শিলচরের প্রথম রেঙ্কিং টিটি খেলোয়াড় অভিজিৎ এন্দো প্রয়াত
বরাক তরঙ্গ, ১৫ মার্চ : একদিন শিলচরে টেবিল টেনিস খেলার ভিত তৈরি হয়েছিল তাঁর হাত ধরে। আজকের দিনে শিলচরে টেবিল টেনিসের উত্থান শুরু হলেও নিভে গেল সেই কিংবদন্তি প্যাডলার অভিজিৎ এন্দোর জীবন দীপ। বৃহস্পতিবার রাত ২-১৯ মিনিট শিলচরের এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। শেষ ১০/১২ দিন ধরে ছিলেন আইসিইউতে। খেলাধুলা অন্ত:প্রাণ অভিজিৎ এন্দো রেখে গেছেন স্ত্রী লেখিকা অঞ্জু এন্দো সহ ছেলে অমাজিত এন্দো, মেয়ে অম্বলিকা দত্ত চৌধুরী, জামাতা সুরজিত চৌধুরী ও নাতনি সুরিনা চৌধুরীকে। ছেলে কিছু দিন আগে অসুস্থ বাবাকে দেখে বিদেশ পাড়ি দিলেও মেয়ে এবং জামাতা রয়েছেন তার পাশেই।
শুক্রবার দুপুরে তাঁর মরদেহ শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়ার আগে নিয়ে আসা হয় তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় জেলা ক্রীড়া সংস্থা, ইন্ডিয়া ক্লাব এবং সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত তাঁর ছেলে বেলার এলিট ক্লাবে। প্রত্যেক জায়গাতেই তাঁর শায়িত দেহের উপর পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়েছে। ডিএসএ-তে সংস্থার সদস্য এবং বাকস সহ অন্য আরও কিছু ক্লাব এবং সংস্থা তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
অভিভাবক হারাল শিলচর ক্রীড়া সংস্থা_____
ডিএসএ-তে আজীবন সদস্যকে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি শিবব্রত দত্ত, সহ সভাপতি আশুতোষ রায়, নন্দদুলাল রায়, সচিব অতনু ভট্টাচার্য, সহসচিব দেবাশিস সোম, অরিজিত গুপ্ত, অজয় রায়, বিকাশ দাস, হিমাদ্রি শেখর দাস, সুখেন সরকার, প্রাক্তন সভাপতি বাবুল হোড়, সুজন দত্ত, অরিন্দম হোড়, শিলচর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান মঞ্জুল দেব প্রমুখ। সকালে প্রয়াতের বাড়িতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। আজ সকাল থেকে শিলচর ডিএসএ-র পতাকা অর্ধনমিত করে রাখা হয়েছে।
১৯৫৭ সালে গঠিত শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রথম টেবিল টেনিস শাখার সচিব ছিলেন তিনি। তবে ডিএসএ গঠনের আরও আগে থেকেই টেবিল টেনিস খেলা শুরু করেছিলেন তিনি। ১৯৫৪ সালে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্ত:জেলা টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় জেলা দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন অভিজিৎ এন্দো। পরের বছর ১৯৫৫ সালে জেলা দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন যোরহাটে। সেবছরই সিনিয়র ক্যাডারের রেঙ্কিং পান অভিজিৎ এন্দো। রাজ্যে তাঁর রেঙ্ক ছিল অষ্টম।
ছাত্র জীবন থেকেই লেখা পড়ার পাশাপাশি শুরু হয়ে ছিল ক্রীড়া চর্চা। শুধু টিটিই নয়, চুটিয়ে ফুটবলও খেলেছেন। শিলচর গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৫৩ সালে মাধ্যমিক পাশ করার পর ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ইন্ডিয়া ক্লাবে। কিন্তু শিলচরে আধুনিক টেবিল টেনিসের শ্রষ্ঠা ধীরেন দাসের হাত ধরে তিনি ঝুঁকে পড়েন ছোট বলের দিকেই। মনযোগ সহকারে শুরু করেন পিংপং খেলা (টেবিল টেনিসের ততকালীন নাম)। ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত আন্ত:কলেজ টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় জিসি কলেজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। ১৯৫৮ সালে জিসি কলেজ থেকেই বিএ পাশ করেন। অসম সরকারের অধীনে শিল্প বিভাগে চাকরি করেছেন। সকালেই তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে ক্রীড়া মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে।