বাজারিছড়ার কালাছড়া হসপিটাল রোড বারোয়ারি পূজা কমিটির বর্ণাঢ্য আয়োজনে শারদোৎসবের আমেজ

৪৫ বছরের ঐতিহ্য, থিম-মণ্ডপে চমক, প্রতিমায় নৈপুণ্যের ছাপ

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ১৪ সেপ্টেম্বর : আকাশে শরতের মেঘ, মাঠে সাদা কাশফুলের দোলা, চারদিকে শিউলির গন্ধ আর ঢাকের আওয়াজে যেন বাজছে আগমণীর সুর। মা দুর্গার ভক্তপ্রাণ সনাতনী হিন্দুগণের পুজোর দিন গোনা শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। মা আসছেন, বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দরজায় কড়া নাড়ছে। এরই মাঝে পাথারকান্দি বিধানসভা  কেন্দ্রের লোয়াইরপোয়া ব্লকের বাজারিছড়া কালাছড়া হসপিটাল রোড বারোয়ারি পূজা কমিটি ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জায়। প্রায় সাড়ে চার দশকের ঐতিহ্য বহন করা এই পূজা এখন শুধু আঞ্চলিক নয়, এক অনন্য সামাজিক উৎসব যেখানে থিম মণ্ডপ, শিল্পীর নিপুণ ছোঁয়া আর সর্বজনীন অংশগ্রহণ মিলিয়ে সৃষ্টি করে এক জাদুকরী আবহ।

আগমণী হাওয়ায় ভাসছে গোটা বাংলার আকাশ। ঢাকের তালে, কাশফুলের দোলায় আর শিউলির সুগন্ধে জানান দিচ্ছে মা দুর্গার আগমন। সমাগত শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে এখন উৎসবের আবহ। দিন গুনছে মানুষ, হাতে আর মাত্র ক’দিন। এরই মধ্যে পাথারকান্দি কেন্দ্রের লোয়াইরপোয়া ব্লকের অন্যতম উল্লেখযোগ্য বারোয়ারি পুজো মণ্ডপ বাজারিছড়ার কালাছড়া হসপিটাল রোড বারোয়ারি পূজা কমিটি শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।

প্রতি বছর নিত্যনতুন থিম নিয়ে দর্শনার্থীদের চমক দেয় এই পূজা কমিটি। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। কমিটির সভাপতি মিহির কর ও সম্পাদক অমিত দেব জানালেন এবারের মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে এক কাল্পনিক মন্দিরের আদলে, যেখানে থাকবে শিল্পীর কল্পনা, দক্ষতা ও নৈপুণ্যের বিশেষ ছাপ। মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমাতেও থাকবে অভিনবত্ব, যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে বলেই আশা আয়োজকদের।

আজ থেকে প্রায় ৪৫ বছর আগে ছোট আকারে শুরু হয়েছিল এই পুজো। তখন তেমন চাকচিক্য ছিল না, কিন্তু স্বাত্তিকতার ধারাটিকে প্রথম থেকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আয়োজনের পরিধি, সজ্জার বাহার ও জনপ্রিয়তা। এখন এটি লোয়াইরপোয়া ব্লকের অন্যতম আকর্ষণীয় বারোয়ারি পূজা।

আয়োজকরা জানান, এই পুজো সর্বজনীন। স্থানীয় পরিবার ও দোকানদারদের অংশগ্রহণেই এর আয়োজন হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এখানে বাহির থেকে চাঁদা তোলার রীতি নেই। তা সত্ত্বেও প্রতিবছর দু’ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা বাজেটে জমকালো আয়োজন হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়।

পুজোর দিনগুলোতে প্রতিদিন ঢাকির দল থাকছে। মণ্ডপে আগত প্রত্যেক দর্শনার্থীর জন্য থাকছে মায়ের পাঁচ অন্নের প্রসাদ। দশমীতে দেবী বিসর্জনের আগে এক বিশেষ শোভাযাত্রার আয়োজন থাকবে— গোটা এলাকা প্রদক্ষিণ করবে প্রতিমা। ঢাকের তালে কোমর দুলিয়ে শিশুরা থেকে প্রবীণরা, নারী-পুরুষ সকলে মিলেই ভাসানকে আনন্দময় করে তুলবেন। আয়োজকদের দাবি, এর মধ্য দিয়ে প্রকৃত বাঙালিয়ানা বজায় থাকে।

এবারের পূজা কমিটির সভাপতি মিহির কর, সম্পাদক অমিত দেব ছাড়াও সহ-সভাপতি হিসেবে রয়েছেন অমি পাল, কোষাধ্যক্ষ অমিও দাস, সহ কোষাধ্যক্ষ শঙ্কু দাস, সহ সম্পাদক পল্লব দে ও রতন চক্রবর্তী। সদস্য হিসেবে রয়েছেন রাজ দে, অর্পণ দে, গৌতম নন্দী, রাজীব নন্দী, টুবলু দেব, রাজু নাগ, পার্থ সারথি নাগ, সানি দাস, তুর্জ দাস, ধনু কর, সুমিত নন্দী, সুজয় পাল টুটন নাগ প্রমুখ।এছাড়া উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল, জেলা বিজেপি উপসভাপতি হৃষিকেশ নন্দী, লোয়াইরপোয়া জেলা পরিষদ সদস্য স্বপন কুমার দাস, সুখময় পাল, দিলীপ নাগ, কনক চক্রবর্তী, সন্দীপ কর পুরকায়স্ত, বেনু দেব, তনু দেব, নির্মল সিংহ, শ্যামাপদ পাল, বাবু সিংহ, রঞ্জন পাল, নিটু রায়, অনুপ কুমার দে, মনিষ ভূষণ পাল, অলক দে, টিকেন্দ্রজিত সিংহ, শ্যাম সিংহ, রাজু সিংহ, সিদ্ধার্থ দাস, অমিতাভ দে, চন্দন দেবরায়, সুদীপ পাল, দেবাশিস পাল, বাবলা দে প্রমুখ।

মণ্ডপ নির্মাণে স্থানীয় শিল্পী দেবাশিস রায়ের সৃজনশীলতাই থাকবে বিশেষ আকর্ষণ। শিল্পীর হাতের কারুকাজে প্রাণ পাবে থিম মণ্ডপ।

আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মা দুর্গার আগমন মানেই মিলনের উৎসব, আনন্দের উৎসব। আমাদের চেষ্টা সকলের অংশগ্রহণে পূজার এই কয়েকদিনকে স্মরণীয় করে তোলা।

Spread the News
error: Content is protected !!