১৬ বছরের খরা কাটল, রাজ্যসভায় যাচ্ছেন করিমগঞ্জের মিশন
বরাক তরঙ্গ, ২১ আগস্ট : রাজ্যসভায় অসমের দু’টি শূন্য আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করল কেন্দ্রে ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি দল। এই দু’টি আসনে দাবিদারদের সংখ্যা বেশ দীর্ঘই ছিল। তা থেকে ১০ জনের তালিকা তৈরি করে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির কাছে বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়। সেটা বাছাই করে শেষপর্যন্ত মঙ্গলবার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামেশ্বর তেলি এবং প্রাক্তন বিধায়ক মিশনরঞ্জন দাসকে দলীয় প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। দিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি রণে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বুল হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রদেশ বিজেপির সভাপতি ভবেশ কলিতা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সুদীর্ঘ ১৬ বছরের খরা কাটিয়ে ফের রাজ্যসভায় যাচ্ছেন বরাক উপত্যকার বাঙালি প্রথম প্রতিনিধি উত্তর করিমগঞ্জের প্রাক্তন জন্য বিধায়ক ও দলের প্রবীণ নেতা মিশনরঞ্জন দাস।
এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই উপত্যকার বিজেপি শিবির এখন যথেষ্ট উল্লসিত। তবে বিজেপিই তায় নয়, দলের বাইরেও বিভিন্ন মহল থেকে বিজেপি নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে সন্তোষ ব্যক্ত করা হয়েছে। বিজেপি রাজ্যসভার দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণার আগেই মঙ্গলবার টিকিট প্রাপ্তির সম্ভাবনা আঁচ করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন রামেশ্বর তেলি, মিশনরঞ্জন দাস, রেখারানি দাস বড়ো, দিপুরঞ্জন শর্মা। তবে রাজ্য বিজেপি-র সদর দফতর বাজপেয়ী ভবন থেকে বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা যায়, প্রার্থিত্বের দৌড়ে এগিয়ে গেছেন রামেশ্বর এবং মিশন। তখনও দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠক চলছে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং রাজ্য বিজেপি সভাপতি ভবেশ কলিতার। তবে বুধবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন বলে এটুকু স্পষ্ট ছিল যে, এদিনই সন্ধের দিকে দলের রাজ্যসভার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে বিজেপি। সন্ধের একটু পরেই বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি জানিয়ে দেয়, অসমে দলের দুই প্রার্থী রামেশ্বর তেলি এবং মিশনরঞ্জন দাস।
রাজ্যসভার নির্বাচন হচ্ছে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর। তবে কংগ্রেসের তরফে ইতোমধ্যেই প্রার্থী না দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য কোনও দলও প্রার্থী দিচ্ছে এমন ইঙ্গিতও দেয়নি। ফলে বিজেপির দুই প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
মিশনরঞ্জন দাস হবেন রাজ্যসভায় বরাক উপত্যকা থেকে নির্বাচিত ষষ্ঠ প্রতিনিধি। রাজ্যসভায় দীর্ঘদিন ধরে বরাক উপত্যকা থেকে কোনও প্রতিনিধি না থাকায় যে ক্ষোভ ছিল, বিজেপি নেতৃত্বের কৌশলী সিদ্ধান্তে সেটা প্রশমিত হবে বলেই পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এর আগে রাজ্যসভায় বরাক থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন সুরেশ দেব (৫৭-৬২), মহীতোষ পুরকায়স্থ (৬৬-৭২), নৃপতিরঞ্জন চৌধুরী (৭২-৭৮), কমলেন্দু ভট্টাচার্য (৮৪-৯০) ও কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য দু’দফায় (৯৬-২০০২ এবং ২০০২-২০০৮) পর পর রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তাঁর কার্যকাল শেষ হয়েছিল। এরপর থেকে দেড় দশকেরও বেশি সময়কাল রাজ্যসভায় প্রতিনিধিশূন্য ছিল বরাক। ২০২৪-এ এসে সেই খরা কাটছে।
রাজ্যসভায় যাচ্ছেন বরাকের মিশনরঞ্জন দাস এই খবর এদিন ছড়িয়ে পড়তেই বরাকে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের আভাস পাচ্ছেন। রাজ্যসভায় টিকিটের অন্যতম দাবিদার ছিলেন শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ রাজদীপ রায়। রাজ্যে নির্বাচন কেন্দ্র পুনর্বিন্যাসের পর শিলচর লোকসভা আসনটি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় তাঁর পক্ষে এখানে আর টিকিটের দাবিদার হওয়ার সুযোগ ছিল না। এরপরই তিনি রাজ্যসভায় টিকিটের জন্য তৎপর হয়েছিলেন। তবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে নিরাশ করেছেন। দলীয় সিদ্ধান্তে মিশনরঞ্জন দাস যাচ্ছেন রাজ্যসভায়।
উল্লেখ করা যেতে পারে, রাজ্যসভায় মিশনরঞ্জন দাস হবেন করিমগঞ্জ থেকে তৃতীয় প্রতিনিধি। সুরেশ দেব ও নৃপতিরঞ্জন চৌধুরীর পরই তিনি।