শান্তি একটি সম্মিলিত দায়িত্ব : ডিসি মৃদুল যাদব
ঈদ-উল আজহা উপলক্ষে জেলাপ্রশাসনের বৈঠক
জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ৪ জুন : কাছাড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঈদ-উল আজহাকে সামনে রেখে বুধবার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় শিলচরের জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের পুরাতন হলে। বৈঠকের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব বলেন, “শান্তি একটি সম্মিলিত দায়িত্ব। ঈদ-উল আজহার মতো উৎসবগুলি আমাদের সহনশীলতা, সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার মানসিকতাকে পুনর্ব্যক্ত করার সুযোগ।”
তিনি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সমাজের বিশিষ্ট প্রতিনিধিদের আহ্বান জানান যাতে সমন্বিত উদ্যোগে সম্পূর্ণ জেলাজুড়ে একটি শান্তিপূর্ণ, আইনানুগ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব উদযাপন সম্ভব হয়। জেলা প্রশাসন কড়াভাবে অসম গো-সংরক্ষণ আইন, ২০২১ কার্যকর করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। এ প্রসঙ্গে জেলা আয়ুক্ত যাদব বলেন, উৎসব চলাকালীন অবৈধভাবে গবাদি পশু জবাই বা পরিবহন রোধে কঠোর নজরদারি চালানো হবে। তিনি জানান, ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরের গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রতিটি রাজস্ব চক্রে এক জন পশু চিকিৎসক এবং একজন পুলিশ সাব-ইনস্পেক্টরকে নিয়োগ করা হবে আইনানুগতা নিশ্চিত করতে।
গো-মাংস এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের বিক্রি ও পরিবহন প্রসঙ্গে সতর্ক থাকার পাশাপাশি প্রশাসনের তল্লাশি, বাজেয়াপ্ত ও গ্রেফতারের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন করা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত কাছাড়ের পুলিশসুপার নোমাল মাহাত্তা। তিনি সম্প্রীতি রক্ষায় জনগণের সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত রোডে ঘটে যাওয়া একটি সাম্প্রদায়িক ঘটনার উদাহরণ টেনে বলেন, “এবার আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। জনগণের আস্থা ও সম্প্রীতির ভিত্তিতেই যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি প্রতিহত করা সম্ভব।” তিনি মালুগ্রাম, তারাপুর, রংপুর, অম্বিকাপট্টি ও পঞ্চায়েত রোড-সহ স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা মোতায়েনের আশ্বাস দেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো বা উস্কানিমূলক কনটেন্ট পোস্ট করার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

এর আগে, সভার শুরুতে অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত অন্তরা সেন, বিগত বছরের বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ পুনর্বিবেচনা করে এ বছরের সমন্বয় প্রচেষ্টার বাড়তি গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরকে জল সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন এবং বিদ্যুৎ দপ্তরকে ৬ ও ৭ জুন বিদ্যুৎ সরবরাহ অটুট রাখার পরামর্শ দেন।
স্বাস্থ্য বিভাগকে সোনাবাড়িঘাট, রামনগর, কলেজ রোড ও মালুগ্রাম এলাকায় জরুরি পরিষেবা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়। অশান্তি এড়াতে আবগারি বিভাগকে নজরদারি জোরদার করতে বলা হয়, এবং জেলা পরিবহন দপ্তরকে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ তৎপরতা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিটি থানা এলাকায় একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে যাতে ২৪ ঘণ্টা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা যায়।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে হেলমেটবিহীন চালনা ও দ্রুতগতির বিরুদ্ধে পুলিশ বিভাগ কড়া ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান পুলিশসুপার।

বৈঠকের শেষে, জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব কাছাড়বাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান এবং বলেন, “এই পবিত্র উৎসবে আমরা যেন আত্মত্যাগ, সহমর্মিতা ও ঐক্যের মাধ্যমে এক নতুন শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে পারি।” তিনি সকল দপ্তর, নাগরিক সমাজ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক অথচ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান, যাতে ঈদ-উল আজহা শান্তি, নিরাপত্তা ও আনন্দের প্রতীক হয়ে ওঠে।