শ্রীভূমিতে বিশাল সমাবেশ সিটুর, ২০ মে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট সফল করার আহ্বান
মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ১৯ মার্চ : শ্রীভূমি আম্বেদকর পার্কে সিআইটিইউ’র ডাকে শ্রমজীবী মানুষের এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসংগঠিত শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, প্রকল্প কর্মী, মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মী, আশা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা বৃহৎ সংখ্যায় সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। বুধবার সকাল ১১টায় সমাবেশের কাজ শুরু হয়। লাল পতাকা হাতে নিয়ে সংগঠিত ভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমজীবী মানুষ সমাবেশে যোগ দেন। রমজানের দিনভর উপবাসের মধ্যেও প্রচুর সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের পুরুষ ও মহিলা শ্রমজীবী মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ করিমগঞ্জ জেলা সম্পাদক তরুন গুহ, শ্রমজীবী নেতা নির্মল দে, প্রমুখ। তরুন গুহ বলেন, নির্মাণ শ্রমিক কল্যান বোর্ড নির্মাণ শ্রমিকদের যাবতীয় কাজের জন্য নির্মাণ সখী নামে নতুন পোর্টাল চালু করেছেন। এ নিয়ে প্রচার সর্বস্ব রাজ্য বিজেপি সরকারের বিজ্ঞাপনের ঢাক পেটানো শুরু হয়ে গেছে। পোর্টাল এখনও চালু হয়নি। তার আগেই নির্মাণ শ্রমিক কল্যান বোর্ড আগের পোর্টালের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। রাজ্য সরকারের বিজ্ঞাপনের দৌলতে দালালরা নেমেছে। কাজ করে দেওয়ার নামে গরীব নির্মাণ শ্রমিকদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নতুন পোর্টালে যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে। নতুন শ্রমিকের পঞ্জীকরণকে অহেতুক জটিল করা হয়েছে যা নির্মণ শ্রমিকদের অসুবিধায় ফেলবে। নির্মাণ শ্রমিকদের পেনশন, ছাত্রবৃত্তি, চিকিৎসা সহায়তা, মৃতের আর্থিক সহায়তা সহ আর্থিক সুবিধাগুলি ২০২২ সন থেকে বন্ধ রেখেছে বোর্ড। রাজ্য সরকার এককালীন বাৎসরিক চিকিৎসা সহায়তা উঠিয়ে নিয়েছে। এই বছর রাজ্য বাজেটে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়েছে সরকার। চিকিৎসা, শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ কমেছে। ফলে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সুবিধাগুলি ভবিষ্যতে আরো কমবে।অথচ ভোটের রাজনীতি করতে সরকারের অর্থের অভাব নেই। নির্মাণ শ্রমিকদের বকেয়া আর্থিক সুবিধাগুলি অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন সরকারি কর্মচারীদের পেনশন উঠিয়ে দিয়েছে সরকার, চালু করেছে শেয়ার বাজার নির্ভর নতুন পেনশন প্রকল্প। নির্মাণ শ্রমিকদের পেনশন সময়মতো দিচ্ছে না। আন্দোলন করেই পেনশন সহ নির্মাণ শ্রমিকদের সুবিধাগুলি অক্ষুন্ন রাখতে হবে বলে তিনি জানান।
নির্মল দে বলেন, এই সমাবেশে প্রচুর প্রকল্প কর্মীরা এসেছেন। তাঁরা স্বল্প মজুরিতে সরকারের কাজ করে যাচ্ছেন। এই দেশেরই অন্য রাজ্যগুলিতে তারা অনেক বেশি মজুরি পান। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রকল্প কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষনা করলেও আজও তাদের মজুরি বৃদ্ধি হয় নি। তিনি বলেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা বিগত বছরে রাজ্যে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন,মধ্যাহ্ন ভোজন কর্মীরাও বীরত্বপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে রন্ধন প্রকল্পের বেসরকারিকরণ রুখেছেন। তবু এই বিপদ শেষ হয়নি। রাজ্য সরকার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সবসময় এদিকে নজর রাখতে হবে।

তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মুখে যাই বলুন প্রকল্প কর্মীদের আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করেই তিনি বর্ধিত মজুরির ঘোষনা করেছেন। নির্মল দে স্পষ্টভাবে বলেন প্রকল্প কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন চলবে। তিনি আরো বলেন প্রকল্প কর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা দেয় না সরকার। তাই তারা ন্যূনতম মজুরি থেকে বঞ্চিত। এই সরকার ধনীদের সরকার। এরা গরীব, মধ্যবিত্ত মানুষ, সরকারি কর্মচারীর কথা ভাবে না। সরকার এই ঐক্যকে ভয় পায়,সরকার যাদের স্বার্থ রক্ষা করছে সেই ধনিক গোষ্ঠী আম্বানি, আদানি, টাটা,বিড়লারা গরীব মানুষের ঐক্যকে ভয় পায়। তাই এরা সবসময়ে প্রচার করে মুসলিম, হিন্দুর শত্রু, বাঙালি অসমিয়ার শত্রু, গরীব মানুষের শত্রু ধনী, বড়লোকদের আড়াল করে রাখে। আমাদের প্রতিবেশি বাংলাদেশেও একই রাজনীতি চলছে।

তিনি বলেন, দেশ এই মুহুর্তে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। দেশে প্রথম কোন হিন্দুত্ববাদী-কর্পোরেট সখ্যতার শক্তি দেশ চালাচ্ছে। তারা দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান ধংস করতে চায়। দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করতে চায়। শ্রমজীবী মানুষকে নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্যই এই শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এদেশে হিন্দুত্ববাদী আর এসএস যে কাজ করছে পাশের বাংলাদেশে মুসলীম জামাত একই কাজ করছে। লাল ঝাণ্ডা যেমন শ্রমিকদের লড়তে শেখায় তেমনি মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। লাল ঝাণ্ডা বিজেপি আরএসএসের ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে মানুষের ঐক্যের কথা বলে। লাল ঝাণ্ডাই প্রকৃত দেশপ্রেমী বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, গতকাল নয়া দিল্লিতে ভারতবর্ষের ট্রেড ইউনিয়নগুলি এক যৌথ অভিবর্তন থেকে বিজেপি সরকারের জনবিরোধী নীতি, শ্রম কোড বাতিল, সবার জন্য পুরানো পেনশন, প্রকল্প কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধি,অসংগঠিত শ্রমিকের দাবি সহ ১৭ দফা দাবিতে আগামী ২০ মে দেশব্যাপী একদিনের সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। তিনি করিমগঞ্জ জেলায় এই ধর্মঘটকে সফল করার আহ্বান জানান। সমাবেশ শেষে নির্মাণ শ্রমিক, রন্ধন কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের তিনটি পৃথক মিছিল শহর পরিক্রমা করে নিজ নিজ দাবি সম্বলিত স্মারকপত্র জেলা শ্রম আধিকারিক, জেলা মিশন কো-অর্ডিনেটর সমগ্র শিক্ষা, জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিকের হাতে তুলে দেন।