নিখোঁজ স্বামীর খোঁজে নেমে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কিনারা পুলিশের, স্ত্রী ও তার প্রেমিক গ্রেফতার
৩ আগস্ট : বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ঘিরে আবারও নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এবার ঘটনার কিনারা করতে একবছর সময় লাগল পুলিশের। নিখোঁজ যুবকের খোঁজে তল্লাশি অভিযান চালাতে গিয়েই সন্দেহ হয়েছিল তাদের। অবশেষে একবছর পর সেই যুবকের খুনে অভিযুক্ত তিনজনের সন্ধান পেল পুলিশ। স্ত্রী ও প্রেমিককে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে তারা। স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং দাম্পত্য কলহের জন্যেই যুবককে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দিল্লি পুলিশ এক যুবতী ও তাঁর প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে। স্বামীকে নৃশংসভাবে খুনের পর, দেহটি নর্দমায় ফেলে দিয়েছিলেন দুই অভিযুক্ত। দেহটি উদ্ধার করে হরিয়ানার সোনিপাত থেকে ওই যুবতী ও তাঁর প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতেরা হলেন, সোনিয়া (৩৪), তিনি দিল্লির আলিপুরের বাসিন্দা এবং তাঁর প্রেমিক রোহিত (২৮), তিনি সোনিপাতের বাসিন্দা। এই হত্যাকাণ্ডের আরও এক অভিযুক্ত বিজয় ঘটনার পর থেকে পলাতক। তাঁর খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
ডেপুটি কমিশনারের অফ পুলিশ হর্ষ ইন্দোরা জানিয়েছেন, মৃত যুবকের নাম প্রীতম প্রকাশ (৪২)। তাঁর বিরুদ্ধেও একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল অতীতে। পুলিশের খাতায় একাধিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নাম ছিল তাঁর। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ তুলেছেন তাঁর স্ত্রী।
দীর্ঘ পুলিশি জেরায় সোনিয়া জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে জুলাই মাসে সোনিপাতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন প্রীতম। তাঁকে ফিরিয়ে আনতে। এর আগে তাঁদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। সেদিনেও দু’জনের মধ্যে অশান্তি হয়। শেষমেশ প্রীতম একাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সেদিনই বোনের দেওর বিজয়কে প্রীতমকে খুন করার প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি এই খুনের জন্য ৫০ হাজার টাকা দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
সেই রাতে সোনিয়া একাই ঘুমাচ্ছিলেন ছাদে। চুপিসারে ঘরে ঢুকে প্রীতমকে কুপিয়ে খুন করেন বিজয়। এরপর দেহটি নর্দমায় ফেলে দেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে সোনিয়াকে প্রীতমের দেহ ফেলে দেওয়ার ভিডিওটি পাঠিয়েছিলেন বিজয়। পরে যদিও সেটা মুছে দেন। ২০ জুলাই আলিপুরে থানায় প্রীতমের নিখোঁজ ডায়েরি করেন সোনিয়া। প্রথম নিখোঁজ ব্যক্তির তল্লাশি শুরু করেছিল পুলিশ। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে ঘটনাটি ঘিরে সন্দেহ গাঢ় হয় পুলিশের।
প্রায় এক বছর পর প্রীতমের ফোনটি চালু অবস্থায় দেখে পুলিশ। লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে, সোনিপাতে ফোনটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে পৌঁছতেই রোহিতকে আটক করে তারা। প্রথম বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও, দীর্ঘ পুলিশি জেরায় কান্নায় ভেঙে পড়ে খুনের ঘটনাটি স্বীকার করে নেন তিনি। রোহিত পুলিশকে জানান, তিনি ও সোনিয়া কয়েক বছর ধরেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত। তাঁরাই প্রীতমকে খুনের পরিকল্পনা করেন। প্রীতমকে খুনের জন্য সোনিয়া যে বিজয়কে টাকা দিয়েছিলেন, তাও জানিয়ে দেন রোহিত।
ঠিক সময়েই হরিয়ানা পুলিশ ওই এলাকা থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক পুরুষের দেহ উদ্ধার করে। কিন্তু সেটি শনাক্ত করা যায়নি। কিন্তু ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা করা হবে হরিয়ানা পুলিশের তরফে। দিল্লি পুলিশ আরও জানিয়েছে, সোনিয়া প্রীতমের অটোরিক্সা বিক্রি করে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা রোহিতকে দিয়েছিলেন। এমনকী স্বামীর মোবাইল ফোনটিও তাঁকে দিয়ে দেন।
তদন্তে আরও জানা গেছে, ১৫ বছর বয়সে পরিবারের অমতে প্রীতমকে বিয়ে করেছিলেন সোনিয়া। পুলিশ সেই অভিযোগ জানায়নি সোনিয়ার পরিবার। তাঁদের তিন সন্তান রয়েছে। এদিকে রোহিত অতীত একাধিক অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছিলেন। সেই তালিকায় খুনের মামলাও রয়েছে। চলতি বছরে এপ্রিল মাসে রোহিত বিয়ে করেন। কিন্তু তারপরেও সোনিয়ার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কটি জারি ছিল।
খবর : আজকাল ডট ইন।