বিহারে সংশোধন ‘ভোটার-বান্ধব’, কমিশনের সমর্থনে মন্তব্য শীর্ষ আদালতের

১৪ আগস্ট : নির্বাচন কমিশনের নথি যাচাইয়ের প্রক্রিয়া ‘ভোটার বিরোধী’ এবং ‘ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার উদ্দেশেই করা’, এই যুক্তিগুলির সঙ্গে একমত নয় সুপ্রিম কোর্ট।বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন তথা এসআইআর সম্পর্কিত আবেদনের শুনানিতে এই পর্যবেক্ষণ শীর্ষ আদালতের।বুধবার এই পর্যবেক্ষণের কথা বলে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ। আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য ছিল যে, ভোটার তালিকার সংক্ষিপ্ত সংশোধনের সময় গ্রহণযোগ্য নথির সংখ্যা ছিল ৭, তবে বিশেষ নিবিড় সংশোধনের জন্য এটি বাড়িয়ে ১১ করা হয়েছিল। বিচারপতি বাগচি বলেন, ‘আমরা আধার থেকে আপনার ‘ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই করা’-র যুক্তি পেয়েছি।কিন্তু নথির সংখ্যার বিষয়টি আসলে ভোটার-বান্ধব, এর বিরুদ্ধে নয়।দেখুন কতগুলি নথির মাধ্যমে আপনি নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারবেন।’

বিচারপতি কান্ত বলেন, ‘তাঁরা যদি ১১টি নথির সবগুলিই চান, তা ভোটার বিরোধী। কিন্তু যদি কোনও একটি নথি চাওয়া হয়, তাহলে… ।’

আইনজীবী সিঙ্ঘভি জোরের সঙ্গে বলেন যে,’এই ধরণের নথির প্রয়োজনীয়তা ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার উদ্দেশেই করা । আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। এখানে যে সব নথি চাওয়া হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে … যদি আপনার কাছে জমি না থাকে… তাহলে বিকল্প ৫, ৬, ৭ এর থেকে বাদ । বিকল্প ১ এবং ২ এর কোনও অস্তিত্বই নেই। বাসস্থানের শংসাপত্র সেখানে তালিকায় নেই। পাসপোর্ট তো অলৌকিক। ‘

বিচারপতি কান্ত এরপর বলেন, ‘আসুন বিহারকে এভাবে উপস্থাপন না করে আমরা সর্বভারতীয় পরিষেবার ক্ষেত্রে, সর্বাধিক প্রতিনিধিত্ব এইভাবে রাজ্যটিকে উপস্থাপন করি। সেখান থেকেই সর্বাধিক আইএএস, আইপিএস, আইএফএস (আধিকারিক) রয়েছেন। তরুণ সম্প্রদায় অনুপ্রাণিত না হলে এটি ঘটতে পারে না। ‘

আইনজীবী সিঙ্ঘভি জবাব দেন, ‘সেখান থেকে আমাদের অনেক প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ইত্যাদি রয়েছেন, তবে এটি মানুষের একটি অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিহারে গ্রামীণ, বন্যাপ্রবণ অঞ্চল রয়েছে। দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা রয়েছে। তাদের জন্য ১১টি নথির তালিকা তৈরি করে কী লাভ ? সমস্যা হল, বিহারের বেশিরভাগ মানুষের কাছে এই নথিগুলি থাকবে না। আমরা আসল, খাঁটি তদন্তের কথা বলছি। পাসপোর্টের উদাহরণ দিয়ে সিঙ্ঘভি বলেন, ‘বিহারের জনসংখ্যার মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশের কাছে পাসপোর্ট রয়েছে এবং সংখ্যাটি ৩৬ লক্ষ।’ বেঞ্চ উত্তর দেয় যে, ৩৬ লক্ষ পাসপোর্ট ভাল কভারেজ।

প্রসঙ্গত, বিশেষ নিবিড় সংশোধন নিয়ে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে শীর্ষ আদালতে। এই সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি সূর্য কান্তর নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশনই ঠিক। আধারকে নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণপত্র হিসাবে গ্রহণ করা যায় না। এটা যাচাই করার প্রয়োজন পড়ে। বস্তুতপক্ষে এই সুপ্রিম কোর্টই সম্প্রতি বিহারের নিবিড় সংশোধনে আধার কার্ড যোগ করার পরামর্শ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু কমিশন সেই পরামর্শ খারিজ করে জানিয়ে দিয়েছে, বিশেষ নিবিড় সংশোধনে আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড গ্রহণ করা যাবে না। এদিকে মঙ্গলবার বম্বে হাই কোর্ট মন্তব্য করেছে, আধার, প্যান কিংবা ভোটার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ দেয় না। একইসঙ্গে আদালত জানিয়েছে, এই নথিগুলি শুধুমাত্র শনাক্ত করতে এবং পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হতে পারে। তবে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য নয় আধার কার্ড নয়।

Spread the News
error: Content is protected !!