‘নিয়ুত মইনা’ একটি উপকারভোগী প্রকল্প নয়, বরং বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদের প্রকল্প : উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী

৬ আগস্ট : অসম সরকার কর্তৃক প্রচলিত ‘মুখ্যমন্ত্রীর নিযুত মইনা’ প্রকল্প বাল্যবিবাহ রোধে গৃহীত এক প্ৰকল্প, বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। বুধবার রাজ্য ব্যাপী ‘মুখ্যমন্ত্রীর নিযুত মইনা ২.০’ প্রকল্পের ফর্ম বিতরণের সূচনা করে প্ৰদত্ত ভাষণে ড. হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা বলেন, রাজ্য সরকারের চলমান প্রত্যেকটি প্রকল্পে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন অসমের অগ্রগামী যাত্রায় ছাত্রীসমাজকে ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণের আহ্বানও জানিয়েছেন ড. শর্মা। গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরিঞ্চি কুমার বরুয়া অডিটোরিয়ামে আয়োজিত কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে ‘মুখ্যমন্ত্রীর নিযুত মইনা ২.০’ প্রকল্পের শীর্ষক প্রকল্পের জন্য রাজ্যব্যাপী ফর্ম বিতরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ রণোজ পেগু, গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ননীগোপাল মহন্ত, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব নারায়ণ কোঁওর, একাধিক মন্ত্রী, বিধায়ক, অধ্যক্ষ-শিক্ষক ও ছাত্রকুল এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বেশ কয়েকজন সুবিধাপ্রাপক ছাত্রীর হাতে এই প্ৰকল্পের ফর্ম তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব।

এই প্রকল্পের বিস্তারিত ব্যাখা করে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা প্রথমে ‘নিযুত মইনা আঁচনি’-র মানে বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘নিযুত’ মানে ‘দশ লক্ষ’ এবং ‘মইনা’ মানে ‘শিশুকন্যা বা বালিকা’। এই প্রকল্পে দশ লক্ষ কন্যা শিক্ষাৰ্থীকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাল্যবিবাহ রোধ করতে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। বালিকা কন্যাদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার পথ প্রশস্ত করতে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ। এই প্রকল্পের অধীনে চলতি ২০২৫-২৬ অৰ্থবৰ্ষে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের চার লক্ষ শিক্ষার্থীকে মাসিক যথাক্ৰমে এক হাজার টাকা (উচ্চ মাধ্যমিক), ১,২৫০ টাকা (স্নাতক) এবং ২,৫০০ টাকা (স্নাতকোত্তর অর্থাৎ বিএড/এমএ/এমএসসি/এম.কম) করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিযুত মইনা’ প্রকল্পটি রাজ্যের ছাত্রীদের আকাশ স্পর্শ করার আকাঙ্খা পূরণের এক বিশাল উৎস। বৃহৎ আকারে সামাজিক পরিবর্তন আনার জন্য এই প্রকল্পের সম্ভাবনা বিবেচনা করে নিযুত মইনা ২.০-এর প্যারামিটার আরও বেশি সুবিধাভোগীকে আওতায় আনতে প্রসারিত করা হয়েছে।

নিযুত মইনা ১.০ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাদেশিক কলেজগুলিকে কভার করেছিল জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবার অসমে অবস্থিত দুটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় যথাক্ৰমে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিলচরে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের এই প্রকল্পের আওতায় আনার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ গত বছর ১.৬০ লক্ষ ছাত্রী এই প্রকল্পের বলে উপকৃত হয়েছিল।

তিনি বলেন, তবে এ বছর এই প্রকল্পের আওতায় চার লক্ষ ছাত্ৰীকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। বলেন, নিযুত মইনা ২.০-এর অধীনে আনা হবে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ, স্নাতক প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ এবং স্নাতকোত্তর প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীদের। আগামী বছর স্নাতক-এর অন্তিম বর্ষের ছাত্রীদের এই প্রকল্পের আওতায় এনে ১০০ শতাংশ কভারেজ নিশ্চিত করা হবে। পরবর্তীতে মোট ১০ লক্ষ ছাত্রীকে নিযুত মইনার বলে আর্থিক সহায়তা করা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী ড. শৰ্মা আরও বলেন, বহু মা-বাবা তাঁদের মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা দিতে চান, অথচ আর্থিক অনটনের দরুন এই আশা পূরণ করত পরেন না, তাঁদের জন্য নিযুত মইনা আশা ও অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, নিযুত মইনা প্রকল্প এখন রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং স্ব-অর্থায়ন কোর্সে নথিভুক্ত ছাত্রীদের কভার করবে৷

Spread the News
error: Content is protected !!