ভাষা নিয়ে মিথ্যা বিভাজন তৈরি করে বাঙালিকে দ্বিধাবিভক্ত করার ষড়যন্ত্র : বিধায়ক দাশ পুরকায়স্থ

বরাক তরঙ্গ, ৬ আগস্ট : বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যের সিলেটি ভাষাকে নিয়ে মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান সিআরপিসি আসাম সাধারণ সম্পাদক তথা লেখক বিধায়ক দাশ পুরকায়স্থ। তিনি এক প্রেসবার্তায় প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মালব্য জানেন, ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালি জাতি ভাষার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ। তবু তিনি চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি—হিন্দু বাঙালির ভাষা বনাম মুসলিম বাঙালির ভাষা এই মিথ্যা বিভাজন তৈরি করে বাঙালিকে দ্বিধাবিভক্ত করতে চেয়েছেন। এর পাশাপাশি, মালব্য অত্যন্ত কুটিলভাবে সিলেটি জনগোষ্ঠী এবং তাঁদের ভাষাকেও নিশানা করেছেন। উদ্দেশ্য স্পষ্ট—বিভিন্ন উপভাষার মাঝে বিভেদ, জাতপাত ভিত্তিক বিভাজন, এবং বাঙালির সামগ্রিক পরিচয়ের ভিত নাড়িয়ে দেওয়া।

লেখক দাশপুরকায়স্থ বলেন, অমিত মালব্য সম্পূর্ণ সচেতনভাবে এবং সুচতুর রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশে একটি ‘পিপাসার্ত কাক’-এর মতো আচরণ করেছেন। তবে পার্থক্য এই—কাকটি ছিল জলের তৃষ্ণায় অস্থির, আর মালব্য রাজনৈতিক ক্ষমতা ও আধিপত্য অর্জনের মরিয়া ছক আঁকতে ব্যস্ত। তিনি যে পাথর ছুঁড়েছেন, তার নাম ‘বাংলাদেশি ভাষা’—এটি তিনি ছুড়েছেন বাঙালি জাতিসত্তার কলসিতে, উদ্দেশ্য একটাই: দেখতে চান, ভাষাকে কেন্দ্র করে বাঙালির মধ্যে কতটা বিভাজন ঘটানো যায়। তিনি বুঝে শুনেই এমন এক ইস্যুতে আঘাত হেনেছেন, যেটি বাঙালির অস্তিত্ব ও ঐক্যের কেন্দ্রে—মাতৃভাষা। তাঁর এই বোধ নেই যে ভাষা কখনও ধর্মে বিভক্ত হয় না। ভাষা মানুষের আত্মার পরিচয়—তা জাত বা ধর্মের বেড়াজালে বাধা পড়ে না। সমাজকে ধর্ম, ভাষা, জাতপাত ইত্যাদির ভিত্তিতে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার নোংরা রাজনীতিতে মেতে উঠেছেন।

বিধায়ক দাশ পুরকায়স্থ এও বলেন, এটা রাজনীতি নয়, এটা হল জাতিগত স্থিতিশীলতা ধ্বংসের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। মালব্যর মন্তব্য সাময়িকভাবে কিছু বিভাজনপ্রবণ মানসিকতার মানুষকে উৎসাহিত করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে কোনও শক্তিই—যতোই কৌশলী বা সাম্প্রদায়িক হোক না কেন—বাঙালি জাতিকে ভেঙে দিতে পারবে না। তিনি বলেন, “আমাদের পরিচয় ভঙ্গুর নয়, আমাদের ভাষা কোনো দরকষাকষির বস্তু নয়, আমাদের সংস্কৃতি বিক্রির পণ্য নয়।“

বলেন, বাঙালির রক্তে মিশে আছে শতাব্দীর ইতিহাস, আত্মত্যাগ, সাহিত্য আর অহঙ্কার। কোনও রাজনৈতিক প্ররোচনা বা প্রোপাগান্ডা আমাদের ঐতিহ্যকে মুছে ফেলতে পারবে না, আমাদের ভাষাকে খণ্ডিত করতে পারবে না, কিংবা আমাদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে পারবে না। যাঁরা আমাদের ভাঙতে চায়, তারা আসলে বাঙালিত্বের গভীরতা, ঐক্য আর অদম্য চেতনার পরিচয়ই জানে না। বাঙালির আত্মপরিচয়—অতি গভীর, ঐক্য—অতি দৃঢ়, আর চেতনা—অতি অগ্নিশিখার মতো জ্বলন্ত।

Spread the News
error: Content is protected !!