ব্রিজ ধসের পর দ্রুত পদক্ষেপ, বহু-সংস্থার সমন্বয়ে কাছাড় জেলা প্রশাসন তৎপর
জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১৯ জুন : হারাং নদীর উপর অবস্থিত ভাঙ্গারপার ব্রিজটি ১৮ জুন ভোররাতে আনুমানিক ২-৩০ থেকে ৩টার মধ্যে হঠাৎ ভেঙে পড়লে কাছাড় জেলার গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে। তবে ঘটনার পরপরই কাছাড় জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে যে দ্রুত ও সুসংগঠিত বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা প্রশাসনিক তৎপরতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব, আইএএস-এর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন অবিলম্বে পূর্ত প এনএইচআইডিসিএলের সহযোগিতায় বিকল্প পথ নির্ধারণ করে। বাবুরবাজার–সোনাপুর–খালাপুল–SK রোড (রংঘর রোড হয়ে) এবং কাটিগড়া চৌরঙ্গী–শান্তিপুর–গণিরগ্রাম–বৰজাত্রাপুর–SK রোড এই দু’টি বিকল্প রুটে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয় মানুষ, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে নদী পারাপারের জন্য নৌকা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। অপরদিকে, প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করতে যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রাখা হয়েছে, যা আগামী দুই মাসের চাহিদা পূরণে সক্ষম। স্থানীয় বাজারে যাতে কোনো কৃত্রিম সংকট বা মূল্যবৃদ্ধি না ঘটে, সে লক্ষ্যে সরবরাহ দপ্তর সক্রিয়ভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করছে।
স্থায়ী সংযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী, NHIDCL এবং PWD-এর যৌথ উদ্যোগে অস্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ জোরকদমে চলছে। এই অস্থায়ী সেতুর উপকরণগুলি ইতিমধ্যে রাঁচি, ঝাড়খণ্ড থেকে আনা হয়েছে এবং স্থলেই সংযোজনের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, বিকল্প রাস্তাগুলির দুর্বল অংশ চিহ্নিত করতে প্রযুক্তিগত দল পাঠানো হয়েছে যাতে প্রয়োজনে দ্রুত সংস্কার সম্ভব হয়।
একইসঙ্গে গ্যামন সেতুর চলতি মেরামত কাজ পুনঃমূল্যায়ন করে ২০ জুলাই এর মধ্যে তা সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত ও নিয়ন্ত্রিত রাখতে পুলিশ ও পরিবহণ বিভাগ সব সময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৫ অনুসারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা সম্ভাব্য ইঞ্জিনিয়ারিং ত্রুটি, সমন্বয়ের অভাব এবং মান লঙ্ঘনের দিকগুলি খতিয়ে দেখে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করবে।
জেলা প্রশাসন সামাজিক মাধ্যমে ভুয়ো তথ্য, গুজব বা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়ে জনসাধারণকে উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতন থাকার এবং শুধুমাত্র সরকারি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকেই তথ্য গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। গুজব ছড়ালে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন বিভাগ ইতিমধ্যে তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জেলাশাসকের কাছে জমা দিয়েছে এবং সেগুলি রাজ্য সরকারের কাছে প্রেরণের জন্য প্রস্তুত। জেলা প্রশাসন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে জনসুরক্ষা, অবকাঠামোগত স্থিতিশীলতা এবং স্বাভাবিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতি তারা অটুটভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
