করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে নাগরিক অভিবর্তন
বরাক তরঙ্গ, ১৩ ফেব্রুয়ারি : অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে জনসাধারণের মতামতকে তোয়াক্কা না করে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্যমণ্ডিত ও মাতৃভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে নাগরিক অভিবর্তন অনুষ্ঠিত হয় বুধবার। স্থানীয় বিপিনচন্দ্র পাল স্মৃতি ভবনে আয়োজিত নাগরিক সভায় বিশিষ্টরা প্রাসঙ্গিক বক্তব্য সরকারি সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেন। সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধি নিয়ে জেলার নাম পরিবর্তন কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে সবাই মত ব্যক্ত করেন।
বুধবার আয়োজিত নাগরিক অভিবর্তনে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত হন। সুনীতরঞ্জন দত্ত, নির্মলকুমার সরকার, হিফজুর রহমান, সুদীপ্তা দে চৌধুরীকে নিয়ে গঠিত সভাপতি মণ্ডলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নাগরিক অভিবর্তনে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন আইনজীবী অরুণাংশু ভট্টাচার্য। এরপর আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে একে একে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী নির্মলকুমার দাস, বিশিষ্ট সাহিত্যিক বরুণকুমার সিনহা, বিশিষ্ট নাগরিক রজত চক্রবর্তী, বিশিষ্ট আইনজীবী সুব্রত পাল, বিশিষ্ট সমাজকর্মী ডাঃ এম শান্তিকুমার সিংহ, মৌলানা আবুল হুসেন, তুষার পুরকায়স্থ, প্রজ্জ্বোল দেব, সামসুল হক বড়ভূইয়া প্রমুখ। অভিবর্তনের মূল প্রস্তাব এবং ভবিষ্যৎ কার্যসূচি উত্থাপন করেন অরুণাংশু ভট্টাচার্য।

সভায় উপস্থিত প্রত্যেক বক্তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অসম সরকারের উগ্র প্রাদেশিকতাকতাবাদী ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন। তাঁরা বলেন, উগ্র প্রাদেশিকতাকতাবাদী শক্তির মদতপুষ্ট অসম সরকার চরম বিভাজনবাদী মানসিকতা নিয়ে এনআরসি রূপায়ণের নামে উনিশ লক্ষ নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছে।


যার সিংহভাগই বরাক উপত্যকার। একইভাবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে বরাক উপত্যকার বেকার যুবক-যুবতীদের বঞ্চনা, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ বিভিন্ন পরিষেবা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে চরম অবহেলা এবং বরাক উপত্যকার দু’টি বিধানসভা কেন্দ্র চক্রান্ত করে বিলুপ্ত ঘটানো ইত্যাদি একের পর এক ঘটনা প্রমাণ করে বরাক উপত্যকার প্রতি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি চরম উগ্র প্রাদেশিকতাকতাবাদী ও সাম্প্রদায়িক। করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সরকারের একই দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সবাই।


তাঁরা বলেন, বরাক উপত্যকার মানুষ যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের উগ্র প্রাদেশিকতাকতাবাদী ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হতে না পারে সেই উদ্দেশ্যেই করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে, যা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। ফলে সুনীতরঞ্জন দত্ত, অরুণাংশু ভট্টাচার্য, রজত চক্রবর্তী, বদরুল হক চৌধুরী ও সুদিপ্তা দে চৌধুরীকে নিয়ে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন প্রতিরোেধ নাগরিক কমিটি নামে এক শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়। অভিবর্তনে নবগগঠিত কমিটির পক্ষ থেকে জেলার জনসাধারণকে জেলার নতুন নাম বর্জনের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস জেলার প্রতিটি স্থানে পালন করা হবে এবং সর্বত্র শহিদ বেদী স্থাপন ও করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের আন্দোলন সফল করার জন্য শপথগ্রহণ করা হবে। এছাড়াও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকপত্র প্রদান করে নাম পরিবর্তনের অধ্যাদেশ বাতিল করার জোরালো দাবি জানানো হবে। করিমগঞ্জ জেলার সর্বত্র প্রচারপত্র বিলি, পোস্টার লাগানো, দেয়াল লিখিন ও পথসভা করা হবে এবং বিভিন্ন অঞ্চলে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হবে।

একই সঙ্গে উপত্যকার বিধায়ক ও সাংসদদের নিকট স্মারকপত্র প্রদান করে তাদেরকেও এই আন্দোলনের সমর্থনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হবে এবং জেলার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে জনসভার আয়োজন করা হবে। করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের এই আন্দোলনে সবাইকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করতে এদিন নবগঠিত কমিটির তরফে আহ্বান জানানো হয়।