“লাহরী চর”-কে পিকনিক স্পট হিসেবে উদ্বোধন অনামিকা তেওয়ারির

ব্যাপক আয়োজনে শুরু মরিগাঁও জেলা দিবস_____

বরাক তরঙ্গ, ১৩ অক্টোবর : ৩৭তম মরিগাঁও জেলা দিবস পালন করা হল। জেলা কমিশনার অনামিকা তেওয়ারির নির্দেশে এবার মরিগাঁও জেলা দিবসের সূচনা ব্রহ্মপুত্রের নদের মধ্য থেকে শুরু হয়। এই উৎসবমুখর কর্মসূচীতে মরিগাঁও জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রতিফলনের পাশাপাশি অসমের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি সুন্দর প্রদর্শন ফুটে উঠে। ব্রহ্মপুত্রের সৌন্দর্যমণ্ডিত প্রাকৃতিক পরিবেশে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মরিগাঁও জেলার বিধায়ক রমাকান্ত দেউরী, লাহরিঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক আসিফ মহম্মদ নাজার, মরিগাঁও জেলা কমিশনার অনামিকা তেওয়ারি,  পুলিশসুপার হেমন্তকুমার দাসের পাশাপাশি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

এই অনুষ্ঠানে প্রিয় শিল্পী জুবিন গর্গকে তার অবদানের প্রতি সম্মান জানিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর মাধ্যমে কর্মসূচীর শুরু হয়। এরপর, ব্রহ্মপুত্রে নদীর পাড়ে দেবযানি বরদলৈয়ের নেতৃত্বে একটি ১০ সদস্যের মহিলা দলের দ্বারা বরগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অংশের সূত্রপাত হয়। বরগীতের মধুর সুর এবং আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকদের মন জয় করতে সক্ষম হয়।

"লাহরী চর"-কে পিকনিক স্পট হিসেবে উদ্বোধন অনামিকা তেওয়ারির

সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় বরগীত পরিবেশনের পর মৈরাবাড়ি সংহতি শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জিকির- জারি পরিবেশন করা হয়। অসমের ঐতিহ্যবাহী এই সাংস্কৃতিক সঙ্গীতধারা উপস্থিত সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং জেলা দিবসের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিকে প্রতিফলিত করে। এই পরিবেশনাগুলো অসমের সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও গভীরতা প্রকাশ করেছিল। এরপর লাহরিঘাট সমজেলা কমিশনার স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন। তার বক্তৃতায় জেলার ঐক্য ও উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিধায়ক রমাকান্ত দেউরী মরিগাঁও জেলার উন্নয়নের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি জেলার অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়নের জন্য তার প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন। একইভাবে, বিধায়ক আসিফ মহম্মদ নাজারেও তার বক্তৃতায় জেলার উন্নতির জন্য বিভিন্ন দিকের উপর আলোকপাত করেন। তাদের বক্তৃতায় জেলাবাসীর মধ্যে একতা ও সমৃদ্ধির বার্তা প্রচার করা হয়।

এদিন জেলা দিবস উপলক্ষে ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকার র‍্যালি একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে যন্ত্র চালিত নৌকার এক বিশাল র‍্যালি বের করা হয়। এই র‍্যসলিটি নদীর সৌন্দর্যের পাশাপাশি জেলার পর্যটনের সম্ভাবনাকে প্রকাশ করেছিল। র‍্যালিতে অংশগ্রহণকারী নৌকাগুলো ব্রহ্মপুত্রের জলে এক মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টি করেছিল, যা দর্শকদের মনে এক অবিস্মরণীয় ছাপ রেখে যায়। লাহরি চর-কে অনুষ্ঠানে  পিকনিক স্পট হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। জেলা কমিশনার অনামিকা তেওয়ারি পামবড়ী চর-কে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘লাহরী চর’ নাম দিয়ে পিকনিকের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। চারদিকে ব্রহ্মপুত্রের জলের শব্দ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিবেষ্টিত লাহরী চরের মোহনীয় পরিবেশ এটিকে পিকনিকের জন্য একটি আদর্শ স্থান করে তুলেছে। জেলা কমিশনার তেওয়ারী সবাইকে এই চরে পিকনিকে এসে উপভোগ করার আমন্ত্রণ জানান। তার এই ঘোষণা জেলার পর্যটনের সম্ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করেছে। ৩৭তম মরিগাঁও জেলা দিবসের এই অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির একটি সুন্দর সমন্বয় ফুটে উঠে। ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি জেলার ঐক্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে। লাহরি চর-কে পিকনিক স্পট হিসেবে স্বীকৃতি জেলার পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়। এই দিবসের স্মৃতি মরিগাঁও জেলার বাসিন্দাদের মনে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। আজকের এই অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় লাহরিঘাট সমজেলা, লাহরিঘাট সার্কল, লাহরিঘাট সংহতি শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মচারীসহ অন্যান্য বিভাগের কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানানো হয় স্থানীয় জনতা তথা সমগ্র জেলাবাসীর তরফ থেকে।

Spread the News
error: Content is protected !!