সিইউইটি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে উত্তাল শ্রীভূমি
মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ২৯ মার্চ : দরিদ্র -নিম্নবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের দ্বার রুদ্ধের উদ্দেশ্যে আয়োজিত সিইউইটি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে শনিবার এআইডিএসও’র করিমগঞ্জ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে একটি ছাত্র বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি জেলা কার্যালয় থেকে বের হয়ে নেতাজি মূর্তি পাদোদেশ পর্যন্ত চলে মিছিলে ছাত্রছাত্রীরা স্লোগান তুলেন হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার মার্কের ভিত্তিতে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের স্নাতক স্তরে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে, দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের স্বার্থবিরোধী সিইউইটি পরীক্ষা বাতিল কর।
মিছিল শেষে ছাত্র ছাত্রী এবং জনসাধারণের সম্মুখে বক্তব্য তুলে ধরেন জেলা সম্পাদিক সঞ্চিত শুক্ল। তিনি বলেন, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলোতে স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য ‘এনটিএ’ কর্তৃক আয়োজিত সর্বভারতীয় স্তরের ‘সিইউইটি’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে অথচ ছাত্র ছাত্রীরা এই পরীক্ষায় বসার আবেদন করতে গিয়ে লক্ষ্য করেছেন যে প্রার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্র গতবছরের মতো শুধুমাত্র কাছাড় জেলাতেই রয়েছে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কাছাড় জেলা ছাড়াও করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি, ডিমা হাসাও, কার্বি আংলং জেলার কলেজগুলোও অন্তর্ভুক্ত। এই সিদ্ধান্তের ফলে সেইসব জেলার ছাত্রছাত্রীরা নিজের জেলায় পরীক্ষা দেওয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়াও এই পরীক্ষা ইংরেজি, অসমীয়া, বড়ো মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে অথচ বরাক উপত্যকার তিন জেলায় অসংখ্য স্কুলে ছাত্র ছাত্রীরা উচ্চ মাধ্যমিকে বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে । ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যারা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা উত্তীর্ণ হবে তাদের পক্ষে সিইউইটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রায় অসম্ভব। গতবছর যারা সিইউইটি পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা দিতে আবেদন করেছিল তাদেরকে বরাক উপত্যকার বাইরে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। বাংলা বিষয় নিয়ে যাতে ভবিষ্যতে ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশোনা না করে সেই উদ্দেশ্যে তা করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, আবেদনকারীদের কাছ থেকে অহেতুক অতিরিক্ত হারে ফিজ আদায় করা হয়েছে যা আর্থিক দিক থেকে দুর্বল পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষে বহন করা ভীষণ কষ্টকর। যেসব ছাত্র ছাত্রীদের শিলচরে বা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও পাশ্ববর্তী রাজ্যে গিয়ে পরীক্ষায় বসতে হয় তাদের থাকা, খাওয়া বাবদ প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয় যার জন্য গত বছর গরীব ঘরের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বসতে পারে নি।

এই ব্যবস্থা চালু হলে বিশাল সংখ্যক দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবে না এবং সরকারি কলেজগুলোতে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা হ্রাসের অজুহাতে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই পরীক্ষা আয়োজন এবং এর সেন্টার নির্ধারণের ক্ষেত্রে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের মতামত গ্রহণ করা হয় নি। তিনি বলেন জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০ শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রীয়করণ ও ব্যানিজ্যিকীকরণের যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে সিইউইটি পরীক্ষার আয়োজন।
বরাক উপত্যকা সহ দক্ষিণ আসামের ছাত্র ছাত্রীরা যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, কার্যত উন্নত পরিকাঠামোহীন ও পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব থাকা অবস্থায়ও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে এধরনের সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলেজে ভর্তির সুযোগ প্রদান কতটুকু যুক্তিসঙ্গত। সংগঠনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট দাবি জানানো হয় যে সিইউইটি ইউজি পরীক্ষা বাতিল করে আসাম হায়ার সেকেণ্ডারী কাউন্সিল বা তার সমতূল্য সরকার নিয়ন্ত্রিত বোর্ড থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সকল ছাত্র ছাত্রীদের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় তীব্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।