরাধরা গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান আলিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। অভয়াপুরী থানায় তার বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা (৩৯/২০২৩) বসানো হয়েছিল ২০০৬-এর বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনের ৯/১০/১১ ধারায়। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল ২০১২-এর পকসো আইন। অথচ যে এজাহারের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছিল শাহজাহানকে, সেখানে তার নামই ছিল না। মঙ্গলবার তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে গৌহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি সুমন শ্যাম এই মামলা নিয়ে স্পষ্টতই তাঁর উষ্মা প্রকাশ করেছেন।

এ দিন বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে পকসো আইন প্রযোজ্য হবে কেন এমনই প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার ৪টি আলাদা বাল্যবিবাহের মামলায় অভিযুক্তদের আগাম জামিন মঞ্জুর করল গুয়াহাটি হাইকোর্ট। নাবালক-নাবালিকার ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতন অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। কিন্তু বাল্য বিবাহের (child marriage) ক্ষেত্রে সেই আইনে মামলা রুজু করার আদৌ কি কোনও প্রয়োজন আছে, এমনটাই প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতিদের একটি বেঞ্চ। ‘এগুলো যথেষ্ট গুরুতর অভিযোগ। আমরা কাউকে নির্দোষ দাবি করে মুক্তি দিয়ে দিচ্ছি না। কেউ আপনাদের (পুলিশ) তদন্ত করতে আটকাচ্ছে না,’ দাবি বিচারপতিদের।
এদিন চারটি আলাদা মামলায় মোট ৯ জন অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত।

১৪ বছরেরও কম বয়সি মেয়েদের বিয়ে করার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করার পর তাদের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু করেছিল পুলিশ। এই আইন, যা মূলত নাবালক-নাবালিকার উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করার যৌক্তিকতা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলে আদালত। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সরকারপক্ষের আইনজীবীর দাবিও খারিজ করে দেন বিচারপতি সুমন শ্যাম। আদালতের পর্যবেক্ষণ, তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিযুক্তদের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন নেই। ‘আপনারা আইন মেনে চার্জশিট দাখিল করুন, যদি সাজা হয় তো হবে। কিন্তু এতে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ির লোকজন রয়েছে, বাচ্চারা রয়েছে, অন্যরাও রয়েছেন। বাল্যবিবাহ হয়তো ঠিক নয়, অবশ্যই খারাপ জিনিস, কিন্তু যখন সময় আসবে, তখন সেটা নিয়ে আমরা কথা বলব,’ সরকারি আইনজীবীকে জানিয়েছে আদালত।

Author

Spread the News