মেডিক্যালে রেডিওলজি বিভাগে দুর্নীতি, তদন্তে মুখ্যমন্ত্রীর ভিজিল্যান্স সেল
বরাক তরঙ্গ, ২৩ এপ্রিল : শিলচর মেডিক্যালের রেডিওলজি বিভাগে দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু করল মুখ্যমন্ত্রীর ভিজিল্যান্স সেল। বুধবার গুয়াহাটি থেকে আসা ভিজিল্যান্স সেলের ৩ সদস্যের একটি দল মেডিক্যালে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। জানা গেছে, নারায়ন শইকিয়া নামে এক আধিকারিকের নেতৃত্বাধীন তদন্তকারী দলের সদস্যরা এদিন সকালে মেডিক্য়ালে গিয়ে বিকেল পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবন ও রেডিওলজি বিভাগে গিয়ে নথিপত্র সংগ্রহ সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আধিকারিক ও কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে দুর্নীতির ব্যাপারটা খতিয়ে দেখেন।
রেডিওলোজি বিভাগে সিটিস্ক্যান ও এমআরআই করানোর নামে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি চলে আসছিল। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে তা প্রকাশ্যে আসার পর অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে ছাঁটাই করা হয় ছয় অস্থায়ী কর্মী বিশ্বজিৎ দাস, সরোজ দাস, আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী, বাপন দেব, আব্দুল মুমিন লস্কর ও লাভলি বেগম লস্করকে। শোকজ করা হয় চার স্থায়ী কর্মী কমরুল ইসলাম লস্কর, বিনয় ছেত্রী, সামাদ আহমদ লস্কর ও শংকর দেবকে।
জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ তদন্তে ২০২৩ সালের মে মাসের ২ দিনের হিসেব দেখিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে ওই দুদিনে এমআরআই ও সিটিস্ক্যান করে আত্মসাৎ করা হয়েছে ২১ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রতি মাসে দুর্নীতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। অভিযোগ অনুযায়ী, এই দুর্নীতি চলে আসছিল বছরের পর বছর ধরে। অভ্যন্তরীণ তদন্তে দুর্নীতির এই তথ্য বেরিয়ে আসার পর মামলা দায়ের করা হয় পুলিশেও। অভ্যন্তরীণ তদন্তের সূত্রে এমন চখঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসার পর পুলিশে মামলা দায়ের করার পাশাপাশি অক্টোবর মাসে গুয়াহাটি থেকে অর্থ বিভাগের একটি দল এসে তদন্ত চালায়। খবর অনুযায়ী দীর্ঘ সময়ের হিসেব টেনে এই তদন্তে যে তথ্য বেরিয়ে আসে এতে দেখা গেছে বছরের পর বছর ধরে এভাবে দুর্নীতি করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বেশ কয়েক কোটি টাকা। দুর্নীতির এত বিশাল মাত্রা দেখে জেলা পুলিশের কাছ থেকে মামলা মুখ্যমন্ত্রীর ভিজিল্যান্স সেলের হাতে হস্তান্তর করা হয়। এরপর এদিন তদন্তের জন্য এসে পৌঁছেছে ভিজিল্যান্স সেলের দল।খবর অনুযায়ী দলটি আগামী আরও কয়েকদিন তদন্ত প্রক্রিয়া চালাবে। ভিজিল্যান্সের দলটি এদিন তদন্ত শুরু করার পর মেডিক্যালের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে জিজ্ঞেস করলে কেউই মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না।

এমআরআই ও সিটি স্ক্যান করানোর নামে দুর্নীতির বিবরণ তুলে ধরে মেডিক্যালের এক সূত্র জানান, মেডিকল্যালে এমআরআই করাতে গেলে “ফি” দিতে হয় ৩ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা। আর সিটি স্ক্যান-এর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। তবে বাইরে বেসরকারি ক্ষেত্রে এসব করাতে গেলে “ফি”-র পরিমাণ দাঁড়ায় দ্বিগুনের চেয়েও বেশি। তাই বাইরের রোগীদের মেডিক্যালের রোগী সাজিয়ে এম আর আই ও সিটি স্ক্যান করিয়ে মেডিক্যালের হারে “ফি” নিয়ে পকেটস্থ করা হচ্ছিল পুরো টাকাটাই। মেডিকেলের তহবিলে জমা পড়ে নি এর এক টাকাও। বাইরের একাংশ দালাল ও রেডিওলজি বিভাগের একাংশ মিলে চালাতেন এই দুর্নীতি। এ পর্যন্ত শুধু অস্থায়ী ছয় কর্মীকে ছাটাই করা হলেও এবার ভিজিলেন্সের তদন্তে এবার অনেক বড় মাথার ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সূত্রটি।