শিলচরে চলচ্চিত্র নির্মাতার ঋত্বিক ঘটক জন্ম শতবর্ষ অনুষ্ঠান নভেম্বরে

বরাক তরঙ্গ, ১৩ অক্টোবর : ভারতীয় চলচ্চিত্রের আকাশে অন্যতম স্রষ্টা ঋত্বিক ঘটক খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন তা সর্বজন বিদিত। ঘটকের ছবির বিষয় নির্বাচন এবং অন্তর্দৃষ্টির গভীরতা আমাদের সংস্কৃতি ঐতিহ্যের চিন্তাভাবনায় গভীর ভাবে সাড়া জাগায়। আগামী ৪ নভেম্বর এই মহান চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্ম শতবর্ষ শুরু হচ্ছে। ঋত্বিক ঘটক তাঁর সময়ে যথার্থ মর্যাদা পাননি। কিন্তু তিনি ছিলেন একজন কমিটেড চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং অত্যন্ত মৌলিক ব্যক্তিত্বের মানুষ। ঋত্বিকের সবচেয়ে গভীর বেদনার স্থান ছিল দেশভাগ। তাই রাগ, দুঃখ যন্ত্রণা, প্রতিবাদ এবং ঘৃণার প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে তাঁর নির্মিত বেশীর ভাগ ছবিতে। দেশভাগ জনিত উদ্বাস্ত জীবন, হাহাকার, বেঁচে থাকার সংগ্রাম, জীবন যন্ত্রণার কঠোর চিত্র, মূল্যবোধের ক্ষয়িত রূপ তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রে। অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণে জীবন যন্ত্রনার বাস্তব রূপকে শৈল্পিক উপস্থাপনায় গ্রহণযোগ্য রূপে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্রের উপাদানগুলোকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যে নৈপুন্য এবং স্বকীয়তা দেখিয়েছেন, যে স্বতন্ত্র চলচ্চিত্র তত্ত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তা অনবদ্য এবং চর্চার এক গভীর ক্ষেত্র উপস্থিত। তাই ঋত্বিক ঘটক বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আমরা মনে করি আজকের প্রজন্মের সকল ক্ষেত্রের শিল্পীদের ঋত্বিক ঘটকের ছবি দেখা, বোঝা, ছবির গভীরে থাকা অন্তর্নিহিত অর্থের অনুভব ছোঁয়া দরকার। ব্যক্তি ঋত্বিক ঘটক মনন, দর্শন, প্রতিবাদী চরিত্র এবং শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতার যে নিদর্শন রেখে গেছেন তার আমাদের প্রভাবিত করুক, আমাদের স্নায়ুতে সঞ্চারিত হোক। আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ভূবনে, তাঁর ছবি দেখা এবং অনুধাবন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই উৎসাহিত করবে। এবং এই পথে শিল্প ক্ষেত্রে, নাটক, চলচ্চিত্রে সম্ভাবনাময় প্রতিভার বিকাশ ঘটবে এই বিশ্বাস থেকে, “বরাক এন্টারটেইনমেন্ট সোসাইটি”র উদ্যোগে বর্ষ ব্যাপী শতবর্ষ উদযাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। উদযাপনের অঙ্গ হিসাবে থাকছে- আলোচনা সভা, চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং স্থির চিত্র প্রদর্শনী।

উপত্যকাব্যাপী ঋত্বিককে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সংগঠনের এই প্রচেষ্টায় শিলচরের ‘বীক্ষণ সিনে কমিউন’, করিমগঞ্জের  ‘ঋত্বিক সিনে সোসাইটি’ র সহযোগিতা চাইছে আয়োজকরা। বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী, তথা সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোর সার্বিক সহযোগিতা এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিতি প্রত্যাশা করে সোসাইটি। প্রথম অনুষ্ঠান – ৪ নভেম্বর মধ্যসহর সাংস্কৃতিক সংস্থার প্রেক্ষাগৃহে সন্ধ্যা ৫ টায় অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনার বিষয় – ‘ঋত্বিক ঘটকের দেশভাগের উপলব্ধি’, চলচ্চিত্র প্রদর্শন ‘মেঘে ঢাকা তারা’, স্থির চিত্র প্রদর্শনীতে ঋত্বিককের দর্শন ভাবনা ও ছবিতে তার উপস্থিতি।

উদযাপনের এই পরিসরে স্মরণ – শ্রদ্ধার্ঘ্য – চর্চায় নিয়োজিত রয়েছেন ড• অজয় রায়, মনোজ দেব, বুদ্ধ দাস, ড. রাজকুমার মজিনদার, মৃত্যুঞ্জয় দাস, কৃষাণু ভট্টাচার্য, তপোজ্যোতি দাস, সত্যজিৎ গুপ্ত, মসহুরুল বারী, ড. স্মৃতি পাল, ড. হিমাদ্রী শেখর দাস, অনুনয় বড়ভূইয়া, স্বপ্না কর, দীপঙ্কর দাসগুপ্ত, প্রশান্ত ভট্টাচার্য।

Spread the News
error: Content is protected !!