ভাগা-শেরখান সড়কে জামালপুরের ভয়ঙ্কর গর্ত, আতঙ্কে তাড়া
রাজীব মজুমদার, ধলাই।
বরাক তরঙ্গ, ১৫ জুলাই : ভাগা-শেরখান সড়ক, যা সীমান্তবর্তী অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত, তা বর্তমানে চরম অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোমবার ভাগা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে জামালপুর এলাকার পুরাতন কালভার্ট ধসে পড়ায় হঠাৎ করে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা রীতিমতো জনজীবনের জন্য প্রাণঘাতী হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই সড়ক নির্মাণের সময় পুরাতন ও জীর্ণ কালভার্টের উপরেই পিচঢালা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন থেকেই এলাকাবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ সত্ত্বেও যথাযথ মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে কিছুদিন পর থেকেই ঐ অংশটি ক্রমশ নিচু হতে শুরু করে এবং একাধিক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। স্থানীয়দের দাবি, বিগত কয়েক বছরে ওই এলাকায় বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে একাধিক দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু এবং বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এলাকাবাসীরা বলছেন, “প্রতিবার দুর্ঘটনার পর প্রশাসন এসে দেখে যায়, ছবি তোলে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
জামালপুরের গর্তের ঘটনা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়। ভাগা-শেরখান সড়কের অবস্থা সামগ্রিকভাবে বেহাল। বিশেষ করে মিজোরাম সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা এখন জনসাধারণের জন্য চরম আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। সেই অংশজুড়ে ছড়িয়ে আছে একাধিক বৃহৎ গর্ত, যেগুলো বর্ষাকালে রীতিমতো পুকুরে পরিণত হয়। মাঝেমধ্যেই সেসব গর্তে আটকে পড়ছে ছোট ও বড় যানবাহন, সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। জরুরি পরিষেবা যেমন অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের যানবাহনও এসব স্থানে বারবার বিপদে পড়ছে।

এলাকাবাসীদের ক্ষোভ, সড়কটি হাজারো মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা হলেও বছরের পর বছর ধরে তা যথাযথ মেরামত বা সংস্কারের আলো দেখেনি। মাঝে মাঝে খোড়াখুঁড়ি করে সামান্য পিচ ঢালাই করলেও তা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই উঠে যায়।
প্রতিদিন ব্যবসার পণ্য আনতে-নিতে সময় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।
জনগণের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দুর্ঘটনা ঘটলে তারা এসে রিপোর্ট করে চলে যায়। অথচ বাস্তব সমস্যার সমাধানে নেই কোনো স্থায়ী পরিকল্পনা।

একজন শিক্ষক বলেন, এই রাস্তায় প্রতিদিন স্কুলের ছেলেমেয়েরা চলাচল করে। রাস্তায় গর্তে পরে কখন কী ঘটে যাবে, সেই আতঙ্ক নিয়ে বাবা-মা সন্তান পাঠান।” এলাকাবাসী অবিলম্বে পুরো সড়কের পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন ও পুরাতন কালভার্টগুলোর স্থায়ী সংস্কার দাবি করছেন। একই সঙ্গে জামালপুরের ধসে পড়া অংশে জরুরি ভিত্তিতে নতুন কালভার্ট নির্মাণ ও রাস্তা পুনঃনির্মাণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এটা শুধুমাত্র একটি রাস্তার সমস্যা নয়—এটি এখন একটি জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে যে কোনও মুহূর্তে ঘটতে পারে আরও বড় দুর্ঘটনা, যার দায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরকেই নিতে হবে—এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।