বরাকের উন্নয়ন বিভাগ, প্রকারান্তরে বরাক পৃথকীকরণের দাবিকে মান্যতা : বিডিএফ
বরাক, তরঙ্গ, ২১ ডিসেম্বর : মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বরাকের উন্নয়নের জন্য একটি পৃথক বিভাগ চালু হয়েছে এবং এর বিভাগীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বরাকেরই এক বিধায়ক। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বরাকের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে এই বিভাগের দায়বদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দিল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। শনিবার বিডিএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই ব্যাপারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, শুধু বিভাগ তৈরি করলেই হবে না। যদি এই বিভাগ বরাকের কল্যাণ ও উন্নয়নে সদর্থক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয় তবে আগামীতে অবশ্যই তাঁরা এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানাবেন। তিনি বলেন যে বরাকের একটি জ্বলন্ত সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব। এখানে বর্তমানে প্রায় পাঁচ লক্ষ রেজিস্ট্রিকৃত বেকার রয়েছেন। সরকারি চাকরিতে এই উপত্যকার যুবক যুবতীদের নিয়োগের পরিসংখ্যান ন্যুনতম। পাঁচগ্রাম কাগজ কলের মতো শিল্প প্রতিষ্ঠান যা এই উপত্যকার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারত তাও বন্ধ। চাকরির স্বার্থে দরকার অবিলম্বে অন্যান্য শিল্প সম্ভাবনার বাস্তবায়ন। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও জরুরী। অটল বিহারী বাজপেয়ীর স্বপ্নের মহাসড়কের কাজ আটকে রয়েছে। অস্বাভাবিক যানজটের সমস্যায় শহরের নাগরিকরা জেরবার। অবিলম্বে উড়াল সেতুর কাজ শুরু করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, এই উপত্যকার আবেগের সঙ্গে যুক্ত ‘ভাষা শহিদ স্টেশন’ নামকরণের দাবিকে কেন রাজ্য সরকার আটকে রেখেছে তা একেবারেই তাঁদের বোধগম্য নয় ।
প্রদীপ দত্তরায় এদিন বলেন, এই উপত্যকার ক্ষেত্রে যে অবহেলা, বঞ্চনা, বৈষম্যের কথা তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন বরাকের উন্নয়নের জন্য পৃথক বিভাগ খুলে সেই বক্তব্যকে প্রকারান্তরে মান্যতা দিল সরকার। তিনি বলেন, এরকম নজির এই দেশে খুব একটা নেই। এবং সেই হিসেবে এই উদ্যোগের ফলে বরাক পৃথকীকরণের তাঁদের দাবি আরোও একধাপ এগিয়ে গেল। তিনি বলেন তাঁরা আগামী একবছর এই বিভাগের কাজকর্মের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন এবং যদি সত্যিই বরাকের কল্যাণে এটি কাজ করে তবে অবশ্যই অভিনন্দন জানাবেন। অন্যথা তাঁরা বরাক পৃথকীকরণের দাবিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য, এদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নতুন প্রকল্প ঘোষণা করার আগে বরাকের বকেয়া প্রকল্প গুলোর কাজ অবিলম্বে শেষ করার দাবি জানিয়েছেন। বিশেষতঃ চন্দ্রনাথপুর লঙ্কা বিকল্প রেলপথ, মাল্টিমডেল লজিস্টিক পার্ক এবং বরাকের জলপথের উন্নয়নের কথা এদিন তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
বিডিএফ এর অপর আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে বলেন, পূর্বতন মন্ত্রী পরিমলের শুক্লবৈদ্যের আমলে বরাকের কৃষি এবং মাছচাষের উন্নয়নে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়নি। তিনি বলেন, এই উপত্যকায় কৃষি, চা শিল্প তথা মাছ উৎপাদনের যথেষ্ট সম্ভাবনা বর্তমান। যেহেতু বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল বরাক থেকে আবার এই বিভাগের মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন তাই তাদের দাবি বরাকের কৃষির উন্নয়নে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তিন জেলায় অন্তত তিনটি কৃষি মহাবিদ্যালয় খোলা হোক। এই ব্যাপারে সচেষ্ট হবার জন্য তিনি মন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন যে এর আগে মিনি সেক্রেটারিয়েট, রাঙির খাল সংস্কার, বরাক খনন ইত্যাদি বহুবিধ প্রতিশ্রুতি ঘোষিত হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই এই নবগঠিত বিভাগ যাতে কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রকৃত উন্নয়নে সচেষ্ট হয় সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে তদ্বির করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন সজল দেবরায়।