বাঙালি জাতির ঐক্য ভাঙার ষড়যন্ত্র নয়, এটি বিপজ্জনক ও কুটিল রাজনৈতিক চাল : হাফিজ রশিদ
বরাক তরঙ্গ, ৭ আগস্ট : বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যর সাম্প্রদায়িক ও বিভাজনমুলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গুয়াহাটি হাইকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট তথা নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতি (CRPC) আসাম-র প্রধান উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ আহমদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিবৃতিতে চৌধুরী বলেন, মালব্য যে পদ্ধতিতে একই বাংলা ভাষাকে ধর্মের ভিত্তিতে “হিন্দু ভাষা” এবং “বাংলাদেশি ভাষা” হিসাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন, তা কেবল বাঙালি জাতির ঐক্য ভাঙার ষড়যন্ত্র নয়, বরং একটি বিপজ্জনক ও কুটিল রাজনৈতিক চাল।
তিনি আরও বলেন, মালব্য যে সিলেটি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী ও তাদের উপভাষাকে বিদ্রূপ ও কটাক্ষের পাত্র বানানোর চেষ্টা করেছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই অপচেষ্টা বাংলার আঞ্চলিকতা, জাতপাত ও উপজাতিকে হাতিয়ার করে বৃহত্তর বাঙালি পরিচিতিকে ভাঙার ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
হাফিজ চৌধুরী একে রাষ্ট্র, সমাজ এবং সংবিধানবিরোধী প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এই ইস্যুতে আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) মামলা গ্রহণ করা উচিত, যাতে এধরনের মিথ্যা ও বিভেদমূলক প্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
তিনি সমগ্র বাঙালি জাতিকে—ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে—ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিচিতি রক্ষার সংগ্রামে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান। তার বক্তব্য, “ভাষা কখনো ব্লেড নয়, ভাষা একটি সেতু—মানবতার, ঐক্যের ও আত্মপরিচয়ের।”
এছাড়াও, অসম সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী CAA-র আওতায় ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৪-র পূর্বে আসা ৬টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের—হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও পারসি—মানুষদের বিরুদ্ধে ফরেনার্স ট্রাইবুন্যালে চলমান সব মামলা প্রত্যাহার করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা প্রসঙ্গে হাফিজ চৌধুরী বলেন, কেবল মামলার প্রত্যাহারেই নাগরিকত্বের সমস্যার সমাধান হবে না।
তিনি বলেন, নাগরিকত্বের পদ্ধতিটি এতটাই জটিল ও দুর্বোধ্য, যে একজন সাধারণ ও বঞ্চিত মানুষ পদ্ধতিগতভাবে ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভে সক্ষম হবেন না।
সরকার যদি সত্যিই দেশভাগজনিত শরণার্থী ও সংখ্যালঘুদের কল্যাণে আন্তরিক হয়, তাহলে তা প্রমাণ করতে হবে সহজীকরণে। তিনি দাবি জানান, নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য কেবলমাত্র হলফনামা ও আত্মঘোষণাকেই যথেষ্ট বলে গণ্য করা হোক, কোনো কাটা-তারিখ, কাগজপত্র কিংবা আইনি জটিলতার প্রয়োজন যেন না থাকে।